করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কেবল যে প্রবাসীদের মাধ্যমেই হচ্ছে, এখন আর সে কথা বলা যাচ্ছে না। বরং এটি এখন কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের দিকেই ধাবিত হচ্ছে। বেশ কিছু ঘটনায় দেখা গেছে, আক্রান্ত প্রবাসীদের সংস্পর্শে না এসেও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিদ্যমান পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, কে প্রবাসীদের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হচ্ছেন আর কে অন্যদের মাধ্যমে আক্রান্ত হচ্ছেন তা এখন আর নির্ণয় করা সম্ভব নয়। আইইডিসিআর স্বল্পসংখ্যক মানুষকে পরীক্ষার আওতায় নিতে পারছেন। বড় অংশটিই থেকে যাচ্ছে পরীক্ষার বাইরে। সন্দেহভাজন সবাইকে পরীক্ষার আওতায় আনা গেলে বাস্তব পরিস্থতি বোঝা সম্ভব হতো।
স্যাটেলাইট চ্যানেল, প্রিন্ট মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস কমিউনিটি ট্রান্সমিশন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, বিগত কয়েক দিনে লাখ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। তাতে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের আশঙ্কা আরো বেড়ে গেল। পরিস্থিতি এখন কোন দিকে মোড় নেয় সেটাই দেখার বিষয়।
বেশির ভাগ সন্দেহভাজনকেই পরীক্ষা করা হচ্ছে না। সুতরাং পরীক্ষা না করেই কিভাবে বোঝা যাবে কে আক্রান্ত হয়েছে আর কে আক্রান্ত হয়নি। এখন যে অবস্থা তাতে স্বাভাবিক লক্ষণগুলো যাদের মধ্যে পাওয়া যাবে তাদেরই পরীক্ষা করা দরকার। কিন্তু সে তুলনায় কজনেরই বা পরীক্ষা হচ্ছে। পরীক্ষা করার মতো পর্যাপ্ত মেটেরিয়ালস আমাদের আছে কি? সেখানে আমেরিকার মতো একটি উন্নত দেশ উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। করোনা সংক্রমণের সন্দেহে আইইডিসিআরে বিপুল কল এলেও পরীক্ষা হয়েছে সে তুলনায় অতি সামান্যই। কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের লক্ষণ আমরা ইতোমধ্যে পেয়েও গেছি। ঢাকার টোলারবাগে যিনি মারা গেলেন, তিনি বিদেশ থেকে আসা কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে আসেননি। আমরা দেখেছি, ঢাকার বাইরে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় মারাও গেছেন। তাই অনাগত পরিস্থিতি কিছুটা হলে আঁচ করা যাচ্ছে। আইইডিসিআর নিজেই কমিউনিটি ট্রান্সমিশন নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। তারা এক ব্রিফিংয়ে বলছে, ‘সীমিত পর্যায়ে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে। আরেকবার বলেছে, ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে, তা এখনো বলা যাবে না।’ এরকম আত্মতৃপ্তিতে ভোগা মোটেই জনগণের জন্য সুখকর নয়। আমাদের সামর্থ্যরে বাইরে গিয়ে আমরা যেমন কাজ করতে পারব না, তেমনি অযথা আত্মতৃপ্তিতে না ভুগে বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে আমাদের কাজ করতে হবে।
এরকম সঙ্কটকালীন মুহূর্তে জাতীয় স্বার্থে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা থাকা জরুরি। যদি এটি করতে এখনো গড়িমসি করি তা হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ দিকে রূপ নেবে। তখন আর কিছুই করার থাকবে না। গণপরিবহন বন্ধ না করেই তিন দিন আগে ঘোষণা করা হলো ২৬ মার্চ থেকে ১০ দিনের সাধারণ ছুটি। গণপরিবহন বন্ধ হলো ২৬ মার্চ থেকে। এ ছুটির উদ্দেশ্যই ছিল করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন রোধ করা। কিন্তু সমন্বয়হীনতায় তা কতটা সম্ভব হলো? মানুষকে আর ঘরে রাখা সম্ভব হলো না। লাখ লাখ মানুষ ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরে গেল। তাও স্বাস্থ্যবিধির নিয়ম ভেঙে অবাধে চলল পরিবহন। বাসে বাদুড় ঝোলা হয়ে, ফেরিতে গাদাগাদি করে মানুষ ফিরল বাড়িতে। এতে কি সংক্রমণ ঘটেনি? ঢাকায় আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। এখন যারা বাড়ি ফিরল তাদের একটি অংশ যদি করোনাভাইরাস নিয়ে বাড়ি ফেরে তাহলে পরিস্থিতি কী হবে? সরকার কিছু এলাকা লকডাউন করেছে। পুরো ঢাকা লকডাউন করেনি।
যা হয়ে গেছে এ নিয়ে কথা বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই, বরং সামনে আমাদের কী করা উচিত সে দিকেই নজর দেয়া উচিত। এটা কোনো পলিটিক্যাল ইস্যু নয়, বৃহৎ জনগোষ্ঠীর স্বার্থে একটি সামাজিক ইস্যু। তাই সরকারের ত্রুটিগুলো খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের না করে সম্মিলিতভাবে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আমাদের করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। বাড়ি ফেরত এই হাজার হাজার মানুষকে কিভাবে সামাজিক সচেতনতার আওতায় আনা যায় সে দিকটিই এখন জোরালোভাবে ভাবতে হবে। প্রয়োজনে একেবারে মাঠপর্যায়ে প্রশাসনকে কাজে লাগাতে হবে।
জেলা প্রশাসনকে সহায়তা দেয়ার জন্য মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। রাস্তা-ঘাটে এখন সুনসান নীরবতা। দেখতে হবে একবারে মাঠপর্যায়ে পৌরসভা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের বিভিন্ন ওয়ার্ডগুলোতে ঘরে ফেরা এই মানুষগুলোসহ অন্যান্য মানুষ কী করছে এখন। তারা কি সরকারের নির্দেশনা মেনে চলছে? এ বিষয়টি বাস্তবায়নে জনগণকে মনিটরিংয়ে আওতায় আনার জন্য পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
গ্রামপর্যায়ের দোকানপাট এখন ফাঁকা ঠিকই, কিন্তু বাড়িতে, পাড়া-মহল্লায় মানুষের অবাধ মেলামেশা এখনো বন্ধ হয়নি। এখন প্রশ্ন হলো, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে এটা কী করে সম্ভব। হ্যাঁ, অবশ্যই সম্ভব। প্রথমত, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন রোধে আমাদের যে কাজটি করতে হবেÑ কোনোক্রমেই পৌরসভার কোনো পাড়া-মহল্লার কোনো জায়গায় যেন বাড়তি কোনো লোকজনের সমাগম না হয় বা কোনো বাসায় যাতে ফ্যামিলির সদস্য ছাড়া বাইরে থেকে বা পাশের বাসা থেকে কোনো লোকজন না আসে বা জড়ো না হয় সে দিকে খেয়াল রাখবেন পৌরমেয়রের নেতৃত্বে ওয়ার্ড কমিশনার। একজন ওয়ার্ড কমিশনারের তার ওয়ার্ড সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা থাকে। হয়তো তার একার পক্ষে এ কাজটি করা সম্ভব হবে না। সে ক্ষেত্রে তিনি ওই এলাকার বা মহল্লার সচেতন মানুষের সহায়তা নেবেন। গঠন করবেন একটি মনিটরিং কমিটি। যারা তার নির্বাচিত মনিটরিং কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করবেন। কেউ এ আইনের ব্যত্যয় ঘটালে তাকে পুলিশ হেফাজতে সোপর্দ করা হবে। তবে এ-জাতীয় কাজের ঘোষণা আসতে হবে জাতীয় পর্যায় থেকে বা স্থানীয় প্রশাসন থেকে। তাহলে জনগণ মানতে বাধ্য থাকবে। ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রেও একই নিয়মে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে হয়তো এই কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পরে। মানুষ থেকে মানুষকে আলাদা করা ছাড়া এই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই।
লেখক : শিক্ষক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা