বিএনপি চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নজীরবিহীনভাবে কারাগারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আটকে রাখা হয়েছে। এই আটকে রাখার পেছনে ব্যক্তির প্রতিহিংসা পূরণের সাধ মেটানো হচ্ছে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি আরো বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থতার কারণে গতকাল আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি। তার সুচিকিৎসার জন্য পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে কোনো আবেদনই কারাকর্তৃপক্ষ রক্ষা করেনি, বরং সরকারের প্ররোচণায় কারাকর্তৃপক্ষ বেগম জিয়ার অসুস্থতাকে আরো অবনতির দিকে ঠেলে দেয়ারই চেষ্টা করেছে।
এছাড়া সম্প্রতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান টিআইবি জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে রিপোর্ট দিয়েছে তাতে সরকারের আতে ঘা লেগেছে বলে মন্তব্য করেন রিজভী।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, চিকিৎসা শেষ না হতেই হাসপাতাল থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ফেরত পাঠানো হয়েছে কারাগারে। তার অসুস্থতা সত্ত্বেও সেটিকে আমলে না নিয়ে বারবার আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে। হয়রানি ও শারীরিকভাবে কষ্ট দেয়ার জন্যই সরকারের সাজানো অসত্য মামলায় বেগম জিয়াকে ঘনঘন আদালতে উপস্থিত করা হচ্ছে। সরকারের কারসাজিতেই বেগম জিয়ার সুচিকিৎসা ও জীবন এখন গভীর সঙ্কটের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। অবিলম্বে বিশেষায়িত হাসপাতালে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
টিআইবির রিপোর্ট প্রসঙ্গে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, টিআইবির রিপোর্টে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আঁতে ঘা লেগেছে। সরকারের সর্বব্যাপী নিয়ন্ত্রণের ঘন অন্ধকার ভেদ করে টিআইবি রিপোর্টে ভোট ডাকাতির মহাসত্য প্রকাশ হওয়াতে সরকারের মন্ত্রীরা ও নির্বাচন কমিশন মুখ লুকাতে পারছে না। সেজন্য আর্তচিৎকার করে সত্য লুকানোর চেষ্টা করলেও কোনো লাভ নেই। মানুষ যা জানার নির্বাচনের আগের দিন রাত থেকেই জেনেছে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিভিন্ন সংগঠন নির্বাচনে মহাভোট ডাকাতি নিয়ে প্রতিবেদন, মন্তব্য ইত্যাদি করেছে। বিশ্বের নানা গণতান্ত্রিক দেশ বলেছে-এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ। তারা এই ভুয়া ভোটের নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং তদন্ত দাবি করেছে।
রিজভী বলেন, বিশ্ববাসী এই নির্বাচনকে ইতিহাসের নিকৃষ্ট নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করেছে। ক্ষমতা চিরদিনের জন্য কোলবালিশের মতো আঁকড়ে ধরে রেখে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যই ভোটারদেরকে ভোট দেয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। গণমাধ্যমকে সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারীর মধ্যে রেখে, বিরোধী দলকে কারাগারে ঢুকিয়ে, ভোটারদেরকে আতঙ্কের মধ্যে রেখে, নির্বাচন কমিশনে মোসাহেবদের বসিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে পার পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ জীবন উৎসর্গ করে এই দেশ স্বাধীন করেছে, তারা প্রয়োজন হলে জীবন দিয়ে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনবে।
তিনি বলেন, জনগণের টাকা ব্যাংক ও সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে লোপাট করে এখন আওয়ামী ক্ষমতাসীনদের আলমারীতে টাকা, লকারে টাকা, তোশকের নিচে টাকা, আর বেশির ভাগ উড়ে গেছে বিদেশে টাকা। চারিদিকে তাদের টাকা গিজগিজ করছে।
তিনি বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সদর উপজেলার রাজঘর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ওই আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী পুলিশ প্রহরায় তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে কেন্দ্রে ঢুকেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অপেক্ষমান ভোটারদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। পুলিশ ফাঁকা গুলি করে ভোটারদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করার চেষ্টায় ব্যর্থ হলে নৌকার প্রার্থী নিজের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে গুলি চালালে বিএনপি কর্মী ইসরাইল ঘটনাস্থলেই নিহত হয় এবং জাবেদসহ অসংখ্য বিএনপি নেতাকর্মী কর্মী গুলিবিদ্ধ হন। এদের মধ্যে জাবেদসহ অনেকেই গুরুতর আহতাবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। পরবর্তীতে সরকারী দলের প্রার্থী লাশ নিয়ে নিহতের পিতা-মাতাকে হুমকি দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। হুমকি দিয়ে সেই নেতা আরো বলে যে, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা না করলে লাশ দেয়া হবে না। অত:পর নিহতের পিতা-মাতা উপায়ান্তর না দেখে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে বাধ্য হয়।
রিজভী বলেন, বর্তমানে রাজঘর গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প বসিয়ে নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে, গ্রামটি এখন পুরুষশুন্য হয়ে পড়েছে। মহিলাদের উপরও নির্যাতনের কারণে তারা বাড়িতে থাকতে পারছে না। বর্তমানে ইরি মৌসুমে ধান বোনার কাজে কোনো নারী-পুরুষ গ্রামে যেতে সাহস পাচ্ছে না। আমি আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনীর এহেন ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ডে ধিক্কার জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এধরণের কর্মকান্ড বন্ধের জোর দাবি করছি। নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার অভিযান বন্ধেরও জোর দাবি জানাচ্ছি। নিহত বিএনপি কর্মী ইসরাইলের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ জাবেদ এর আশু সুস্থতা কামনা করছি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা