রমেক হাসপাতালে রোগী ভর্তি সীমিত চিকিৎসকদেরও মিলছে না দেখা
পিপিই নেই চিকিৎসকসহ সেবাদানকারীদের; বিপর্যয়ের শঙ্কা- সরকার মাজহারুল মান্নান রংপুর অফিস
- ২৮ মার্চ ২০২০, ০০:০০
করোনাভাইরাস আতঙ্কে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামছে। দু-একজন যারা আছেন, তারাও চিকিৎসা না পেয়ে হতাশ। উপস্থিতি নেই চিকিৎসকসহ সেবাদানকারীদের। অবশ্য চিকিৎসক ও নার্স-ব্রাদাররা অভিযোগ করছেন, করোনা প্রটেক্ট সরঞ্জামাদি না থাকায় তারা ঝুঁকিতে আছেন। করোনা শনাক্তের কিট না থাকায় চিকিৎসকরা আতঙ্কিতও। ফলে উত্তরের বিভাগীয় নগরীর সর্বোচ্চ এই হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবায় বিপর্যয় নেমে এসেছে। সরেজমিন নয়া দিগন্তের অনুসন্ধানে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, কয়েক দিন আগেও রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আট জেলার রোগীদের ভিড়ে ঠাসা থাকত। সরকারি হিসাবেই দুই হাজারের বেশি রোগী থাকত এখানে। বেড ফাঁকা তো থাকতই না। মেঝেতেও সবসময় ঠাঁই মিলত না রোগীর। এখন সেই হাসপাতালে সুনসান নীরবতা।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ২ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে রয়েছেন হাতে গোনা চারজন রোগী। এর মধ্যে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার কিশোর আরিফুল। জানালেন তিন দিন আগে এসেছেন। ডায়ালাইসিস করার কথা। কিন্তু চিকিৎসক নেই, তাই কিছুই হচ্ছে না। এ নিয়ে আরিফুল ও তার স্বজনরা দুশ্চিন্তায় আছেন। এই ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা: নুরুল ইসলাম জানালেন, করোনা আতঙ্কে রোগী ভর্তি কমে গেছে। তার ওপর চিকিৎসকসহ সেবাদানকারীদেরও চাহিদা অনুযায়ী পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজার নেই। এ অবস্থায় আতঙ্কের মধ্যে থেকেই কাজ করছি।
হাসপাতালটির হৃদরোগ ইউনিটে একই অবস্থা। সেখানে তিনজন রোগীর দেখা মিলল। এর মধ্যে কুড়িগ্রামের একজন চিকিৎসা না পাওয়ায় চলে যাচ্ছিলেন।
ওয়ার্ডের সিনিয়র নার্স লিপি রানী জানালেন, রোগীরাই হাসপাতালে আসছেন না। যারাও আসছেন তারাও দ্রুত চলে যাচ্ছেন। হাসপাতাল থেকে আমাদের নিরাপত্তার জন্য কোনো কিছু দেয়া হয়নি। তাই আমরা নিজেরাই গাউন তৈরি করে কাজ করছি। অপর সিনিয়র নার্স মিনারা বেগম জানালেন, রোগীও নেই, চিকিৎসকও নেই। যে দু-একজন রোগী আছেন তাদের আমরা ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। হাসপাতাল না দেয়ায় আমরা নিজেরাই বাধ্য হয়ে টাকা দিয়ে গাউন বানিয়েছি।
করোনারি কেয়ার ইউনিটের সিসিইউ ও পিসিসিউতেও রোগী নেই। হাতেগোনা যে কয়জন আছেন, তাদের চিকিৎসা নিয়ে আতঙ্কিত খোদ চিকিৎসক-নার্স সবাই।
এই ওয়ার্ডের ইন্টার্নি চিকিৎসক ডা: সানজিদা আখতার তরিনা জানালেন, আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিচ্ছি। আমরা একটা রোগীকে যখন রিসিভ করব তখন থেকেই আমাদের প্রটেকশন প্রয়োজন, তা না হলে আমরাও সংক্রমিত হবো এবং আমাদের দ্বারা অন্য রোগীরা সংক্রমিত হবে। জরুরি ভিত্তিতে তিনি করোনা শনাক্ত কিটসহ অন্যান্য সামগ্রী বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানান।
এই ওয়ার্ডের অ্যাসিস্টেন্স রেজিস্টার ডা: নাজমা বেগম জানান, পর্যাপ্ত পিপিই নেই তার প্রমাণ আমিই নীল গাউন পরে আছি। আমি যখন একজন রোগীর কন্টাক্টে যাচ্ছি, তখন সেখান থেকে বের হয়ে আমার রিইউজ করার জন্য আমাকে সেগুলো ধুয়ে নিতে হচ্ছে। আমরা যারা চিকিৎসক, নার্স, ব্রাদার, আয়াসহ স্বাস্থ্য সেবাদানকারীরা আছি, তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত করোনা প্রটেকশন সামগ্রী প্রয়োজন। তা না হলে চিকিৎসা সেবা দেয়া যাবে না।
এ দিকে হাসপাতালে আইসোলেশন বিভাগের ইনচার্জ হুমায়ুন কবির নোমান জানান, আইসোলেশন বিভাগে চিকিৎসাধীন নীলফামারীর সৈয়দপুরের বাঁশবাড়ির যুবকের করোনা শনাক্ত হয়নি। আইইডিসিআর-এর প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। শনিবার তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডা: মো: ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, জরুরি রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। করোনা আতঙ্কের কারণেই রোগী ভর্তি কমে গেছে। যেখানে আগে ১৭০০ থেকে ১৮০০ নিয়মিত রোগী থাকত সেখানে গত বুধবার রোগী আছে মাত্র ৬৮০ জন। এ ছাড়াও করোনা প্রটেক্ট সামগ্রীর কারণে চিকিৎসকসহ সেবাদানকারীরা আতঙ্কে আছেন। হাসাপাতাল সূত্র জানায়, এক হাজার শয্যার এ হাসপাতালটিতে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার পিপিইসহ অন্যান্য সামগ্রী প্রয়োজন।
এ দিকে রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, এভাবে হাসপাতালগুলো ফাঁকা হয়ে গেলে রোগীদের চিকিৎসা হবে কোথায়, এ নিয়ে নাগরিক সমাজ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকদের কাজে ফেরাতে সব ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। তা না হলে চিকিৎসা সেবায় বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা