২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খেলাধুলা যখন ভয়াবহ এক আসক্তি

- ছবি : সংগৃহীত

একবার কিছু মানুষকে প্রচুর টাকার বিনিময়ে এক মাস দৌড় বন্ধ রাখতে বলা হলো। বিনাশ্রমে টাকা আয়ে রাজি হননি অনেকেই্। এমন আকর্ষণকে ‘আসক্তি’ বলছেন বিজ্ঞানীরা।

মাদকের মতো শরীর চর্চা, এমনকি খেলাধুলাও বড় রকমের আসক্তি হয়ে যেতে পারে এবং সে আসক্তি যে বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে তা প্রথম ধারণা করা হয়েছিল ১৯৭০ সালে।

যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক ফ্রেডেরিক বেকল্যান্ড লক্ষ্য করছিলেন, কিছু মানুষ শরীর ঠিক রাখা ও গভীর ঘুম নিশ্চিত করার তাগিদে প্রতিদিন এতো বেশি দৌড়ান যা অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর। তাদের সামলাতে তাই অভিনব এক পন্থা অবলম্বন করলেন নিউইয়র্কের ডাক্তার। বলা হলো, কেউ এক মাসের জন্য দৌড় বন্ধ রাখলে মোটা অঙ্কের টাকা দেয়া হবে। আশা করা হয়েছিল, সবাই টাকা নিয়ে মহানন্দে এক মাস একটুও না দৌড়ানোর সিদ্ধান্ত নেবেন, কিন্তু ফল হলো উল্টো।

এমন ‘লোভনীয়’ অফার প্রত্যাখ্যান করে বেশির ভাগ দৌড়বিদই জানালেন, কোনো প্রলোভনেই দৌড় বন্ধ রাখবেন না তারা।

ড. ফ্রেডেরিক বেকল্যান্ড কিছু মানুষের দৌড়ের প্রতি এমন তীব্র আকর্ষণের নাম দিয়েছিলেন ‘এক্সারসাইজ অ্যাডিকশন’।

গত কয়েক বছরে সারা বিশ্বে কিছু মানুষের মধ্যে খেলাধুলার প্রতিও এমন আকর্ষণ লক্ষ্য করা গেছে। তাদের এমন প্রবণতাকে বলা হচ্ছে ‘স্পোর্টস অ্যাডিকশন’।

তা খেলাধুলার প্রতি বা খেলাধুলায় উন্নতির জন্য প্রশিক্ষণের প্রতি আকর্ষণ কোন পর্যায়ে গেলে তাকে আসক্তি হিসেবে গণ্য করা যাবে?

সুইজারল্যান্ডের লুসার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ফ্লোরা কলেজ জানান, এর সুনির্দিষ্ট মাত্রা এখনো চূড়ান্ত করা যায়নি। তবে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, কেউ যদি যেকোনো পরিস্থিতি অগ্রাহ্য করে সপ্তাহে সাত ঘণ্টার বেশি প্রশিক্ষণ নেন, প্রাথমিকভাবে তাকে ‘আসক্ত’ হিসেবে গণ্য করা যায়।

তবে সবার ক্ষেত্রে যে সপ্তাহে সাত ঘণ্টার প্রশিক্ষণ মোটেই ‘অস্বাভাবিক’ নয় তা নিজের উদাহরণ দিয়েই বোঝাতে চাইলেন ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত বৈজ্ঞানিক ফ্লোরা কলেজ।

৩৭ বছর বয়সী ফ্লোরা নিজেও ক্রীড়াবিদ। সম্প্রতি নারীদের এক্সট্রি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। এক্সট্রি হলো এক্সট্রিম ট্রায়াথলনের সংক্ষিপ্ত রূপ। কয়েক বছর ভীষণ কঠোর পরিশ্রমের পর তৃতীয় চেষ্টায় ২০২৩-এর আসরে এক্সট্রি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে ফ্লোরা কলেজ যার পর নাই আনন্দিত।

এই শিরোপা জিততে ৩.৮ কিলোমিটার সাঁতার কাটতে হয়েছে তাকে, তারপর সাইকেল চালাতে হয়েছে ৪২.৪ কিলোমিটার এবং সবশেষে অংশ নিতে হয়েছে ম্যারাথনে। তো এমন এক প্রতিযোগিতায় নিজেকে বিশ্বসেরা করতে হলে তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রশিক্ষণ অত্যাবশ্যক। ফ্লোরা কলেজ তাই তখন কোনো সপ্তাহে ২৫ ঘণ্টার বেশিও ব্যয় করেছেন প্রশিক্ষণে!

সাত ঘণ্টা প্রশিক্ষণে ব্যয় করলেই যদি কাউকে ‘আসক্ত’ ভাবা যায়, তাহলে ফ্লোরাকে কেন বলা যাবে না? এক্ষেত্রে তার স্পষ্ট কথা-নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাড়তি শ্রম বিজ্ঞানসম্মত, তবে যেকোনো পরিস্থিতিতে যত বেশি সম্ভব শরীর ও মনের ওপর চাপ বাড়ানো নিঃসন্দেহে এক ধরনের ‘অসুস্থতা’।

তিনি জানান, এমনও দেখা গেছে, কিছু মানুষ ইনজুরি বা প্রচণ্ড জ্বর নিয়েও ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রশিক্ষণ চালিয়ে যান।

ফ্লোরা কলেজ মনে করেন, তাদের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসার ধরণটা কী হতে পারে তা অবশ্য সুনির্দিষ্টভাবে বলেননি তিনি।

চিকিৎসা পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে এখনো অনেক গবেষণা প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, কগনিটিভ বিহ্যাভিওরাল থেরাপি (সিবিটি) অনেক মানুষকে ‘স্পোর্টিং অ্যাডিকশন’ থেকে বাঁচাতে পারে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement

সকল