৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


যুদ্ধ, সংঘাত বাড়লেও অস্ত্র বিক্রি কমেছে

যুদ্ধ, সংঘাত বাড়লেও অস্ত্র বিক্রি কমেছে - ছবি : ডয়চে ভেলে

২০২২ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ অস্ত্র নির্মাতার বিক্রি কমেছে বলে জানিয়েছে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট বা সিপ্রি।

অস্ত্র ও সামরিক সেবা বিক্রি থেকে কোম্পানিগুলো প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার বা ৬৬ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা আয় করেছে। তবে এই অর্থ ২০২১ সালের চেয়ে সাড়ে তিন শতাংশ কম বলে জানিয়েছে সিপ্রি।

২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর ১০০টি শীর্ষ অস্ত্র নির্মাতাদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে সিপ্রি। প্রতিবছরই তাদের আয় বাড়লেও ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো আয় কমেছে বলে সিপ্রি জানিয়েছে।

সিপ্রি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অনেক অস্ত্র নির্মাতা বিভিন্ন কারণে অস্ত্র উৎপাদন বাড়াতে পারেনি। কারণগুলোর মধ্যে আছে জনবল সঙ্কট, দাম বৃদ্ধি, করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থায় সমস্যা ইত্যাদি।

ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহৃত বেশিরভাগ অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সংগ্রহশালা থেকে গেছে। এ কারণে অস্ত্র খাত বেশি আয় করতে পারেনি। এছাড়া বড় অস্ত্র কোম্পানিগুলো বিমান, জাহাজ ও ক্ষেপণাস্ত্রের মতো ব্যয়বহুল অস্ত্র তৈরির দিকে নজর দেয়াও আয় কমার একটি কারণ বলে জানিয়েছে সিপ্রি।

শীর্ষ ১০০ অস্ত্র নির্মাতার তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের ৪২টি কোম্পানি আছে। ২০২২ সালে তারা আয় করেছে ৩০২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২১ সালের চেয়ে সাত দশমিক নয় শতাংশ কম। তবে সিপ্রি ধারনা করছে, দীর্ঘমেয়াদি আদেশগুলো আগামী বছরগুলোতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

শীর্ষ ১০০-তে থাকা ইউরোপের কোম্পানিগুলো ২০২২ সালে ১২১ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা ২০২১ সালের চেয়ে শূণ্য দশমকি নয় শতাংশ বেশি।

জার্মানির চারটি কোম্পানি সিপ্রির তালিকায় স্থান পেয়েছে। ২০২২ সালে তাদের আয় ছিল নয় দশমকি এক বিলিয়ন ডলার। যা ২০২১ সালের চেয়ে এক দশমিক এক শতাংশ বেশি। চারটির মধ্যে একমাত্র ট্যুসেনক্রুপ কোম্পানির আয় ২০২২ সালে কমেছে। তাদের আয় ১৬ শতাংশ কমে এক দশমকি নয় বিলিয়ন ডলার হয়েছে। ২০২১ সালের তুলনায় কম জাহাজ সরবরাহ করায় তাদের আয় কমেছে বলে সিপ্রি জানিয়েছে।

শীর্ষ ১০০-তে জার্মান কোম্পানিগুলোর অবস্থান: রাইনমেটাল (২৮তম), ট্যুসেনক্রুপ (৬২তম), হেনজলট (৬৯তম) ও ডিল (৯৩তম)।

এদিকে, পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে সিপ্রি রাশিয়ার কোম্পানিগুলোর আয়ের বিস্তারিত তথ্য পায়নি। এ কারণে শীর্ষ ১০০-তে রাশিয়ার মাত্র দুটি কোম্পানি জায়গা পেয়েছে। এগুলো হলো রসটেক (দশম) ও ইউনাইটেড শিপবিল্ডিং কর্পোরেশন (৩৬তম)। তাদের আয় ১২ শতাংশ কমে ২০ দশমকি আট বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

সিপ্রির প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক শিয়াও লিয়াং ডিডাব্লিউকে বলেন, রুশ সরকার অস্ত্র কোম্পানিগুলোকে পুরো তথ্য প্রকাশ করতে দেয়নি। কারণ সেক্ষেত্রে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সরকারের বক্তব্য প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।

এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলের ২২টি কোম্পানি শীর্ষ ১০০-তে স্থান পেয়েছে। ২০২২ সালে তাদের আয় তিন দশমিক এক শতাংশ বেড়ে ১৩৪ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। ফলে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এই অঞ্চলের কোম্পানিগুলোর আয় ইউরোপের চেয়ে বেশি হয়েছে।

চীনের আটটি কোম্পানি তালিকায় স্থান পেয়েছে। এরমধ্যে তিনটির অবস্থান শীর্ষ ১০-এ আছে। ২০২২ সালে চীনা কোম্পানিগুলোর আয় ছিল ১০৮ বিলিয়ন ডলার, যা বৈশ্বিক অস্ত্র বিক্রির আয়ের ১৮ শতাংশ। একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই আছে চীন।

তালিকায় থাকা মধ্যপ্রাচ্যের সাত কোম্পানির আয় ছিল ১৭ দশমকি নয় বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি। সিপ্রি বলছে, এই কোম্পানিগুলো প্রযুক্তিগতভাবে সর্বাধুনিক নয় এমন অস্ত্র তৈরিতে পারদর্শী। সে কারণে তারা চাহিদা তৈরি হওয়ার পর দ্রুত তাদের উৎপাদন বাড়াতে পারে। তুরস্কের চারটি কোম্পানির এই সুবিধা থাকায় ২০২২ সালে তাদের আয় ২২ শতাংশ বেড়ে পাঁচ দশমকি পাঁচ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। তুরস্কের বায়কার কোম্পানি তাদের ড্রোনের কারণে প্রথমবারের মতো সিপ্রির তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। ২০২২ সালে তাদের বিক্রি বেড়েছে ৯৪ শতাংশ।

সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement