০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রধান বাধা স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা ও অনিশ্চয়তা

-

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) তিন বারের সফল প্রেসিডেন্ট আবুল কাসেম খান। যুক্তরাষ্ট্রের জেভিয়ার ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ শেষ করার পর তিনি বাংলাদেশে দুই বছর ব্যাংকিং সেক্টরে কাজ করেন। এরপর ১৯৯৬ সালে তিনি পারিবারিক ব্যবসায়ে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে তিনি এ কে খান কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও এ কে খান টেলিকমের (এ কে টি এল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আগামী জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে দেশের অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি, বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রধান বাধা ও তা থেকে উত্তরণের পরিকল্পনা নিয়ে নয়া দিগন্তের সাথে কথা বলছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশরাফুল ইসলাম।

নয়া দিগন্ত : দেশের জিডিপির অনুপাতে বিনিয়োগ যে হারে বাড়ার কথা তা হচ্ছে না কেন?
আবুল কাসেম খান : দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ যতটা দরকার মোট দেশজ উৎপাদনের জিডিপি অনুপাতে ততটা বাড়ছে না। প্রতি বছর ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি ডলার নতুন বিনিয়োগ আসছে। কিন্তু জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ফলে অনুপাত বাড়ছে না। বেসরকারি বিনিয়োগ এখন ২৩-২৪ শতাংশের ঘরে রয়েছে। সবমিলিয়ে বিনিয়োগ জিডিপির ২৮ শতাংশে উন্নীত করাটা সম্ভব হচ্ছে না। আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশের জন্য বিনিয়োগ বাড়ানোর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
নয়া দিগন্ত : বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রধান বাধা কী?
আবুল কাসেম খান : বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রধান বাধা স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও অনিশ্চয়তা। এর সাথে ব্যবসা ব্যয় বেশি হওয়া, কর প্রদানে জটিলতা, বিকল্প অর্থায়নের সংস্থান না হওয়া। আবার ব্যবসা সহজ করার ক্ষেত্রে যেভাবে সংস্কার হওয়ার কথা ছিল, সেভাবে হচ্ছে না। সবমিলিয়ে বিনিয়োগের গতি যতটা হওয়ার কথা তা হচ্ছে না।
নয়া দিগন্ত : অনেকেই বলে থাকেন অর্থনীতির সূচক যতটা উন্নত হচ্ছে কর্মসংস্থান সেই হারে বাড়ছে না। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
আবুল কাসেম খান : অনেকের সাথে আমিও একমত যে কর্মসংস্থান যতটা হচ্ছে তা অর্থনীতির এগিয়ে যাওয়ার গতির সাথে মিলছে না। যত কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ার কথা, ততটা হচ্ছে না। বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণও দেশে অনেক কম। এটা জিডিপির অনুপাতে মাত্র এক শতাংশের মতো। অথচ হওয়া উচিত ৩ থেকে ৪ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে একটা কথা আমরা সব সময় বলি সেটা হলো, ব্যবসা করা সহজ করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসা সূচকে উন্নতি করতে হবে। নীতি পর্যায়ে আমরা খুব ভালো নীতি নির্ধারণ করছি, কিন্তু মাঠপর্যায়ে সেটির বাস্তবায়ন ধীর হয়ে যাচ্ছে। উচ্চপর্যায়ের নীতি সরকারের যে কর্মচারীর দ্রুত বাস্তবায়ন করার কথা, সেখানে বাধায় পড়তে হচ্ছে। এতে ব্যবসার খরচ বাড়ছে।
নয়া দিগন্ত : বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজ সূচকে ২০০৫-০৬ সালে ছিল ৬৫তম। এখন ১৮৯টি দেশের মধ্যে ১৭৬তম। ব্যবসা সহজ করার সূচকে পিছিয়ে পড়ার কারণ কী?
আবুল কাসেম খান : দেখুন আমাদের প্রতিযোগী প্রতিবেশী ভারত, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশ। গত ১২ বছরে ব্যবসা সহজ করার জন্য অবকাঠামো থেকে সবক্ষেত্রে সংস্কার হয়েছে। কিন্তু যে গতিতে সংস্কার করেছে আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো সেই গতিতে আমাদের সংস্কার হয়নি। এ কারণে আমরা প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে পড়েছি। ব্যবসা সহজ করার পদক্ষেপগুলো আগামী দিনগুলোতে আরো জোর দিতে হবে। গ্যাস-বিদ্যুতের দামের মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপ দরকার। যাতে বিনিয়োগকারীরা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তার খরচের পরিকল্পনা করতে পারেন। সবচেয়ে বড় সংস্কার দরকার কর প্রদানের ক্ষেত্রে। তবে বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যেমনÑ কোম্পানির নিবন্ধনের ব্যয়ও বেশ কমানো হয়েছে। এটাও একটা ভালো পদক্ষেপ। কিন্তু সামগ্রিকভাবে সংস্কারে আমরা অনেক পিছিয়ে। বাংলাদেশে সহজে ব্যবসা সূচকে ১৮৯টি দেশের মধ্যে ১৭৬তম। অনেক ক্ষেত্রেই সংস্কার হওয়ার কথা ছিল, সেটার বাস্তবায়ন ঠিকমতো হয়নি। এসব কিন্তু বিনিয়োগ ও ব্যবসার ওপর প্রভাব ফেলে।
নয়া দিগন্ত : ব্যবসাবাণিজ্যে অনেক ক্ষেত্রে একমুখী হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ বড়রা ব্যাংক ঋণ থেকে শুরু করে বেশি সুবিধা পাছেন, কিন্তু মাঝারি ও ছোট ব্যবসায়ীরা সেই সুবিধা পাচ্ছেন না। এতে তারা উঠে আসতে পারছেন না। এই সমস্যা সমাধানের উপায় কী?
আবুল কাসেম খান : নতুনদের জন্য বাংলাদেশে ব্যবসা করা সহজ নয়। বড়দের পর্যায়ে সহজ। কারণ, মন্ত্রী বা সচিবদের কাছে যাওয়ার সুযোগ আমাদের আছে। কিন্তু ছোটদের পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। তাদের শুরুতেই ব্যবসা ব্যয় নানা জায়গায় বেশি হয়ে যাচ্ছে। যেমনÑ করের ঝামেলায় পড়ে গেলে ছোট ও মাঝারিদের জন্য বিরাট সমস্যা তৈরি হয়। আমরা হয়তো আইনজীবী নিয়োগ করে অথবা নিরীক্ষক নিয়োগ করে সমস্যা সমাধান করছি। কিন্তু ছোট ও মাঝারিদের ঘাটে ঘাটে সমস্যায় পড়তে হয়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবসা ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। সহজ করতে হবে কর প্রদানের ব্যবস্থা। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আমরা বারবার বলছি, অনুকূল পরিবেশ দেন। বিনিয়োগ নতুন উচ্চতায় নিতে দরকার ঝুঁকি কমানো। বিনিয়োগকারীরা সব সময় ঝুঁকি কী কী তা বিবেচনা করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। সেটা দেশী-বিদেশী দুই ক্ষেত্রেই। বাংলাদেশে ঝুঁকির মাত্রা অনেক উচ্চ। কোথায়, কখন, কিভাবে খরচ বাড়বে, এটা যেমন অনিশ্চিত, তেমনি কোনো কাজে বাড়তি ব্যয় করতে হবে, সেটাও অজানা। কী কারণে লাগবে, সেটাও আমরা জানি না। ছোট ও মাঝারি বিনিয়োগকারীদের জন্য অনিশ্চয়তাজনিত বাধা অনেক বেশি। এ বাধাগুলো দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
নয়া দিগন্ত : ব্যাংকে টাকার সঙ্কট। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। এ ক্ষেত্রে বিকল্প অর্থায়নের ব্যবস্থা কী?
আবুল কাসেম খান : এটা ঠিক ব্যাংক খাতে মন্দ ঋণ বেড়ে গেছে। কমে গেছে ব্যাংকের নগদ আদায়। এক্ষেত্রে বিগত দিনে বিকল্প অর্থায়নের আমরা কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি। বিনিয়োগকারীরা সবাই ব্যাংকমুখী। এ কারণে শিল্প খাত সমস্যায় পড়ছে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি খাতে অর্থায়নে বড় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন যোগানোর ক্ষেত্রে সব কোম্পানিকে অনুমোদন দিতে হবে। তিন বছর মুনাফা থাকার শর্ত তুলে দিতে হবে। বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনবে কোম্পানির সুনাম ও প্রকল্পের সম্ভাবনা দেখে। একই সাথে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে বিশেষ করে মহাসড়ক, বন্দর ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের সম্পৃক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে যত ধরনের ঝুঁকি রয়েছে তা নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে।
নয়া দিগন্ত : সামনে জাতীয় বাজেট পেশ হবে। কী ধরনের বাজেট চান?
আবুল কাসেম : আমরা সবসময়ই ব্যবসাবান্ধব বাজেট চাই। আমাদের অনেক চাওয়া থাকে। কিন্তু সীমাবদ্ধতার কারণে তার অনেক কিছুই আমরা পাই না। তারপরও আমরা বলব, আমরা কর কমানোর কথা বলেছি। কেননা, আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোতে কর হার অনেক কম। কর দেয়ার পদ্ধতি সহজ করার কথা বলি। বিকল্প তহবিলের সংস্থান করতে খুব দ্রুত পুঁজিবাজার থেকে তহবিল সংস্থানের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানাচ্ছি। অবকাঠামো উন্নয়ন, শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধিতে যে পরিমাণ ব্যয় হবে তার পুরোটাই কর রেয়াত চাচ্ছি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
প্রধানমন্ত্রীর সাথে নারী ক্রিকেটারদের প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ পরিবেশ রক্ষায় গাছ কাটা বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আরেক মামলায় ৪ দিনের রিমান্ডে মিল্টন সমাদ্দার জনগণের পাশে দাঁড়ানোর কারণেই আস্থা অর্জন করেছে সেনাবাহিনী : প্রধানমন্ত্রী ৩ মাসের গর্ভবতী স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা করে স্বামীর আত্মসমর্পণ ১০ মে’র ডেডলাইনের আগেই সেনা প্রত্যাহার নিয়ে পর্যালোচনা ভারত-মালদ্বীপের রাশিয়ান রকেট হামলায় দোনেৎস্ক অঞ্চলে নিহত ২ সখীপুরে বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে সড়ক নির্মাণের ইটের খোয়ার স্তুপ, দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা মেসির ৫ এ্যাসিস্ট ও ১ গোলের সাথে সুয়ারেজের হ্যাটট্রিকে মিয়ামির বড় জয় ফরিদপুরে ইয়াবাসহ গ্রেফতার যুবকের যাবজ্জীবন বার্সার হারে লা লিগা চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ

সকল