০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সময়-অসময়

মোদির জয়ের আশাবাদে চিড় ধরছে?

-

ভারতে শুরু হওয়া বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক নির্বাচন সম্পর্কে নতুন নতুন আপডেট আসতে শুরু করেছে। নির্বাচন শুরু হবার আগে গেরুয়া শিবিরে ৪০০ আসন জয় করার যে আশাবাদ দেখা গিয়েছিল, প্রথম দফা নির্বাচনের পর তাতে বেশ খানিকটা হতাশার সুর বেজে উঠতে শুরু করেছে। বিজেপির নির্বাচনী প্রচারের প্রধান মুখ নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যেও বেপরোয়া ধরনের ভারসাম্যহীনতা ফুটে উঠতে শুরু করেছে। তিনি রাজস্থানে নির্বাচনী সভায় সংখ্যালঘু মুসলিমদের নাম উচ্চারণ করেই যেভাবে কথা বলেছেন, বিরোধী ইন্ডিয়া জোট তার তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। বিরোধীরা বলছেন, মোদির হতাশা অনেক ক্ষেত্রে বেপরোয়া বক্তব্যে রূপ নিচ্ছে। তিনি সমালোচনা আর মিথ্যাচারের মধ্যে পার্থক্য করতে পারছেন না।
প্রশ্ন হলো আসলেই কি হচ্ছে ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে। ৫৪৩ আসনের লোকসভা নির্বাচনে ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত ৭ দফায় নির্বাচন হবার সূচি রয়েছে। ৪ জুন নির্বাচনের ফল ঘোষণা একযোগে শুরু হওয়ার কথা। ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার শুরু থেকে তা শেষ হওয়া অবধি বুথ ফেরত জরিপ প্রকাশ নির্বাচন কমিশন নিষিদ্ধ করেছে। ফলে প্রতিটি দফার নির্বাচনে ভোটের প্রবণতা সুনির্দিষ্টভাবে জানা কঠিন। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে ভোটগ্রহণ ও ভোটারদের রায় দেবার প্রবণতা নিয়ে নানা বিশ্লেষণ পাওয়া যাচ্ছে। এসব বিশ্লেষণের অনেকগুলোতে রাজনৈতিক পক্ষপাতও লক্ষ করা যায়। তবে নিরপেক্ষ একটি ধারণা অনেক ইউটিউব চ্যানেল ও অনলাইন টিভির প্রোগ্রামে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

নির্বাচনের ফল নিয়ে নানা বিশ্লেষণ
প্রথম দফায় ১০২টি আসনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে যার মধ্যে দক্ষিণের তামিলনাড়–র সবক’টি আসন রয়েছে। আর বাকি রাজ্যগুলোর কয়েকটি আসনে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। প্রথম দফার এসব আসনে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে অর্ধেক আসন পেয়েছিল বিজেপি জোট আর বাকিগুলো পেয়েছিল বিরোধীরা। এবার ৪০০ আসন পার করার বিজেপির লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রথম দফার নির্বাচনেই অন্তত গোটা দশেক আসন বাড়ানোর জন্য কাজ করে বিজেপি ও তার মিত্ররা। কিন্তু গ্রহণযোগ্য পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, বিজেপির ১০ থেকে ১৫টি আসন কমতে পারে প্রথম দফার আসনগুলোতে। এ দফায় দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে বিজেপি ভালো করার কোনো লক্ষণই নেই। অধিকন্তু উত্তরের গো বলয়ের রাজ্যগুলোতে দু-একটি করে আসন হারানোর বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
উত্তরপ্রদেশ মহারাষ্ট্র বিহার পশ্চিমবঙ্গ এসব রাজ্য কেন্দ্রে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই চারটি রাজ্যের সবক’টিতেই বিজেপির আসন এবার নিশ্চিতভাবে কমছে বলে মনে হয়। ইন্ডিয়া জোট শুরুতে যেভাবে ব্যাপকভিত্তিক অবয়ব দিয়ে গঠনের উদ্যোগ ছিল সেভাবে শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এ জোট গঠনের প্রথম নেতা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার নিজেই আরেক দফা ডিগবাজি দিয়ে বিজেপির সাথে জোট করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ বা কেরালার মতো রাজ্যে এই জোট গঠনকে কার্যকর করা যায়নি সেভাবে। এর পরও মহারাষ্ট্র উত্তরপ্রদেশ পাঞ্জাব নয়াদিল্লিসহ বেশক’টি রাজ্যে এই জোট কার্যকরভাবে বিজেপির আসন কমিয়ে দেয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের সাথে সমঝোতা করতে পারলে বিজেপির আসন সংখ্যা এই রাজ্যে একেবারেই কমে যেতে পারত। কিন্তু বিগত রাজ্য বিধানসভার ফল এবং সাম্প্রতিক মেরুকরণ সামনে রাখা হলে মনে হবে, বিজেপির আসন সংখ্যা এই রাজ্যে আগের বারের ১৮ থেকে এবার অর্ধেকের কাছাকাছি নেমে আসতে পারে। বিহারে আগের বারের লোকসভা নির্বাচনের সময় নীতিশের জেডিইউ আর বিজেপির জোট রাজ্যের প্রায় সব আসনে জয় পেয়েছিল। এবার নীতিশের বারবার পল্টি মারার বিষয়টি সেখানে আলোচ্য হয়ে ওঠায় তিনি গ্রহণযোগ্যতা বেশ খানিকটা হারাচ্ছেন। ফলে শেষ পর্যন্ত এই রাজ্যে এনডিএ জোট বেশি আসন পেলেও ২০ এর কাছাকাছি আসনে জয় পেতে পারে আরজেডি ও কংগ্রেস সমন্বয়ে তৈরি হওয়া বিরোধী জোট। আরজেডির লালু প্রসাদ নিজেই আবার নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। সেই সাথে রয়েছে তার যোগ্য পুত্র তেজস্বী জাদব।

উত্তরপ্রদেশে ব্যাপক সাফল্য গতবার বিজেপিকে ৩০৩ লোকসভা আসনে জয় পেতে সহায়তা করেছিল। সেখানে হাতেগোনা কয়েকটি আসন জিতেছিল বিরোধীরা। এবার মায়াবতীর বিএসপি বিরোধী জোটে না গেলেও সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব রাজ্যজুড়ে প্রভাব বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। এর ফল রাজ্য বিধানসভায় দেখা গেছে। কংগ্রেস ও অন্য ক’টি ছোট দলের সাথে বিরোধী জোট রাজ্যের এক-তৃতীয়াংশ আসনে জয় পেতে সহায়তা করতে পারে।
এর বাইরে আরেকটি আলোচিত রাজ্য হলো মহারাষ্ট্র। এই রাজ্যে শিবসেনাকে ভাগ করে একটি অংশকে সাথে নিয়ে বিজেপি সরকার গঠন করেছে। এর পাল্টা হিসাবে উদ্ভব ঠাকরের শিবসেনা কংগ্রেস ও এনসিপির সাথে জোট করে সমানতালে লড়াইয়ের মাঠ তৈরি করেছে। এর ফলে মহারাষ্ট্রে যেকোনো পক্ষ অর্ধেকের বেশি আসনে জয় পেতে পারে। বিজেপির দিক থেকে যেসব রাজ্যদুর্গ প্রায় অক্ষত থাকতে পারে তার মধ্যে রয়েছে গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশ। এই দুটি বড় রাজ্যে বিজেপি আগের মতো ভালো ফলাফল করতে পারে। বিপরীত দিকে, কর্নাটক ও পাঞ্জাবে বিরোধী জোটের একতরফা ফল করার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। উড়িষ্যায় আগের মতো নবীন পট্টনায়কের বিজু জনতা দলের ভালো ফল করার সম্ভাবনা রয়েছে। কেরালা তামিলনাড়– রাজ্যে আগের প্রবণতাই থেকে যেতে পারে। বাকি ছোট মধ্যবর্তী প্রদেশগুলোতে বিজেপির আসন সংখ্যা কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ পর্যন্ত যে প্রবণতা ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে, তাতে ২৭২-এর সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার পয়েন্ট ক্রস করাও বিজেপি জোটের জন্য কঠিন হতে পারে। এ প্রসঙ্গে আরএসএস’র একটি নির্বাচনী জরিপ নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বেশ কথা বলছেন। এই জরিপটি ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে লিক হলেও আরএসসের পক্ষ থেকে এটি স্বীকার বা অস্বীকার কোনো কিছু করা হয়নি। এই জরিপে বিজেপির আসন ২১৭ এর কাছাকাছি থাকার কথা বলা হয়েছে। এ নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম ও বিশ্লেষকদের মধ্যে যত আলোচনা হয়েছে বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্যে ততই এর প্রভাব দেখা যেতে শুরু করেছে।
