০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


দ্বিতীয় মেয়াদে ডিএনসিসি মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ

ভয় নয়, একমাত্র সচেতনতাই পারে করোনাকে রুখে দিতে : আতিকুল

-

দ্বিতীয়বারের মত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন মোঃ আতিকুল ইসলাম। বুধবার দুপুরে ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তাফা তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন।

এ সময় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আবদুল হাই, সচিব রবীন্দ্র শ্রী বড়ুয়া ও বিভাগীয় প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ শেষে অনলাইন প্রেস ব্রিফিংয়ে আতিকুল ইসলাম রাজধানীকে আধুনিক এবং সবার নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে জনগণকে নিয়ে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভয় নয়, একমাত্র সচেতনতাই পারে এই মহামারিকে রুখে দিতে। তাই নগরবাসীর প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ আপনাদের জীবনকে সুরক্ষিত রাখতে সব স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলুন। এই দুর্যোগের সময়ে আমি এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সবসময় আপনাদের পাশে রয়েছে। আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতায় এই তিলোত্তমা নগরীতে আমরা আবার আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবো।

আতিকুল ইসলাম বলেন, আমি এ দেশ, দেশের জনগণ এবং এ ঢাকা শহরকে ভালোবেসে নগরবাসীর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছি। গত মেয়াদের নয় মাসে আমি অনেক কাজ করেছি। কিছু কাজ চলমান রয়েছে। আমার পূর্বের অসম্পন্ন কাজ এবং আমার নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে আজ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের দায়িত্ব গ্রহণ করছি। আপনাদের সবার দোয়া এবং ভালোবাসায় এই মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ করে আগামীর ঢাকা নির্মাণে উত্তর সিটি করপোরেশনকে আরো সুসংগঠিত করার মাধ্যমে আপনাদের সব নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করব।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সবার অংশগ্রহণ এবং সর্বাত্মক চেষ্টায় বাংলাদেশ এ মহামারির হাত থেকে মুক্তি পাবে। একটি সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা নির্মাণে এবং বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার বিকল্প নেই। আমি কথা দিচ্ছি, নগরবাসীর সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকল্পে এবং আমার নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে জনগণকে সাথে নিয়ে আমি কাজ করে যাব।

মেয়র বলেন, আমি কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। মেয়র পদে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণ করার আগে থেকেই এই মহাদুর্যোগের সময়ে আমি নগরবাসীর পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। সিটি করপোরেশনের কর্মীদের পাশে থেকে তাদেরকে অনুপ্রেরণা যোগানোর মাধ্যমে এবং ডিএনসিসির সাথে সমন্বয় করে আমি নগরবাসীর জন্য সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। আমি বিশ্বাস করি, আমার ক্ষুদ্র চেষ্টা এই অস্থির সময়ে অসংখ্য মানুষের জীবনে সুখবার্তা নিয়ে আসবে। এই দুর্যোগের সময়ে নগরবাসীর জীবনযাপন স্বাভাবিক রাখতে আপনাদের সাথে নিয়ে এই প্রচেষ্টা চলমান থাকবে।

মহামারী করোনা প্রতিরোধে ডিএনসিসি’র চলমান পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে আতিকুল ইসলাম বলেন, কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসের দাপটে পুরো বিশ্ব এখন কম্পিত। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পৃথিবী। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চিকিৎসা বিজ্ঞানও এখন পর্যন্ত আশার আলো দেখাতে পারেনি। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে একমাত্র উপায় হিসেবে সামাজিক দূরত্বসহ বেশকিছু নিয়ম মেনে চলার কথা বলছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। বিশ্বের অন্যান্য বড় শহরের মত করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ঢাকা শহরকে করোনা ভাইরাসমুক্ত রাখতে ১০টি ওয়াটার বাউজারের সাহায্যে তরল জীবাণুনাশক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়ক, ফুটপাত, ফুটওভারব্রিজ, কোয়ারেন্টাইন্ড এলাকা, হাসপাতাল, প্রতিষ্ঠানের সামনে, উন্মুক্তস্থানে, প্রতিটি ওয়ার্ডের অলি-গলিতে হ্যান্ড স্প্রের মাধ্যমে তরল জীবাণুনাশক স্প্রে করা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ কয়েক শ’ স্থানে পথচারীদের জন্য হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছে।

মেয়র বলেন, করোনা ভাইরাস পরীক্ষা আরো সহজ এবং হাতের নাগালে আনতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমতিক্রমে ডিএনসিসি এবং ব্র্যাক যৌথভাবে নগরীর আটটি স্থানে করোনা স্যাম্পল কালেকশান বুথ এই সপ্তাহের মধ্যেই স্থাপন করতে যাচ্ছে। এছাড়াও ডিএনসিসির উদ্যোগে কোভিড-১৯ টেস্টিং ল্যাব স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে সাময়িকভাবে মহাখালী ডিএনসিসি মার্কেট করোনা হাসপাতাল ও আইসোলেশান সেন্টার নির্মাণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া করোনা দুর্যোগে মাঠে কাজ করা সংবাদকর্মীদের ও তাদের পরিবারের জন্য ডিএনসিসি’র মহাখালী কমিউনিটি সেন্টারে স্যাম্পল সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনা মোকাবেলায় নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে করোনার চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য ও পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। করোনা চিকিৎসায় জড়িত ডাক্তার, নার্স, এম্বুলেন্স চালক, পুলিশ, নিরাপত্তা কর্মীদের যেন বাড়িওয়ালারা হেনস্তা না করে সেজন্য আহবান জানানো হয়েছে। কেউ হেনস্তা করলে সেই বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। যদি কেউ বাড়িওয়ালার হেনস্থার শিকার হন তবে তিনি সিটি কর্পোরেশনের হটলাইন নাম্বারে ফোন করে অভিযোগ জানাতে পারবেন।

আতিকুল ইসলাম বলেন, মহামারি কবলিত জরুরি সেবা যেমন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জীবাণুনাশক ঔষধ ছিটানো, মশক নিধন কাজে নিয়োজিত রয়েছেন সিটি করপোরেশনের অসংখ্য কর্মী। সার্বক্ষণিক মাঠে থাকা এসব কর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিতে তাদের মাঝে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্কসহ অন্যান্য নিরাপত্তা সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া কীভাবে ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করে কাজ করতে হবে সে বিষয়ে তাদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই মহামারির সময়ে নগরবাসীর সেবায় ডিএনসিসির যে সব কর্মী কাজ করে যাচ্ছে তাদের জন্য আমি বিনা অর্থে স্বাস্থ্যবীমার ব্যবস্থা করছি। এই দুর্যোগের সময়ে যদি কোনো কর্মী করোনা রোগে আক্রান্ত হয় অথবা মারা যায় তবে তিনি এই স্বাস্থ্যবীমার আওতায় আর্থিক সহযোগিতা পাবেন। আমার পক্ষ থেকে এটি ডিএনসিসি কর্মীদের জন্য একটি ছোট উপহার।

তিনি বলেন, করোনা মহামারি ঠেকাতে নিত্যপণ্যের দোকান এবং কাঁচাবাজারে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে দোকান মালিক এবং ক্রেতাদের জন্য বিশেষ গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ডিএনসিসির ১৬টি কাঁচাবাজার উন্মুক্তস্থানে স্থানান্তরিত করা হয়েছে যেন আপনারা আরো নিরাপদে দৈনন্দিন বাজার সম্পন্ন করতে পারেন।

তিনি আরো বলেন, করোনা দুর্যোগের ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের আয় শূণ্যের কোঠায়। না খেতে পাওয়া মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের সহায়তায় বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রায় তিন লাখ অসহায়, দুঃস্থ পরিবারের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা। ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত আছে। এ ছাড়া হটলাইন নম্বরে ফোন করে যে কেউ ডিএনসিসির কাছে ত্রাণ সহায়তা চাইতে পারে। এছাড়া আমি, আমার পরিবার, বন্ধু ও শুভাকাঙ্খীদের সহায়তায় “সবাই মিলে সবার ঢাকা” ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে ৫০ হাজারের বেশি দুঃস্থ পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী উপহার হিসাবে বিতরণ করেছি। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় এই বিতরণ অব্যাহত থাকবে।

রোগ বহনকারী মশা নিধন সম্পর্কে মেয়র বলেন, ঘন বসতিপূর্ণ আমাদের এই নগরীতে মশাবাহিত ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া প্রতি বছরের সমস্যা। প্রতি বছর বর্ষাকালীন সময়ে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপ দেখা দেয়। করোনা ভাইরাসের মত ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়াও প্রাণঘাতী রোগ। ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া যেন অন্যান্য বছরের মত ভয়াবহ রূপ নিতে না পারে সেইজন্য আমি আগে থেকেই সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া থেকে শহরবাসীকে রক্ষা করতে আমাদের মশক নিধন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

আতিকুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ কমাতে আপনারা যেমন বাসায় থাকছেন, স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলছেন, ঠিক তেমনি ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া রোধে নিজের বাসার আশেপাশের জায়গাগুলোকে পরিষ্কার করতে আহবান জানাচ্ছি, যাতে করে নগরবাসী করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গুর হাত থেকেও মুক্ত থাকতে পারে।

মেয়র বলেন, বিদ্যমান এই মহামারী পরিস্থিতিতে আমি নগরবাসীকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই, ডিএনসিসি’র প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ফগার মেশিনের সাহায্যে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এছাড়া বছরব্যাপি মশক নিধনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই পরিকল্পনায় ডেঙ্গু রোগবাহী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে গত ৭ অক্টোবর থেকে মশার প্রজননস্থল অর্থাৎ হটস্পট চিহ্নিত করার জন্য ২জন কীটতত্ত্ববিদ এবং ১০জন শিক্ষানবিস কীটতত্ত্ববিদ নিয়োজিত করা হয়েছে। তারা ইতিমধ্যে গবেষণা করে কোন এলাকায় মশার তীব্রতা কত তা নির্ধারণ করেছেন এবং সে অনুযায়ী মশকনিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। সেই সাথে স্বাস্থ্য অধিদফতর, ওয়াসা, রাজউক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সকল প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় করে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলররাও এই কাজের সাথে যুক্ত হবেন। নিজ-নিজ ওয়ার্ডের মশক নিয়ন্ত্রণ, পরিছন্নতাসহ যে কোনো বিষয়ে কাউন্সিলররা ব্যক্তিগতভাবে মনিটরিং করবেন। যদি কেউ তার দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করেন বা ব্যর্থ হন তবে তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement