০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


দি ব স : তামাক কিভাবে বর্জন করবেন

-

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, তামাকের কারণে প্রতি বছর ৬০ লাখ লোকের মৃত্যু হয় পৃথিবীতে। তামাকের ব্যবহার অনিয়ন্ত্রিত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ৮০ লাখ এবং এর শতকরা ৮০ ভাগই হবে নি¤œ ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে। তামাকে ৫০টির বেশি পদার্থ ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী। বাংলাদেশে ধূমপায়ীর হার শতকরা ৪৩ ভাগ আজো। তামাক ব্যবহারকারী মহিলার হার ২৮ শতাংশ এবং পুরুষ ২৬ শতাংশ। সিগারেটের ব্যবহারকারী পুরুষ ৪৫ শতাংশ এবং মহিলা ১.৫ শতাংশ। বাংলাদেশে প্রতি বছর তামাকের কারণে প্রায় এক লাখ লোক মৃত্যুবরণ করে। এ ছাড়া তিন থেকে চার লাখ লোক তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে অসুখ ও অক্ষমতা ভোগ করে। ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় এবঃ জবধফু ভড়ৎ চষধরহ ঢ়ধপশধমরহম. অর্থাৎ সাদামাটা মোড়ক-তামাক নিয়ন্ত্রণে আগামী দিন। কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী প্রচারণা এবং বাজারজাত কার্যক্রম প্রতিরোধে এ বিষয় সবিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে।
সিগারেটের প্যাকেট এবং তামাকের বিভিন্ন মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্যবাণী ছাপানোর বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আছে। বেশির ভাগ রাষ্ট্র সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ব্যবহারের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। দিনে কমপক্ষে ২০ বার এবং বছরে ৭৩০০ বার ছবি দেখে তামাক ব্যবহারীগণ নিরুৎসাহিত হবেন। ফলে তামাকের ব্যবহার কমে আসবে। ৭৭টি দেশে সচিত্র সতর্কবাণী কার্যকর হয়েছে। নেপালে সিগারেটের প্যাকেটে ৯০ শতাংশজুড়ে সতর্কবাণী ব্যবহার হয়। ভারতে ও থাইল্যান্ডে ৮৫, শ্রীলঙ্কা ৮০ ও ইন্দোনেশিয়ায় সিগারেটের প্যাকেট এবং তামাকের বিভিন্ন মোড়কে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ব্যবহার হয়ে আসছে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা ছাপানোর জন্য তামাক কোম্পানিগুলোকে এ বছরের ১৯ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বেশির ভাগ কোম্পানি তা মেনে চলছে না।
অনেক ধূমপায়ীর তামাক বর্জনে সদিচ্ছার কোনো ঘাটতি নেই। তামাক ছাড়তে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। সদিচ্ছা, মানসিক শক্তি এবং দৃঢ়তার মাধ্যমে তামাক বর্জন করা যায় : ১. নিজেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবেÑ ইচ্ছাশক্তিকে দৃঢ় করুন, মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে যেকোনো সময় তামাক ছাড়া যায়। ক্যালেন্ডারে একটি তারিখ ও সময় নির্দিষ্ট করে সে দিনক্ষণ থেকে বর্জন শুরু করুন। ২. পারিপার্শ্বিক পরিবেশ যেমনÑ বাড়ি, অফিস এবং গাড়িতে তামাকজাত দ্রব্য রাখা যাবে না। তামাক গ্রহণকারী ব্যক্তিদের আশপাশে না যাওয়াই ভালো। ৩. প্রেরণা ও সহযোগিতাÑ আপনার পরিবার-পরিজন, বন্ধু এবং সহকর্মীদের বলুন, তারা যেন প্রতিনিয়ত তামাক ও তামাকজাতীয় দ্রব্য ছাড়ার ব্যাপারে আপনাকে উৎসাহিত করেন। ৪. গ্র“পভিত্তিক পদক্ষেপÑ তামাক ছাড়ার ব্যাপারে দলগত পদক্ষেপ অনেক কার্যকর। ৫. প্রয়োজনে ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা স্বাস্থ্যকর্মীদের পরামর্শ নিতে হবে। ৬. নতুন নতুন কৌশলÑ ধূমপানের ইচ্ছা হলে মনকে অন্য দিকে সরিয়ে নিতে হবে। কারো সাথে কথা বলা, হাঁটা, চলাফেরার মাধ্যমে এটা সম্ভব। ৭. তামাক বর্জনের ক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমানোর জন্য ব্যায়াম, খেলাধুলা, বই পড়া এবং নামাজ, দোয়া, ধ্যানসহ ধর্মীয় কার্যক্রমে আত্মনিয়োগ করুন। এতে মানসিক অস্থিরতা কমে আসবে এবং তামাক ও ধূমপান বর্জন সহজ হবে। ৮. প্রচুর পানি ও বিশুদ্ধ তরল খাবার গ্রহণ করুন। ৯. প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তামাক বর্জনের প্রথম কিছু দিন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমনÑ মাথাব্যথা, বিষণœতা, ক্লান্তি, হতাশা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বিরক্তি, ঘুম না আসা, ক্ষুধামান্দ্য, অস্থিরতা ইত্যাদি। সমস্যাগুলো দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ করে এবং ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে তামাক ও ধূমপান বর্জন করে সুস্থ-সুন্দর ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করা যায়। হ

লেখক : নির্বাহী সচিব, আধূনিক


আরো সংবাদ



premium cement