নির্বাচন শুরুর আগে প্রায় সব জরিপেই পরবর্তী সরকার বিজেপি জোট গঠন করতে যাচ্ছে বলে দেখানো হয়েছে। এসব জরিপে এনডিএ ৪১ থেকে ৫২ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য দিকে, ইন্ডিয়া জোটের ভোটের হার ৪০ শতাংশ অতিক্রম করবে এমনটি হাতেগোনা কয়েকটি জরিপেই দেখা গেছে। কিন্তু প্রথম দফা নির্বাচনের পর সে ধারণায় কিছুটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।

নির্বাচনে প্রভাব ফেলার মতো ইস্যু
নির্বাচনের আগে ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারে এমন ইস্যুর অনেকগুলো বিজেপির পক্ষে যায় না। বিজেপি বেকারদের কাজ দেয়ার অঙ্গীকার করেই ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু লাগাতার দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার পর বেকারত্ব ভারতীয় অর্থনীতির জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতে বেকারত্ব এখন ৪৫ বছরের উচ্চতায় রয়েছে। ২০২২ সালের বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্ট অনুসারে, ভারতের যুব বেকারত্বের হার ২৩.২% এ দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালে ভারতের ৪২.৩% স্নাতক বেকার ছিল। এভাবে, বেকারত্ব নির্বাচনী প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে, বিরোধী ইন্ডিয়া জোট ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব এবং মুদ্রাস্ফীতির ওপর ব্যাংক করে বিজেপি সরকারের ভারতীয় অর্থনীতি পরিচালনার সমালোচনা করছে।
রামমন্দিরের অভিষেক অনুষ্ঠান ও সাম্প্রদায়িকতাকে বিজেপির নির্বাচনের সাফল্যের জন্য প্রধান অবলম্বন হিসাবে গ্রহণ করেছে। বিজেপি সারা দেশে হিন্দুত্বকে চাঙ্গা করতে রামমন্দির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে। মোদি ও বিজেপির হিন্দু জাতীয়তাবাদী আদর্শও হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের কাছ থেকে যথেষ্ট সমর্থন অর্জন করেছে বলে শাসক দলের নীতি প্রণেতারা মনে করছেন। এ কারণে মোদি সরকারের নীতি ও হিন্দু জাতীয়তাবাদী মতাদর্শকে সমর্থন করে বলিউডের অনেক সিনেমা মুক্তি পেয়েছে।
একটি বড় বিতর্ক তৈরি হয়েছিল বিরোধী কংগ্রেস পার্টি ও তার নেতারা রামমন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করার সময়। তারা বলে যে, অনুষ্ঠানটিকে ‘বিজেপি-আরএসএস ইভেন্টে’ রূপ দিয়ে এর রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছিল। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছিলেন যে, আমন্ত্রণটি কংগ্রেসের জন্য ‘তার পাপ হ্রাস করার’ একটি সুযোগ ছিল। আর ইতিহাস এটিকে ‘হিন্দুবিরোধী’ হিসাবে বিচার করতে থাকবে। অনুষ্ঠানটিকে অর্ধনির্মিত মন্দিরে প্রচারণামূলক অনুষ্ঠান হিসেবে রাজনীতিকরণ করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করে এই অনুষ্ঠানে চার শঙ্করাচার্যও যোগ দিতে অস্বীকার করেন।

প্রথম দফা নির্বাচনের পর বিজেপির প্রচারণায় মুসলিম বিরোধী বক্তব্য বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২১ এপ্রিল রাজস্থানে একটি প্রচার সমাবেশের সময় নরেন্দ্র মোদি কংগ্রেস পার্টিকে জাতীয় সম্পদে মুসলিম অ্যাক্সেসকে অগ্রাধিকার দেওয়ার এবং ক্ষমতায় আসার পরে ‘যাদের বেশি সন্তান আছে’ এবং অন্য দেশ থেকে ‘অনুপ্রবেশকারী’ তাদের মধ্যে সম্পদ বণ্টনের পরিকল্পনা করার জন্য অভিযুক্ত করেন। মুসলিমরা বেশি সংখ্যায় সন্তান উৎপাদন করে ভারতে হিন্দুদের সংখ্যালঘু করার ষড়যন্ত্র করছে বলেও বিজেপির পক্ষ থেকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। মোদি নিজে এসব কথা কম বলতেন। এখন সেটি সরাসরি বলতে শুরু করেছেন। কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়গে মোদির মন্তব্যকে আতঙ্কে ভরা ‘ঘৃণাত্মক বক্তৃতা’ এবং নির্বাচনের প্রথম পর্বে বিজেপিকে ছাড়িয়ে যাওয়া বিরোধীদের থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার একটি চক্রান্ত বলে অভিহিত করেছেন।
বিজেপির চাঁদা আদায়ের বিষয়টিও এবার একটি ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪-এ, ভারতের সুপ্রিমকোর্ট রায় দেয় যে, ২০১৭ সালে মোদি সরকারের চালু করা নির্বাচনী বন্ডপদ্ধতি অসাংবিধানিক যা দাতাদের ‘নীতিনির্ধারণের ওপর প্রভাব’ জাহির করার সুযোগ দেয়। ১৮ মার্চ, আদালত স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকে (এসবিআই) নির্বাচনী দাতাদের তাদের প্রাপকদের সাথে মেলাতে ২১ মার্চের মধ্যে ভারতের নির্বাচনী বন্ডসংক্রান্ত সব রেকর্ড সরবরাহ করার নির্দেশ দেয়। এই বন্ডের মাধ্যমে বিজেপি ছয় হাজার কোটি রুপির বেশি পায়। এর বিপরীতে কংগ্রেস পায় এক হাজার ৪২১ কোটি রুপি। বিরোধী দলের কিছু রাজনীতিবিদ নির্বাচনী বন্ডকে একটি ‘কেলেঙ্কারি’ এবং ‘চাঁদাবাজির র্যাকেট’ বলে অভিহিত করেছেন।
নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করার বিষয়টিও বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। নির্বাচনের সময়টি বিরোধী দলগুলোর রাজ্যের নেতাদের তদন্তের সাথেও মিলে যায়। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে মদের লাইসেন্স বরাদ্দে কথিত দুর্নীতির জন্য তদন্ত করে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি অবৈধ জমি বিক্রির সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে গ্রেফতার করা হয়। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বিভিন্ন অভিযোগে বিজেপির সাথে জোটবদ্ধ নয় এমন চার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত করছে, আর যখন বিরোধী রাজনীতিবিদ বিজেপিতে যোগদান করে তখন তাদের তদন্ত বন্ধ করা হয়।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ব্যবহার করে বিরোধী রাজনীতিকদের হয়রানি করার অভিযোগ ওঠছে ব্যাপকভাবে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট-এর ৯৫% মামলা বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে নথিভুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ২০১৪ সাল থেকে, দুর্নীতির অভিযোগের সম্মুখীন ২৫ জন বিরোধী নেতা বিজেপিতে যোগদান করেছেন, তাদের মধ্যে ২৩ জন শাসক দলে যোগদানের পর তাদের তদন্ত বন্ধ বা হিমায়িত করা হয়।
মদের লাইসেন্স কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২১ মার্চ কেজরিওয়াল গ্রেফতারের পরে, দিল্লির অর্থমন্ত্রী অতীশি সিং বিজেপিকে কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ করার জন্য অভিযুক্ত করেন। রাহুল গান্ধী কেজরিওয়ালের গ্রেফতারের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন যে, একজন ‘ভারপ্রাপ্ত স্বৈরশাসক’ কাউকে নাম না দিয়ে ‘মৃত গণতন্ত্র’ তৈরি করতে চায়।

গণতন্ত্রে ক্ষয় হচ্ছে?
মোদি শাসনের প্রকৃতি আন্তর্জাতিক সমালোচনার কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণতন্ত্র চর্চার মানের অবনতি ঘটছে অব্যাহতভাবে। ২০১৭ সালের ফ্রিডম হাউজের প্রতিবেদনে ভারতের গণতন্ত্রের মূল্যায়ন ছিল ‘মুক্ত’। স্কোর ছিল ১০০-এর মধ্যে ৭৭। ২০২৩ সালে এই স্কোর ৬৬তে নেমে আসে, আর গণতন্ত্রের মূল্যায়ন দাঁড়ায় আংশিক মুক্ত। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্সের গণতন্ত্রের সূচকে ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র’ হিসেবে মূল্যায়িত হয় ভারতের গণতন্ত্র। ১০-এর মধ্যে স্কোর ছিল ৭.৯২। ২০২৩ সালে এই স্কোর নেমে আসে ৭.১৮-এ। ভি ডেম ইনস্টিটিউটের নির্বাচিত গণতন্ত্রের সূচকে ২০১৭ সালে ভারতের স্কোর ছিল ১-এর মধ্যে ০.৬ পয়েন্ট। ক্রমিক ছিল ১৭৪ দেশের মধ্যে ৭৩। ২০২৩ সালে এর ক্রমের অবনতি ঘটে, ১৭৯টি দেশের মধ্যে ১০৮-এ নেমে আসে। সে সাথে স্কোর ১-এর মধ্যে নেমে আসে ০.৪-এ। একই ধরনের অবনতি রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকেও লক্ষণীয়। মোদি শাসনের কয়েক বছরে গণমাধ্যম স্বাধীনতার স্কোর ১০০ পয়েন্ট এর মধ্যে ৫৯.৬৬ থেকে ৩৬.৬২-এ নেমে এসেছে।
বলা হচ্ছে, ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ হলো অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গতিপথ। ভারত গত এক দশকে কম উদার হয়ে উঠেছে। ভারতের গণতন্ত্রে উদারপন্থী বাঁক এবং তার বিদেশ নীতির মধ্যে হিন্দুত্ব এর আরো পেশিবহুল স্থাপনা পশ্চিমের সাথে গভীর সম্পর্ককে জটিল করে তুলতে পারে। এটি নীতিকেন্দ্রিক সহযোগিতাকে বাধা দেবে না, তবে এটি বুদ্ধিমত্তা ভাগ করে নেওয়ার মতো সংবেদনশীল ক্ষেত্রে গভীর সহযোগিতাকে সীমাবদ্ধ করতে পারে।
পশ্চিমা মূল্যায়ন অনুসারে নতুন দিল্লির পররাষ্ট্রনীতি প্রায়ই অনেক পশ্চিমা গণতন্ত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী এর উদাহরণ। বাস্তবতা হলো ভারত এবং অনেক পশ্চিমা দেশের স্বার্থ ভাগ করার মতো হলেও তাদের মূল্যবোধ ভিন্ন। ভারত নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার প্রবক্তা, কিন্তু উদার আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে তার অবস্থান অস্পষ্ট। ইতোমধ্যেই কিছু উদ্বেগজনক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। বিজেপি সরকার নিজ দেশে আরো বিভক্ত, পরিচয়-চালিত পথ অনুসরণ করছে এবং যেখানে দলের হিন্দুত্ব এজেন্ডা ভারতের বাহ্যিক সম্পৃক্ততার মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। এবারের নির্বাচনের ফলাফল ভারতের পরবর্তী অভিযাত্রার জন্য হবে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আরো ৬ দফার নির্বাচন বাকি রয়েছে। এরপর ৪ জুন নির্বাচনে জনগণের সিদ্ধান্ত জানা যাবে। তখন পরিষ্কার হবে এশিয়ার বৃহত্তম এই গণতান্ত্রিক দেশটি কোন পথে এগোচ্ছে।
mrkmmb@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement