৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নেতানিয়াহু-বেনেতে ফারাক দেখছে না ফিলিস্তিনিরা

বেনজামিন নেতানিয়াহু ও নাফতালি বেনেত -

ইসরাইলের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাফতালি বেনেতের আবির্ভাব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না পশ্চিমতীর ও গাজার ফিলিস্তিনিরা। এক জাতীয়তাবাদী নেতার স্থলে আরেক জাতীয়তাবাদী আসায় ফিলিস্তিন পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন হবে না বলেও মনে করছে তারা।
পশ্চিমতীরে বসতি স্থাপন করা সংগঠনের সাবেক প্রধান বেনেতকে উগ্র জাতীয়তাবাদী হিসেবে দেখছে বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। সরকার গঠনের লক্ষ্যে বুধবার ইসরাইলের ডান, বাম ও মধ্যপন্থী দলগুলো যে জোট করেছে তাতে কট্টর ডানপন্থী এ রাজনীতিকই ১২ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকা নেতানিয়াহুর স্থলাভিষিক্ত হতে চলেছেন। এ দুই নেতার মধ্যে নানান বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও দুজনই গত মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের জন্য হামাসকেই দায়ী বলে মনে করেন। এমনকি বৃহস্পতিবারও নিজের অবস্থান লুকোননি বেনেত।
ইসরাইলের চ্যানেল ১২-কে তিনি বলেন, ‘সত্যিটা বলতেই হবে। ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের এই বিবাদ মোটেও জায়গা নিয়ে নয়। ফিলিস্তিনিরা এখানে আমাদের অস্তিত্বই স্বীকার করে না। আরো কিছুদিন এরকম পরিস্থিতি চলবে বলে মনে হয় আমার।’
ইসরাইল-ফিলিস্তিন সঙ্কট নিয়ে অবস্থানই বেনেতকে ‘চিনিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট’ বলে মতো ফিলিস্তিনি বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তাদের। ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) প্রতিনিধি বাসেম আল-সালহি বলেছেন, ‘নেতানিয়াহুর চেয়ে মনোনীত প্রধানমন্ত্রী কম উগ্রবাদী নন।’ প্রায় একই কথা শোনা গেছে অন্য কর্মকর্তাদের মুখেও। গাজার সরকারি কর্মী ২৯ বছর বয়সী আহমেদ রেজিক বলেছেন, ‘ইসরাইলি নেতাদের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। তারা তাদের দেশের জন্য ভালো কিংবা খারাপ হতে পারে। আমাদের জন্য তারা সবাই খারাপ।’
গাজা ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রক হামাসও বলছে, কে ইসরাইল শাসন করছে, তাতে খুব একটা পার্থক্য দেখা যায় না। হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাশেম বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনিরা ডান, বাম, মধ্যপন্থী নামে পরিচিত কয়েক ডজন ইসরাইলি সরকার দেখেছে। কিন্তু যখনই ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের প্রশ্ন এসেছে, তখন তারা সবাই বৈরী আচরণ করেছে। তাদের সবারই সম্প্রসারণের বৈরী নীতি ছিল।’
এবার যে জোট সরকার ইসরাইলের শাসনভার নিতে যাচ্ছে, তাতে প্রথমবারের মতো একটি ইসলামিক দলও থাকছে, যারা দেশটির ২১ শতাংশ আরব সংখ্যালঘুর ভোটে পার্লামেন্টে জায়গা করে নিয়েছে। আরব এ সংখ্যালঘুরা কাগজে কলমে ইসরাইলের নাগরিক হলেও সাংস্কৃতিকভাবে ফিলিস্তিনি। ইসলামী এ দলটির নেতা মনসুর আব্বাস বলছেন, যে চুক্তির মাধ্যমে জোট হয়েছে তাতে আরব শহরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন ও সহিংস অপরাধ মোকাবেলায় ১৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। তবে ‘শত্রুর সাথে হাত মেলানোয়’ পশ্চিমতীর এবং গাজার বেশির ভাগ বাসিন্দাই এখন আব্বাসকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবেই দেখছেন।
গাজার ২১ বছর বাসিন্দা বাদরি কারামের ভাষায়, ‘তিনি বিশ্বাসঘাতক। গাজায় নতুন যুদ্ধ শুরু করতে ভোট দিতে বললে তিনি কী করবেন? তিনি কি তা অনুমোদন করবেন, ফিলিস্তিনি হত্যায় অংশ নেবেন।’
১৯৬৭ সালের যুদ্ধে দখল করা পশ্চিমতীরে ইসরাইলের বসতি স্থাপন বাড়ানোর লক্ষ্যে বেনেত দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করে আসছিলেন। অবশ্য সম্প্রতি তাকে পশ্চিমতীরে আরো কিছুদিন ‘স্থিতাবস্থা’ বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। তিনি বলেছেন, ‘আমি এই সঙ্ঘাত কমানোর কথা ভাবছি। আমরা এই দ্বন্দ্বের সমাধান করতে পারবো না, তবে যেখানে যেখানে সম্ভব, আরো ক্রসিং পয়েন্ট, জীবনের মানের আরো উন্নতি, বেশি ব্যবসা-বাণিজ্য, বেশি শিল্পায়নের চেষ্টা করব।’


আরো সংবাদ



premium cement