১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


বেইজিংয়ে ঐক্য সংলাপে বসছে ফাতাহ-হামাস

-

ফিলিস্তিনের দুই প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক সংগঠন হামাস ও ফাতাহের প্রতিনিধিরা বেইজিংয়ে ঐক্য সংলাপে বসতে যাচ্ছেন। শিগগিরই এই সংলাপ শুরু হবে বলে শুক্রবার নিশ্চিত করেছেন হামাস ও ফাতাহর নেতৃবৃন্দ এবং চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন। সংলাপে ফাতাহের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন তাদের সিনিয়র নেতা আজাম আল আহমদ, আর হামাসের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকবেন তাদের সিনিয়র নেতা মুসা আবু মারজুক। উভয়পক্ষের প্রতিনিধিরা শুক্রবার বেইজিংয়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ দিন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখাপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনের জাতীয় কর্তৃপক্ষকে শক্তিশালী দেখতে চাই এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী যেসব রাজনৈতিক পক্ষ সংলাপ এবং আলোচনার মাধ্যমে ঐক্য স্থাপন করতে চায়, তাদের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’
গত ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম চীন সফরে যাচ্ছে হামাসের কোনো প্রতিনিধিদল। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে কূটনৈতিক কর্মকর্তা ওয়াং কেজিয়ান হামাসের প্রেসিডেন্ট ইসমাঈল হানিয়ের সাথে বৈঠক করেছিলেন। সে সময় বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে এই শান্তি সংলাপের প্রস্তাব দেন ওয়াং কেজিয়ান ও হানিয়েও তাতে সম্মতি দেন। শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে ওয়াং ওয়েনবিন জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনের প্রতিপক্ষ দুই সংগঠনের মধ্যে ঐক্য স্থাপনই সংলাপের মূল উদ্দেশ্য।
উল্লেখ্য, গাজা, পশ্চিমতীর ও পূর্ব জেরুসালেম- তিন ভূখণ্ডের সমন্বয়ে গঠিত ফিলিস্তিন। ২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করছে হামাস। অন্য দিকে পশ্চিমতীর ও পূর্ব জেরুসালেমে ক্ষমতায় রয়েছে রাজনৈতিক দল ফাতাহের নেতৃত্বাধীন জোট ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (প্যালেস্টাইনিয়ান অথরিটি-পিএ)। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ফাতাহের শীর্ষ নেতা।
একসময় গাজা উপত্যকায়ও ক্ষমতায় ছিল ফাতাহ। কিন্তু ২০০৭ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পর ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের চাপে তাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত ও ফাতাহকে ক্ষমতাসীন করেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তখন ফাতাহকে গাজা থেকে বিতাড়িত করে হামাস। দুই সংগঠনের মধ্যে বিরোধিতার প্রধান ইস্যু স্বাধীনতা অর্জনের পন্থা নিয়ে।
গত ৭ অক্টোবর গাজার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরাইলি ভূখণ্ডে ঢুকে নজিরবিহীন অভিযান চালায় হামাস। সেই সাথে বন্দী হিসেবে ধরে নিয়ে যায় আরো ২৪০ জনকে। জবাবে সেই দিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। গত ছয় মাস ধরে চলমান সেই হামলায় কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহতদের বেশির ভাগই শিশু, নারী ও বেসামরিক লোকজন।
এই যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ফের গুরুত্বসহকারে সামনে আসে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্থাপনের ইস্যুটি। তবে এ ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা ছিল হামাস ও ফাতাহের অনৈক্য ও পরস্পরের প্রতি বৈরী মনোভাব। গত কয়েক বছরে মধ্যপ্রাচ্যে গভীর প্রভাব বিস্তারকারী চীনের অবশ্য এ বিষয়ে অতীত সাফল্যের রেকর্ড রয়েছে। ২০২৩ সালে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে শান্তি স্থাপনে নেতৃত্ব দিয়েছিল বেইজিং। মধ্যপ্রাচ্যের এ দুই নেতৃস্থানীয় দেশের মধ্যে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বৈরিতা চলছিল।


আরো সংবাদ



premium cement