১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলকদ ১৪৪৫
`


শিক্ষা দিবসে শিক্ষকদের স্মরণ

শিক্ষা দিবসে শিক্ষকদের স্মরণ - ছবি : সংগৃহীত

প্রতিটি মানুষই তো জীবনে শিক্ষা নিয়ে আসে, শিক্ষা দিয়ে যায়। জীবনের এই চলার পথে প্রতিটি মানুষ থেকেই কিছু না কিছু শেখা যায়। হতে পারে সে অপরিচিত, অজানা, অচেনা কেউ। হতে পারে সে জীবন নদীর ঢেউ। যে একবার চলে গেলে, আর কভুও আসে না ফিরে, মিলে না দেখা আর কখনো তারে।

ছোট-বড়ও হতে পারে, হতে পারে ধনী-গরীব, সাদা-কালো। হতে পারে সমাজের নিম্ন শ্রেণীও। আসলে শেখার কোনো শেষ নাই। বই থেকে শেখা যায়, ছবি দেখে শেখা যায়, অনলাইন জগতও এখন শিক্ষার বিস্তর প্লাটফর্ম। শিখতে পারি আমরা প্রকৃতি থেকেও। যেই শিক্ষা দিয়ে গেছেন সুনির্মল বসু ‘সবার আমি ছাত্র’ কবিতায়। যেখানে আকাশ উদার হতে শেখায়, সূর্য আপন তেজে জ্বলতে শেখায়।

তবে কিছু শিক্ষা আছে যা শিখতে হয়, শিখতে মাধ্যম প্রয়োজন হয়, যেই শিক্ষা অন্যের থেকে আহরণ করতে হয়। যাদের থেকে এই শিক্ষা নেয়া হয়, তাদের শিক্ষক বলা হয়। শিক্ষক হলেন জাতির আলোকবর্তিকাবাহী এবং মানব জাতির ভবিষ্যতের রূপকার।

আমার প্রথম শিক্ষক আমার দাদা। স্মরণ থেকে বলছি কিংবা হয়তো শুনে শুনেই মনে গেঁথে নিয়েছি যে, রাস্তার ধারের কাঁঠাল গাছ তলায় বসে আমাকে নাকি কালিমাগুলো শেখাতেন জিকিরে জিকিরে। অন্য বাচ্চারা যখন মক্তবে যাচ্ছে, সেই সকাল বেলায় কোলে বসিয়ে আমাকে শেখাতেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু...(আল্লাহ ওনাকে জান্নাতবাসী করুন)

অতঃপর বয়স বাড়লে শুরু হলো মক্তবে যাওয়া, মহল্লার মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ আলি রহ:-এর কাছে পড়া হলো কায়দা-আমপারা। মাঝে দুই-একজন কুরআন শিখিয়েছেন ঘরে এসে, শহরেও এক হুজুরের কাছে পড়া হয়েছে। নামগুলো ভুলে গেলেও চেহারা আবছা ভাসে। যেখানেই থাকুন ওনারা ভালো থাকুন।

এর মাঝে স্কুল জীবনে প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভালোবাসা, স্নেহ পাওয়া। অতঃপর মাদরাসায় চলে যাওয়া। মাদরাসা ইদারাতুল কুরআনে শ্রদ্ধেয় নুরানি হুজুর, মাওলানা আজিজুল হকের সান্নিধ্যে নতুন জীবনের সূচনা। হুজুর এখনো যেভাবে দেখা হলে হাত ধরে হাঁটেন, মনে হয় এখনো সেই বাচ্চাই রয়ে গেছি। আছি প্রায় এক যুগ পেছনে।

হেফজ জীবনের শিক্ষক মাওলানা মাসুদুল হক। যার সুবাদেই গমন করা ইদারাতুল কুরআনে। বেশি দিন পড়া হয়নি তার কাছে। এক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার কারণে চলে আসতে হয় ছোটবেলার সেই প্রিয় আঙ্গিনা ছেড়ে। তবে হুজুরের সাথে এখন মেলবন্ধনটা আরো গভীর ও সুদৃঢ়।

তবে সবাইকে ছাপিয়ে এখন পর্যন্ত যত শিক্ষক এসেছেন জীবনে, তাদের মাঝে অন্যতম সেরা প্রাপ্তি কুরআন নিকেতনের মাওলানা নুরুল আবসার মাসুম রহ: ও মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ জুটি। ছাত্রদেরকে কতভাবে আপন করে নেয়া যায়, কতভাবে উৎসাহিত করা যায়, কতভাবে জ্ঞান ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয়া যায়, তার এক জ্বলজ্বলে উপমা তারা। যদিও প্রিয় মাসুম হুজুর এখন দূর আকাশের তারকা (আল্লাহ ওনাকে জান্নাতের উঁচু মাকাক দান করুন), তবে মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ হুজুর এখনো হয়ে আছেন ছায়া।

মাওলানা ইন’আমুল হাসানের কথাও বলতে পারি। ছাত্রদের কতভাবে ভালোবাসা যায়, তার জ্বলন্ত উদাহরণ তিনি। মাওলানা শোয়াইব সাহেবের কথাও বলতে হবে, যখন তখন, যেকোনো প্রয়োজন; পরামর্শ চাইলে সদা সমাধান দেন হাসিমুখে। বলব সময়ের প্রিয় শিক্ষক মাওলানা মাজহারুল ইসলাম হুজুরের কথাও। প্রতিটি কথাতেই যেন বাস্তবতা খুঁজে পাই। আল্লাহ এই ছায়াগুলো দীর্ঘায়িত করুন।

তবে দিনশেষে সবার প্রথম শিক্ষক বাবা-মা। তাদের দেয়া শিক্ষাই ভিত্তি গড়ে দেয় কোন পথে চলবো আমরা। তাদের দেয়ার শিক্ষার ওপর ভিত্তি করেই আজকের এখানে আমি। তাদের দেয়া শিক্ষার ফলেই তাদের নিয়ে লিখতে পারা।


আরো সংবাদ



premium cement