৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বিনিয়োগ খরা কাটছে না

-

বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ব্যবসাবাণিজ্য সহজ করা, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং অবকাঠামো উন্নয়নের পেছনে খরচ করা হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। কাটছে না বিদেশী বিনিয়োগের খরা। নিবন্ধন করেও ফিরে যাচ্ছেন অনেকে। এ অবস্থায় দেশে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের ওপর গুরুত্বারোপ করছেন বিশ্লেষকেরা।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এমনিতেই বাংলাদেশ কাক্সিক্ষত হারের চেয়ে কম পরিমাণে বিদেশী বিনিয়োগ পায়। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে না বাড়ায় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় বিনিয়োগের পরিমাণ ২৩ শতাংশে আটকে আছে। বিনিয়োগ না হলে দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান হয় না। তাই রফতানি বৃদ্ধি, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও শিল্পের সক্ষমতা বাড়াতে বিদেশী বিনিয়োগের ওপর জোর দেয়ার তাগিদ দেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশে প্রকৃত বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে ২১৫ কোটি ডলার যা আগের বছরের চেয়ে ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ কম। অথচ একই সময়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কাছে এক হাজার ৪৭ কোটি ডলারের বিদেশী ও যৌথ বিনিয়োগ নিবন্ধিত হয়েছে। বিশ্লেষণের বিষয়, বিনিয়োগ যদি না-ই আসে তবে নিবন্ধন করে লাভ কি?
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশে মোট ২৬৮ কোটি ডলারের বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে। বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে বিদেশীরা তুলে নিয়েছেন ৫৩ কোটি ডলারের বিনিয়োগ। এতে প্রকৃত বিদেশী বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ২১৫ কোটি ডলার। এ অর্থের মধ্যে ২৫ শতাংশ বা প্রায় ৫৪ কোটি ডলার নতুন বিনিয়োগ বা মূলধন হিসেবে এসেছে। এ দেশে কর্মরত কোম্পানিগুলো তাদের আয় থেকে পুনর্বিনিয়োগ করেছে ১২৮ কোটি ডলার যা মোট বিনিয়োগের ৬০ শতাংশ। বাকি ৩৩ কোটি ডলার বা ১৫ শতাংশ এসেছে আন্তঃকোম্পানি ঋণ হিসেবে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডার) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, একটি বিনিয়োগ প্রস্তাব এলে সেটি বাস্তব রূপ পেতে কয়েক বছর সময় লাগে। গত বছর যেসব বিনিয়োগ হয়েছে, সেগুলোর নিবন্ধন হয়েছিল কয়েক বছর আগে। তখন নিবন্ধনের পরিমাণই কম ছিল। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে দেশে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ নিবন্ধিত হয়েছে। আগামী কয়েক বছরে এর সুফল পাওয়া যাবে। আশা করছি আগামী বছরগুলোতে বিদেশী বিনিয়োগে একটি ইতিবাচক উন্নতি দেখব আমরা।
তবে বিদেশী বিনিয়োগ উন্নয়নে কৌশল তিনি বর্ণনা করেছেন এনবিআরের এক সভায়। সেখানে তিনি বলেন, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের (এফডিআই) বর্তমান চিত্র কাক্সিক্ষত নয়। গত বছর ভিয়েতনামে ৭০ বিলিয়ন ডলার এফডিআই এসেছে। অথচ বাংলাদেশে এসেছে মাত্র আড়াই বিলিয়ন ডলার। তিনি বলেন, বিনিয়োগ কম আসার কারণ খুঁজে দেখতে হবে। করপোরেট করহার সাড়ে ৪২ শতাংশ। এটি অত্যন্ত বেশি বলে মনে করেন তিনি। এ হার কমানোর প্রস্তাব করেন তিনি।
বিডার তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরের হিসাবে দেশে বছরে হাজার কোটি ডলারের বেশি পরিমাণে বিদেশী বিনিয়োগ নিবন্ধিত হয়েছে। ২০১৬ সালে নিবন্ধিত হয় এক হাজার ১৩২ কোটি ডলারের বিদেশী বিনিয়োগ এবং ২০১৭ সালে তা দাঁড়ায় এক হাজার ৪৬ কোটি ডলার। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে এ পরিমাণ অনেক কম ছিল। ওই দুই বছরে দেশে মাত্র ১৫০ কোটি ডলারের বিদেশী বিনিয়োগ নিবন্ধিত হয়েছিল।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে নানা রকম সুবিধা দেয়ার পরও কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ বাড়ছে না। দেশের অবকাঠামো দুর্বলতা আছে। সরকার তা দূর করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, অনেকেই বাংলাদেশে বিনিয়োগ আনতে চাচ্ছেন। তাদের যথাযথ সুবিধা দিতে হবে। এতে শুরুতে রাজস্ব কিছুটা কমলেও পরে বাড়বে। এ লক্ষ্যে এনবিআরের উদ্যোগে একটি ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন টিম গঠনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের মতামতের ভিত্তিতে রাজস্ব নীতিমালা ঠিক করা হবে।
এদিকে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ডুয়িং বিজনেস বা সহজে ব্যবসা সূচকে উন্নতির পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ২০২১ সালে এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৯টি দেশের মধ্যে কমপক্ষে ৯৯তম অবস্থানে আনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এ সূচকে এখন বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ১৭৭তম। অন্যদিকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। এর মধ্যে সরকারি খাতে ছয়টির কাজ এগোচ্ছে। বেসরকারি খাতে ছয়টি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে চূড়ান্ত লাইসেন্স দেয়া হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement