০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী কেন লাগামহীন

-

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা কাদের হাতে ‘জিম্মি’? বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ কারা লুটেপুটে খাচ্ছে। কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুরসহ আমজনতার ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত সরকারি দফতরে কী সেবা পাচ্ছে সহজ সরল মানুষ? বাংলাদেশের স্বাধীন মানচিত্র এক সাগর রক্তের বিনিময়ে জনগণ কি সে জন্যই স্বাধীন করেছিলেন? কাকে করব প্রশ্ন, কার কাছে উত্তর খুঁজে পাবো? প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীরা যেন দেশের মালিক। আর যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদন করে আর ট্যাক্স দিয়ে দেশ ও সরকারি কর্মচারীদের বাঁচিয়ে রেখেছে তারা নেহায়েত ‘প্রজা’। প্রজাতন্ত্রের চিহ্নিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের আচার-আচরণ বেশভূষা দেখলে মনে হয়, রাষ্ট্রে তারাই সবকিছু। আর দেশের আমজনগণ যেন কিছুই নয়। তাদের কোনো কাজকর্মের প্রতি এসব কর্মকর্তার কোনো নজর নেই। মাসের পর মাস তাদের টেবিলে ফাইল আটকে থাকবে, ইচ্ছেমতো ফাইল নড়াচড়া করবে, তবু কোনো অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে করে লাভ হবে না। উপরে নিচে সবার মধ্যে তাদের সাথে যোগসূত্র দেখা যায়। অবৈধ অর্থের লেনদেন ‘ওপেন সিক্রেট’। প্রশাসনের দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা অব্যাহত থাকলেও দুর্নীতি কোনো অবস্থায় বন্ধ হচ্ছে না। দুর্নীতির বেড়াজালে জনগণকে জড়িয়ে ফেলছে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী। এরপরও তাদের কাছে না গিয়ে জনগণের কোনো উপায় নেই। সব জায়গায় উৎকোচ আদান-প্রদানে অভ্যস্ত আমরা। চাকরি পাওয়া থেকে প্রশাসনিক যেকোনো কাজকর্মে উৎকোচ দিতেই হবে। এরপরও ওই ব্যক্তিদের আচার ব্যবহারে স্বাধীন দেশের খেটে খাওয়া মানুষ মোটেও সন্তুষ্ট হতে পারে না।
ভালো ব্যবহার তাদের কাছে দেশের জনগণ কখনো আশা করতে পারে কি? স্বাধীনতার অর্ধশত বছরের এ সময়ে এ পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ পশ্চিমাদের শোষণ, নিপীড়ন আর জুলুম, নির্যাতন থেকে স্বাধীন হয়েছে। সে স্বাধীনতার স্বাদ আমাদের প্রাণপ্রিয় কৃষক, কুলি, দিনমজুর, অশিক্ষিত মানুষ পাচ্ছে না। পাকিস্তানি শাসনের শোষণ আর নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। আজকের স্বাধীন দেশে যেন জনগণ এক অদৃশ্য গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি। কোনো প্রকারে সোনার হরিণ একটা সরকারি চাকরি ধরতে পারলেই হলো। তাহলে অর্থবিত্ত অর্জনের কোনো বাধা নেই। রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ আর জনগণকে শোষণ করে রাতারাতি বাড়ি, গাড়ি আর প্রচুর অর্থের পাহাড় হয়ে যায় তাদের। রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকতে পারলে যেন আর কোনো কথা নেই। একসাথে রাজনীতি আর প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হওয়ার মজা আর স্বাদে আনন্দের শেষ নেই। ফলে তারা অর্থ আর প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বে থেকে ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হতে বেশি সময় লাগে না। তাদের ইশারায় অনেক সময় ক্ষমতার চেয়ারের পালাবদলও দেখা যায়। তাদের সাথে অনেক সময় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলও পারে না। তারা আমজনতার সাথে দুর্ব্যবহার করতে করতে এমন জায়গায় পৌঁছে গেছে জনপ্রতিনিধিরও তাদের কাছে কোনো গুরুত্ব নেই। এমনটিই দেখছে দেশের জনগণ।
চট্টগ্রামের একজন জাতীয় গৃহায়ন প্রকৌশলী তদানীন্তন সিটি মেয়রের সাথে যে আচরণ দেখিয়েছেন, সেটাই রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের অধিকাংশের আচরণের বহিঃপ্রকাশ। প্রায় কোটি মানুষের জনপ্রতিনিধি মাননীয় মেয়র, তার সাথে এ ধরনের অশোভন আচরণে গোটা দেশবাসী হতবিহ্বল। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে জনপ্রতিনিধির সাথে এ আচরণে জাতি কী দেখতে পাচ্ছে? তাহলে ওই সব কর্মকর্তা-কর্মচারী দেশের মালিক জনগণের সাথে কী ধরনের ব্যবহার করছেন, সেটা কিছুটা হলেও অনুমান পাওয়া যায়। দেখা যায়, সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তা সেবাপ্রত্যাশী জনগণকে কোনো পাত্তাই দেন না। এমন ধরনের ঘটনার নজির অহরহ পাওয়া যায়। ইচ্ছেমতো তাদের অফিস চালাতে অনেককেই দেখা যায়। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে বেতনভাতা উঠাতে অনেককেই দেখা গেছে। কারণ তার কাছে সে নিজের দেশের মালিক। জবাবদিহিতা করার সৎ সাহস তার না থাকলেও সে ‘অনেক বড় কর্মকর্তা’। কোন অদৃশ্য শক্তির জোরে তাদের এমন চালচলন সেটা আমাদের বুঝে ওঠা কঠিন। জনগণ আর জনপ্রতিনিধিকে এভাবে অবজ্ঞা এবং নির্দেশনা মেনে চাকরি না করা দেশের সংবিধানের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। সংবিধানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ আর জনপ্রতিনিধি। আর তাদের কর্মচারীরা সেবক হলো প্রশাসনের লোকজন। কিন্তু জনগণ এখন কী দেখছে? এসব আচার ব্যবহার দেশের মানুষ রাষ্ট্রের বা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী থেকে আশা করে না। কোনো অবস্থায় তা গ্রহণ ও সহ্য করা যায় না। কর্মচারীকে বিধি মেনেই চাকরি করতে হবে।
মালিকের নির্দেশনা মেনে চলা কর্মচারীর কর্তব্য। এর ব্যত্যয় ঘটলে সে রাষ্ট্রে আর শৃঙ্খলা থাকে না। শৃঙ্খলা রক্ষা করতে
অবশ্যই কর্মচারীকে চাকরির বিধিবিধান এবং জনগণের অধিকারের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে চলতে হবে। সিটি মেয়রের সাথে অশোভন আচরণ, আবার এর পক্ষে কর্মচারীদের আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলাÑ এটা সংবিধান পরিপন্থী। এ ধরনের কোনো অপতৎপরতা জনগণ দেখতে চায় না। কঠোর হস্তে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। জনপ্রতিনিধির প্রতি সর্বদা শ্রদ্ধা ও আনুগত্য দেখাতে হবে।
জনপ্রতিনিধির আদেশ-নির্দেশকে অবজ্ঞা ও অবহেলা করা রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা পরিপন্থী। জনগণ দেশের মালিক, তাই এ ধরনের নতুন কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক, তা কাম্য নয়। দোষীকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।
ইমেইল: mh.hoqueansari@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement