২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সিজিএস’র ওয়েবিনারে বিশিষ্টজনরা

আগামী নির্বাচনের আগে গুমের ঘটনা আরো ভয়াবহ আকারে বাড়তে পারে

-

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে দেশের বিশিষ্টজনরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা কমে গেছে মনে হলেও এতে আত্মতৃপ্ত হওয়ার সুযোগ নেই। নিষেধাজ্ঞা কিছুটা কমে গেলে এবং আগামী নির্বাচনের আগে আরো ভয়াবহভাবে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন তারা।

আজ সোমবার সকালে অনলাইন মাধ্যম জুমে ‘কোথায় সেই সব মানুষ? বাংলাদেশে গুমের ঘটনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন, এ গবেষণা কার্যক্রমের মূখ্য গবেষক যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সির্টির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ডিস্টিংগুইসড অধ্যাপক ও সিজিএস’র উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. আলী রিয়াজ।

সিজিএস’র নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, বেলার প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ নূর খান প্রমুখ।

মূল প্রবন্ধে ড. আলী রিয়াজ বলেন, পাঁচ সদস্যের গবেষকদল ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন বছরে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ৭১টি গুমের ঘটনা নিয়ে গবেষণা করেন। এসব ঘটনার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তারা প্রকৃতপক্ষেই গুমের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ১১ জন রাজনৈতিক নেতাকর্মী, ১১ জন ব্যবসায়ী, আটজন ছাত্র, পাঁচজন ইসলামিক বক্তা বা মসজিদের ইমাম এবং তিনজন সাংবাদিক রয়েছেন। ৭১ জনের মধ্যে পাঁচজনের লাশ পাওয়া গেছে। ১৬ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। ২৩ জন ফিরে এসেছেন। ২২ জনকে পরবর্তীতে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

এসব গুমের ঘটনার মধ্যে ৫২টির সাথে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ২১টি অর্থাৎ ৪০ দশমিক ৩৮ ভাগ ঘটনায় র‌্যাব, ১৬টি ঘটনায় অর্থাৎ ৩০ দশমিক ৭৬ ভাগ ঘটনায় ডিবি পুলিশ এবং ১১ দশমিক ৫৩ ভাগ ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দেশে গুমগুলোর বেশিরভাগই হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। যারা গুমের শিকার হয়েছেন তাদের কয়েকজন ফিরে এলেও তারা ভয়ে কোনো কথা বলেন না। এভাবে দেশে একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। এ কারণে গত নির্বাচনে যারা দায়িত্বে ছিলেন গুম হওয়ার ভয়ে অনিয়ম দেখেও তারা কোনো বাধা দিতে পারেননি।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কমে গেলেও আগামী নির্বাচনের আগে আবারো গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা বাড়তে পারে। শুধু রাজনৈতিক কারণেই নয় ব্যবসায়িক কারণেও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।

ড. বদিউল আলম বলেন, বর্তমানে অনেকে দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল টাকার মালিক হয়েছেন। তারা নিজস্ব বাহিনী বা আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ভাড়া করে এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে।

তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বর্তমানে যারা গুম করছেন পরিস্থিতি বদলে গেলে তারাও একদিন এ ধরনের ঘটনার শিকার হতে পারেন। এজন্য তাদের উচিত এখনই সংযত হওয়া। একইসাথে দেশের সুশীল সমাজ, মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকদের সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান তিনি।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, গুমের ঘটনাগুলো ঢাকা ও চট্টগ্রামে বেশি ঘটেছে। এতেই বোঝা যায় রাজনৈতিক কারণেই গুমের ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর গুম কমেছে এজন্য আত্মতৃপ্ত হওয়ার কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে গুমের ঘটনা আরো ভয়াবহ আকারে বাড়তে পারে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের কারা ধরে নিয়ে যায়, তা এখন দেশের ১৮ কোটি মানুষই জানে। বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনায় দেখা গেছে প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই একই রকম বিবৃতি। অস্ত্র উদ্ধারে গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির লোকেরা হামলা করলে সে মারা গেছে। তারা যদি এতই আধুনিক হন তাহলে তারা আগে থেকেই কেন জানতে পারেন না কারা হামলা করতে আসছে?

তিনি বলেন, মূলত রাজনৈতিক কারণে বিরোধীমত দমন করতে এবং এক ধরনের ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করতে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। যাতে মানুষ সরকারের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে না পারে।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, মানুষ সাধারণত ডাকাতের মুখে পড়লে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে উল্টো ঘটনা ঘটছে। মানুষ এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে থাকছে, যা দেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি অশনিসংকেত।

নূর খান লিটন বলেন, গবেষণায় সরকারের তৃতীয় মেয়াদের ঘটনা উঠে এসেছে। যখন সরকার কোনো বাধার মুখে নেই। এ সময়ই ৭১ জন গুমের শিকার হয়েছেন। তাহলে এর আগে আরো কত বেশি গুম হয়েছে তা অুনমান করা যায়।

তিনি বলেন, যারা ফিরে এসেছেন তারা কোনো কথা বলেন না। দু’একজন যারা কথা বলেছেন তারা জানিয়েছেন, তাদের এমন একটি জায়গায় রাখা হয়েছিল সেখানে বিমান ও ট্রেনের শব্দ শোনা যায়। তাদের সেখানে একটি গোপন কারাগারে রাখা হয়েছিল।

নূর খান বলেন, শুধু সাদা পোশাকেই, র‌্যাবের পোশাক পরেই গুমের ঘটনা ঘটেছে। অথচ পরে অস্বীকার করা হয়েছে। মানুষ ঠিকই এখন বোঝে। কারণ গুম হওয়ার পর থানায় গেলে পুলিশও মামলা নিতে চায় না। বরং তারাও নানা রকম ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে কিছুটা কমে গেলেও তা শেষ হয়ে যাওয়া নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের আগে দেশে জঙ্গী উদ্ধারের ঘটনা এবং গুমের ঘটনা বাড়তে পারে।’


আরো সংবাদ



premium cement
ইউক্রেনের ১৭টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে রাশিয়া গ্রেফতারের আতঙ্কে নেতানিয়াহু, প্রতিরোধের চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রও চলছে মেসি ঝলক, আবারো জোড়া গোল উল্লাপাড়ায় গাড়িচাপায় অটোভ্যানচালক নিহত থাইল্যান্ড সফর শেষে সোমবার দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী বিপরীত উচ্চারণের ঈদ পুনর্মিলনী ফরিদপুরে ২ ভাইকে পিটিয়ে হত্যায় জড়িতরা অচিরেই গ্রেফতার করা হবে : র‌্যাব মুখোপাত্র ধর্মঘটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পরিবহন বন্ধ, দুর্ভোগে মানুষ আমাদের মূল লক্ষ্য মানুষকে জাগিয়ে তোলা : গাজা ইস্যুতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গণতন্ত্রকে চিরস্থায়ীভাবে বাকশালে পরিণত করতেই খালেদা জিয়াকে বন্দী রেখেছে সরকার : রিজভী বন্যার আশঙ্কায় সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার কৃষকরা

সকল