২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এবনে গোলাম সামাদ

এবনে গোলাম সামাদ - ছবি : নয়া দিগন্ত

এক.
প্রাচীনকালের পণ্ডিত ব্যক্তিদের দেখা যায় তারা একই সাথে বহু বিষয়ে বিশেষজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তারা হলেন বহুপ্রজ। তাদের মন ছিল সৃষ্টিশীল এবং ছিল বিচিত্র বিষয়ে আগ্রহ ও অধিকার। দেখা গেল, কেউ একজন পেশায় চিকিৎসক, পাশাপাশি তিনি আবার ধর্মতত্ত্ববিদ ও দার্শনিক। কেউ জ্যোতির্বিজ্ঞানী, অথচ কাব্য চর্চাও করেন।

জ্ঞান জগতের অসাধারণ বিস্তৃতির ফলে বিশেষজ্ঞতার ক্যাটাগরি নির্মাণ করতে হয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিশীল মানুষ এই ক্যাটগরিতে অনেক সময় আবদ্ধ থাকতে চান না। তারা এই ক্যাটাগরির সীমা অতিক্রম করে যান। এবনে গোলাম সামাদ এ রকম একজন পণ্ডিত যিনি প্রাচীনকালের বহুপ্রজ পণ্ডিতদের সিলসিলা বহন করছেন।

পেশাগতভাবে তিনি একজন উদ্ভিদবিদ্যাবিদ। কিন্তু এই বিষয়ের বাইরে তিনি বিশেষভাবে আগ্রহশীল হন নৃতত্ত্ব ও শিল্পকলার দিকে। এ বিষয়ে তিনি অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রচুর অধ্যয়ন ও অনুশীলন করেছেন। এই অনুশীলনের ফল হিসেবে তিনি বাংলাদেশে প্রথম নৃতত্ত্ব ও শিল্পকলার উপরে তত্ত্বীয় আলোচনা করেন ও পুস্তকাদি রচনা করেন। এদিক দিয়ে তাকে বলা যায় বাংলাদেশের প্রথম নৃতাত্ত্বিক ও শিল্প সমালোচক। এটির পাশাপাশি তিনি ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজ, ধর্ম ও রাজনীতি নিয়েও বিস্তর লেখালেখি করেছেন। সেই হিসেবে তিনি একজন বিদগ্ধ সমাজবিজ্ঞানীও বটে। বাঙালি মুসলমান সমাজ ও জনগোষ্ঠীকে বোঝার ক্ষেত্রে সামাদ টুলস হিসেবে ব্যবহার করেছেন তার নৃতত্ত্ব ও শিল্পকলা বিষয়ক অধীত জ্ঞানকে। এই টুলস ব্যবহার করে তিনি দেখাতে চেয়েছেন, বাঙালি মুসলমান ইতিহাসের ধারাবাহিকতার ভেতর দিয়ে একটি জাতিতে পরিণত হয়েছে এবং নিজেদের একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলেছে।

ঠিক একই টুলস ব্যবহার করে ধর্মেরও তিনি আলোচনা করেছেন। নৃতত্ত্বে ধর্ম নিয়ে বিশেষ গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। মানুষের ইতিহাসে ধর্মচিন্তার উদ্ভব হয়েছে রাষ্ট্রচিন্তার আগে। ধর্মচিন্তার ভেতর দিয়ে আইন কানুনের ধারণা এসেছে, যা রাষ্ট্রচিন্তাকে প্রভাবিত করেছে। রাষ্ট্রচিন্তা বুঝতে হলে তাই ধর্ম বাদ দিয়ে সম্ভব নয়।

সামাদ ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু ১৯৭১-এর ঘটনাবলি তার মনে বিপুল ভাবান্তর সৃষ্টি করে। তিনি কলকাতা গিয়ে বুঝতে পারেন মুক্তিযুদ্ধ বলতে ভারত যা বুঝায়, বাংলাদেশের মানুষ তা বুঝায়নি। ভারত চেয়েছিল স্রেফ পাকিস্তান ভাঙতে। আর বাংলাদেশের মানুষ চেয়েছে একটি পৃথক রাষ্ট্র গড়তে। তার এই বোঝাবুঝি তাকে উপমহাদেশের ইতিহাস অনুশীলন করতে প্রাণিত করে এবং এই পৃথক রাষ্ট্র উদ্ভবের স্বরূপ নির্ণয়ে তিনি তাত্ত্বিক আলোচনা করেন। একজন সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে এটা সামাদের একটা বড় বৈশিষ্ট্য।

দুই.
এবনে গোলাম সামাদের পৈতৃক বসতভিটা ছিল সাবেক যশোর জেলার মাগুরা মহকুমায়। মাগুরা এখন জেলা। বাবার রেলের চাকরির সূত্রে তারা রাজশাহী শহরে নিবিষ্ট হন এবং এই শহরেই সামাদের জন্ম ২৯ ডিসেম্বর ১৯২৯। ছয় ভাইবোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ সামাদের পিতার নাম মৌলভী মোহাম্মদ ইয়াসিন ও মাতার নাম নসিরন নেসা। সামাদের বড়বোন দৌলতুন নেসা খাতুন বৈবাহিক সূত্রে রংপুরে নিবিষ্ট হওয়ার পর তিনি সেকালের বিখ্যাত নেতা আবু হোসেন সরকারের নেতৃত্বে ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েন। দৌলতুন নেসা খাতুন পরবর্তীকালে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের টিকিটে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হন। ব্যক্তিগতভাবে দৌলতুন নেসা একজন সুসাহিত্যিক ছিলেন।

সামাদের লেখাপড়ার হাতেখড়ি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে। তবে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনার ব্যাপটিস্ট মিশনারি স্কুল থেকে ১৯৪৮ সালে। উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন ১৯৫০ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে।

রাজশাহী শহরেই সামাদ বেড়ে উঠেছেন। বলা চলে এই শহর তাকে নির্মাণ করেছে। রাজশাহী শহরের কাছেই সাঁওতালদের গ্রাম। ছোটবেলা থেকেই তিনি দেখেছেন শহরে সাঁওতালদের আনাগোনা। যা তার কিশোর মনের ঔৎসুক্য বাড়িয়ে দেয়। তিনি সাঁওতালদের সম্পর্কে পড়াশোনা শুরু করেন। এই পড়াশুনাই তাকে পরবর্তীকালে নৃতত্ত্বের ওপর উচ্চতর পড়াশোনা করতে আগ্রহী করে তোলে। বাংলা ভাষার অনেক সাহিত্যিকই সাঁওতাল জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন। সাঁওতালদের অভিজ্ঞতা অনেককে শিল্পী বানালেও সামাদকে বানিয়েছে নৃতাত্ত্বিক। পরবর্তীকালে সামাদ যখন উচ্চশিক্ষার জন্য ফ্রান্সের পারীতে যান, তখন সেখানকার নৃতত্ত্ব জাদুঘর তার জ্ঞানের জগতকে অনেক বাড়িয়ে দেয় এবং তার নৃতাত্ত্বিক হওয়ার স্বপ্ন পূরণের পথ খুলে দেয়।

১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন তেজগাঁও এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট থেকে সামাদ কৃষি গ্রাজুয়েট ডিগ্রি লাভ করেন। সেই হিসেবে তিনি একজন কৃষিবিদও। পরে উচ্চশিক্ষার জন্য বিলাত যান এবং সেখানকার লিডস বিশ^বিদ্যালয় থেকে প্লান্ট প্যাথলজি বিষয়ে পোস্টগ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা লাভ করেন ১৯৫৫ সালে। সামাদ লিখেছেন :
তার বাবা একটি বাড়ি বিক্রয় করে যে টাকা পান তা দিয়ে তাকে পাঠান বিলাতে। তার সেখানে আরো পড়বার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সেটা হয়ে ওঠেনি অর্থের অভাবে।

দেশে ফিরে তিনি ঢাকায় পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটে চাকরি করেন চার বছর। চাকরির পাশাপাশি শেখেন ফরাসি ভাষা। ১৯৬০ সালে ফরাসি সরকারের একটি বৃত্তি নিয়ে ফ্রান্সে যান এবং সেখানকার পোয়াতিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জীবাণুতত্ত্বে পিএইচডি করেন। দেশে ফিরে ১৯৬৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন। তিনি একটানা বত্রিশ বছর উদ্ভিদ বিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন। কিন্তু তার এই পেশাগত অধ্যাপনার জন্য তিনি যতটুকু পরিচিতি পেয়েছেন তার চেয়ে তিনি বেশি সমাদৃত হয়েছেন সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি আত্মমুখী হলেও তার চিন্তাচর্চার সাথে জনসম্পৃক্তির কখনো অভাব ঘটেনি। বিশেষ করে তার চিন্তাচর্চা চলমান স্রোতের সাথে ভেসে না গিয়ে স্রোতের প্রতিকূলে সুবর্ণ হয়ে ওঠে। বুদ্ধিজীবীতার ক্ষেত্রে এটা সামাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক।
ছেলেবেলায় তিনি চিত্রকর হতে চেয়েছিলেন। রংতুলি হাতে নেয়ারও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সামাদের অনেক স্বপ্নের মতো সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। কিন্তু চারুকলার প্রতি তার প্রীতি কখনো নিঃশেষ হয়েও যায়নি। সামাদ লিখেছেন :

মানুষ তার চারুতার সাধনায় ফুল, লতাপাতা নিয়ে নকশা রচনা করেছে। উদ্ভিদ জগৎ মানুষের চিত্রকলায় জুড়েছে অনেক স্থান। হতে পারে এটাও আমাকে অনেক পরিমাণে উদ্ভিদ জগতের প্রতি আকৃষ্ট করেছে।

হয়তো এ কারণেই তিনি হতে পেরেছেন বাংলাদেশের প্রথম শিল্প বোদ্ধা। সামাদের জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছেন সুইডিশ নিসর্গবিদ কার্লফন লিনে। লিনে ছিলেন চিকিৎসক। কিন্তু তিনি বিশ^জোড়া খ্যাতি অর্জন করেন উদ্ভিদ, প্রাণী ও আকরিক বস্তুর শ্রেণীবদ্ধ আলোচনা করার জন্য। মানুষকে তিনি গাত্রবর্ণ দিয়ে ভাগ করেছেন। সে হিসেবে তিনি ছিলেন একজন নৃতাত্ত্বিক। পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন লোক সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ। তার ছিল নানা বিষয়ে কৌতূহল। সামাদের ভেতরেও কাজ করেছে বিচিত্র বিষয়ে কৌতূহল। এই কৌতূহল তিনি লিনে থেকেই পেয়েছেন।

তিন.
নৃতাত্ত্বিক হিসেবে এবনে গোলাম সামাদের স্বাতন্ত্র্য বা প্রাসঙ্গিকতা কি অথবা তার নৃতাত্ত্বিক জ্ঞান আমাদের ইতিহাস পর্যালোচনায় কিভাবে কাজে আসতে পারে? নৃতত্ত্ব বিষয়ে তার বইটির নামও নৃতত্ত্ব; যা প্রথম লেখা হয় ১৯৬৭ সালে। তারপর থেকে নৃতত্ত্ব বিষয়ক জ্ঞানের বিভিন্ন পর্যালোচনা হয়েছে এবং এই পর্যালোচনায় বিভিন্ন টুলস ব্যবহার করা হয়েছে। আর পাঁচটা আধুনিক জ্ঞানের মতো নৃবিজ্ঞানের জন্ম হয়েছে পশ্চিম দেশে। এই কারণে এসব আলোচনায় পশ্চিমকেন্দ্রিক পক্ষপাত এড়ানো সম্ভব হয়নি। আজকাল মুসলিম জগতে এ কারণে পশ্চিমকেন্দ্রিক নৃবিজ্ঞানকে পর্যালোচনার প্রশ্ন উঠেছে। পশ্চিমা কাঠামোর মধ্যে নৃতত্ত্বে জাতীয়তাকে অলঙ্ঘনীয় হিসেবে ধরে সবকিছুর মূল্যায়ন করা হয়। এই চিন্তা অনেক ক্ষেত্রে জাতি বিদ্বেষের জন্ম দেয়। জাতিত্বের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য, কিন্তু জাতি বিদ্বেষ নিন্দনীয়। মুসলিম পণ্ডিতরা বলছেন জাতিত্ব নয়, উম্মাতের চেতনায় নৃবিজ্ঞানকে যাচাই করা চাই। এবনে গোলাম সামাদ পশ্চিমা টুলস ব্যবহার করেই এই বইটা লিখেছেন। কিন্তু তার বিশেষত্ব হচ্ছে তিনি নিজের অধীত নৃতাত্ত্বিক জ্ঞানকে পরবর্তীকালে বাঙালি মুসলমানের স্বাতন্ত্র্য চিহ্নিতকরণে ব্যবহার করেছেন। এই স্বাতন্ত্র্য চেতনাকে আমাদের এখানকার সেকুলার পণ্ডিতরা সাধারণত গ্রহণ করতে চান না। নৃতত্ত্বে জাতি গঠনে ভাষার মতোই ধর্মের গুরুত্ব সমধিক। সেকুলার পণ্ডিতরা ভাষার কথা বললেও ধর্মের কথা বাদ দিতে চান। কিন্তু সামাদ মনে করেন ইসলাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এ দেশের জাতিসত্ত্বায়। ইসলামকে বলা চলে এ দেশের জাতি গঠনের Ethno-formative factor।

এবনে গোলাম সামাদ নৃতাত্ত্বিক আলোচনায় কোনো রকম মতবাদিক গোড়ামির প্রশ্রয় দেননি। মার্কস প্রভাবিত নৃতাত্ত্বিকরা একটা সমাজের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের ওপর জোর দেন। ম্যাক্স ভেবর সমাজ বিশ্লেষণে সমাজের নিয়মনীতি, ধ্যান-ধারণার বৈশিষ্ট্যের কথা বলেন। দুরকেইম সমাজকে বুঝতে চেয়েছেন সমাজের নিজস্ব নিয়ম নীতির সাহায্যে। সামাদ নৃতত্ত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মানুষের অর্থনৈতিক ও তার ভাবনা-ধারণার জগৎ সবকিছু মিলিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছেন।
নৃতাত্ত্বিকভাবে বাংলার মানুষ মঙ্গল-দ্রাবিড়, এই ছিল স্যার হার্বাট রিজলের মত। কিন্তু খন্দকার ফজলে রাব্বি এই মত অস্বীকার করে বলেছিলেন, বাংলার মুসলমানরা প্রধানত বাইরে থেকে এসেছে। তুর্কিরা এসেছিল স্থলপথে। আর আরবরা এসেছিল সমুদ্রপথে। এ কথা সত্য, বহুপ্রকার মানবধারার সংমিশ্রণ ঘটেছে বাঙালি মুসলমানের ভেতরে। তবে জার্মান পণ্ডিত ম্যাক্সমুলার যে আর্য থিওরির কথা বলেছেন, সে হিসেবে বাঙালি মুসলমান আর্য নয়। তারা অনার্য। এটাই সামাদের মত। এখনো ভারতে যে রাজনীতি চলছে তা এই আর্য থিওরির ওপর প্রতিষ্ঠিত, যার ভিত্তি হচ্ছে হিন্দুদের আদি ধর্মগ্রন্থ বেদ। বাঙালি মুসলমান ঐতিহাসিকভাবে এই আর্য ও আর্যাবর্তের রাজনীতির বাইরে অবস্থান করেছে।

বাংলা ভাষাকে আর্য পরিবারভুক্ত ভাষা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ভাষাতাত্ত্বিক আব্রাহাম গ্রিয়ারসন। কিন্তু সামাদ বলেছেন, এই ভাষায় দ্রাবিড় পরিবারভুক্ত ভাষার প্রভাবও আছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন বঙ্গ নামটা কোনো আর্য পরিবারভুক্ত ভাষা নয়। এটা এসেছে চীনা পরিবারভুক্ত ভাষা থেকে। শুধু তাই নয় বঙ্গ বলতে একসময় বুঝাত পূর্ববঙ্গকে, পশ্চিমবঙ্গকে বলা হতো রাঢ়।
বাঙালি মুসলমানের ভাষার মধ্যেও আছে এক ধরনের স্বাতন্ত্র্য। এই ভাষাকে এক সময় মুসলমানী বাংলা বলা হতো। সামাদ রেভারেন্ড উইলিয়াম গোল্ডসেকের মুসলমানী বাংলার অভিধানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, এখানে যেসব শব্দ সঙ্কলিত হয়েছে, এগুলো সবসময় মুসলমান সমাজে চলেছে। হিন্দু সমাজে এসব শব্দ ছিল অজানা। সামাদের এই চিন্তার সাথে আবুল মনসুর আহমদের ভাষা চিন্তার যথেষ্ট মিল আছে।

সামাদ বলতে চান, নরগোষ্ঠীগতভাবে বাঙালি মুসলমান হচ্ছে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি। আরবি ভাষার পরেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মুসলমান কথা বলেন বাংলাভাষায়। সামাদের তাই মত :
বাংলাদেশ টিকে থাকলে তাই একদিন বাংলাভাষাকে বিশে^ মুসলমানের ভাষা হিসেবে গণ্য করা হবে : হিন্দুর ভাষা হিসেবে আর নয়। বাংলা ভাষাকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব এখন পড়েছে বাংলাদেশের মানুষেরই ওপর। কারণ বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করছে বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ।
সামাদ আর একটা জিনিস দেখাচ্ছেন এ দেশে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে প্রমাণ করার জন্য বাঙালি মুসলমানের মধ্যে যেসব প্রাক ইসলামী বা অনৈসলামী ভাবধারা টিকে আছে তার ওপর জোর দেয়া হয়। এর দ্বারা তারা প্রমাণ করতে চান বাঙালি মুসলমানের বৈশিষ্ট্য বা বাঙালিত্বের বুনিয়াদ। এই বৈশিষ্ট্যকে তারা বলেন Syncretistic tradition-সমন্বয়বাদী ঐতিহ্য। এর ফলে বাঙালি মুসলমানের জীবনে ইসলামের যে একটা প্রভাব আছে তা আলোচ্যসূচি থেকে বাদ পড়ে যেতে থাকে। মনে হতে থাকে বাঙালি মুসলমান যেন মুসলমানই নয়।

সব দেশেই লোক সংস্কৃতি থাকে এবং থাকে এক উচ্চস্তরের সংস্কৃতি। এই লোক সংস্কৃতির সাথে ইসলামের মূল বিশ্বাসের অনেক সময় মিল থাকে না। এখানে বিশেষ করে মনে রাখতে হবে, লোক-বিশ্বাসের ওপর মুসলিম সমাজ চলে না। মুসলিম সমাজ চলে কুরআন-হাদিসের নির্দেশনায়। বিশ্বের সর্বত্রই ইসলাম মুসলমানদের একটা জীবনযাপনের রীতি নির্দেশ করেছে। বাঙালি জাতিবাদীরা তাদের তত্ত্বায়নের জন্য প্রচার করেন বাংলাদেশে যে ইসলাম প্রচারিত হয়েছিল তা হলো সূফীবাদী ইসলাম, শরিয়তি ইসলাম নয়। এর সাথে খাঁটি ইসলামের সংযোগ খুব কম। এর সাথে মিশ্রিত হয়েছিল সনাতন যোগ সাধনার। এই ভাবধারা প্রথম প্রচার করেন হিন্দু মহাসভার প্রতি সহানুভূতিশীল পণ্ডিত সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়। এ দেশের বাঙালি জাতিবাদীরা সুনীতির কাছ থেকেই তাদের তত্ত্ব ধার করেছেন বলে মনে হয়। একটা জিনিস জানা দরকার বাংলার মুসলমান মোটের ওপর তার সমাজ জীবনে কুরআন-হাদিসের নিয়ম কানুনকে মেনে চলতে চেয়েছেন চিরকাল। অন্য দিকে সূফীবাদের সাথে সনাতন ধর্মের সাধনায় কোথাও কোথাও মিশ্রণ ঘটলেও সেটা ইসলামী সূফীবাদের প্রধান ধারা নয়। মুসলমান সূফীরা সাধারণত সংসার ধর্ম করেছেন। অন্যান্য ধর্মের মরমিবাদীরা অবিবাহিত থাকতে চেয়েছেন। মুসলিম সূফিরা সাধারণত জীবনবিমুখ নয়। প্রয়োজনে তারা জেহাদ করেছেন। যেমন শাহজালাল, শাহ মখদুম, খান জাহান আলী, বাবা আদম শাহ শহীদ।

(বাকী অংশ আগামীকাল)

পরবর্তী অংশ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন


আরো সংবাদ



premium cement
সাহারা মরুভূমির গরমের মতো অনুভূত হচ্ছে : সরকারকে দায়ী করে রিজভী মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে ২ ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ শ্রীলঙ্কাভিত্তিক এয়ারলাইন্স ফিটসএয়ারের ঢাকা-কলম্বো সরাসরি ফ্লাইট চালু রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসাথে কাজ করবে ঢাকা-ব্যাংকক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইলি হামলায় আহত শিশুর মুখে ২০০ সেলাই বিষখালীতে মৎস্য বিভাগের অভিযান : জেলে নিখোঁজ, আহত ২ দক্ষিণ এশিয়ার যে শহরগুলোর তাপমাত্রা এখন সর্বোচ্চ গাজীপুরে দাঁড়িয়ে থাকা কাভার্ডভ্যানে অটোরিকশার ধাক্কায় হতাহত ৫ চৌগাছায় সিদ কেটে স্বর্ণের দোকানে চুরি দুর্নীতির মামলায় কৃষিমন্ত্রীকে আটক করল ইউক্রেন মোরেলগঞ্জে কৃষককে পিটিয়ে হত্যা

সকল