৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সেনা প্রত্যাহার করছে মালয়েশিয়া, কী করবে সৌদি আরব?

সেনা প্রত্যাহার করছে মালয়েশিয়া, কী করবে সৌদি আরব? - সংগৃহীত

অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে মধ্যপ্রাচ্যে। বিশেষ করে সৌদির সাথে মুসলিম দেশগুলোর সম্পর্ক অবনতি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিকে কঠিন বার্তা দিয়েছে মালয়েশিয়া।

মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ সাবু বলেছেন, সৌদিতে মোতায়েন তার দেশের সেনারা ইয়েমেন যুদ্ধে বা আইএস- এর বিরুদ্ধে অভিযানে অংশ নেয়নি। মালয়েশিয়া সবসময় নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করেছে। এখানে বিশ্বের প্রধান কোনো শক্তির রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতি আনুকূল্য নেই। 

তিনি বলেন, কেন আমরা ইয়েমেনের মতো একটি মুসলিম দেশের ওপর হামলায় জড়িত থাকব? এই ধরণের সহিংসতায় কে জড়িত থাকতে চায়? ইয়েমেন সংঘাতে জড়িত হওয়ার কারণে মালয়েশিয়ার ক্লিন ইমেজ ও নিরপেক্ষ নীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আগে মালয়েশিয়া কখনো রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে কোনো পরাশক্তির পক্ষ নেয়নি। অথচ এই ঘটনা মালয়েশিয়ার ভূমিকাকে মধ্যপ্রাচ্যে কালিমালিপ্ত ও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

সৌদি আরবে মোতায়েন মালয়েশীয় সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহারের কথা বিবেচনা করছে কুয়ালা লামপুর। কুয়ালা লামপুর জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম)-এর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছে। এ জোটের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছে মালয়েশিয়া।

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে ২০১৩ সালের নির্বাচনে জিতিয়ে আনতে ৬৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার দিয়েছিল সৌদি আরব। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৫ হাজার ৭৫৫ কোটি ৫২ লাখ ৯৩ হাজার ৮৫০ টাকা। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে মালয়েশিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল মোহামেদ আপানদি এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, এই অর্থ ছিল মূলত সৌদি অনুদান।

মূলত মালয়েশিয়ায় মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রভাব ঠেকাতেই নাজিব রাজাককে এই অর্থ দিয়েছিল সৌদি আরব। তৎকালীন সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহ অর্থ প্রদানের বিষয়টি অনুমোদন করেছিলেন।

মালয়েশিয়ার বৃহত্তম ইসলামপন্থী দল প্যান-মালয়েশিয়ান ইসলামিক পার্টি (পিএএস)। এ দলটির উদ্যোক্তারা মুসলিম ব্রাদারহুডের দর্শন দ্বারা অনুপ্রাণিত। ফলে যে কোনওভাবে পিএএস-এর প্রভাব কমাতে নাজিব রাজাকের দ্বারস্থ হয় সৌদি সরকার।

তবে মালয়েশিয়ার গত নির্বাচনে নাজিব রাজাকের দল পরাজিত হয়। আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোটের প্রধানমন্ত্রী হন আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার মাহাথির মোহাম্মদ। নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের চার মাসেরও কম সময়ের মাথায় সৌদি আরব থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা এলো।

জনগণের কাছ থেকে চাঁদা তুলে বৈদেশিক ঋণ শোধ করছে মাহাথির!

চাঁদা তুলে মালয়েশিয়ার ঋণ শোধ করছে সেখানকার জনগণ। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের ডাকে সাড়া দিয়ে এ কাজে শামিল হলেন তারা। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ২০ লাখ ডলার গণতহবিল গঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে।

বৈদেশিক ঋণ শোধে ২৭ বছর বয়সী এক মালয়েশীয় দেশপ্রেমিক নাগরিকের হাত ধরে মালয়েশিয়া সরকারের এ উদ্যোগ শুরু হয়। প্রথমে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তহবিল গঠন শুরু করেন সেই ব্যক্তি।

এরপরই দেশটির অর্থমন্ত্রী লিম গুয়ান ইং বলেন, মালয়েশিয়ার বৈদেশিক ঋণের বোঝা কমাতে দেশের নাগরিকেরা তাদের আয় থেকে অর্থ দিতে চায়। এরপর গণতহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন তিনি।

১ ট্রিলিয়ন রিঙ্গিতেরও বেশি ঋণ রয়েছে মালয়েশিয়ার। দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পর গত ২১ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রথমবার আলোচনায় এ তথ্য জানান মাহাথির মোহাম্মদ।

দেশের এ অবস্থার জন্য দুর্নীতি মামলায় তদন্তাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের নেতৃত্বে থাকা প্রশাসনকে দায়ি করেছেন তিনি। যাইহোক, বৈদেশিক ঋণ শোধে মালয়েশিয়ার এ ‘গণতহবিল মডেল’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছে।

মাহাথির মোহাম্মদ আসলেই অনন্য, আসলেই অসাধারণ। ড. মাহাথির বিন মোহাম্মদ ৯২ বছর বয়সেও ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সরকারি দায়িত্ব নিয়ে। এতে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ঘুম না হওয়ায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন বলে উদ্বিগ্ন তার স্ত্রী ড. সিতি হাসমাহ।

ড. সিতি ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, মাহাথির যখন ঘুমাতে যাওয়ার কথা সে সময়ও তিনি সরকারি ডকুমেন্ট নিয়ে বসে থাকছেন। এক রাতে তাকে আমি ভোর ৪/৫টা পর্যন্ত এমন ডকুমেন্ট যাচাই করতে দেখেছি। তিনি ওই রাতে ২০০ ডকুমেন্ট যাচাই করেছেন। আবার সকাল ৭টায় তিনি অফিসে গিয়ে হাজির। এ জন্য তার স্বাস্থ্য নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।

কর্মব্যস্ত থাকতে পারেন বলেই মাহাথির অনন্য। কাজে ডুবে থাকেন বলে তার স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে স্বজনেরা দুশ্চিন্তা করেন। টাইম ম্যাগাজিন একবার তার অফিসে আসার সময় রেকর্ড করেছিল। পরপর পাঁচ দিন তার অফিসে প্রবেশের সময় ছিল সকাল ৭:৫৭, ৭:৫৬, ৭:৫৭, ৭:৫৯, ৭:৫৭। কর্মব্যস্ত মাহাথিরের জীবনের স‍ার্থকতা তিনি দেশ ও জাতিকে কিছু দিতে পেরেছেন;  অর্থবহ কাজে ব্যস্ত থেকে সময়কে কাজে লাগাতে পেরেই তিনি সুখী।

মাহাথির বলেছেন- আমাদের ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করতে হবে। পেছনের আবর্জনা ঘাঁটার সময় আমাদের হাতে নেই। আমি কোনো প্রতিশোধ নিতে চাই না। জনগণকে নির্যাতন করার জন্য তৈরি করা কোনো আইন রাখা হবে না। আমরা সংবিধান সমুন্নত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাই। আইনের শাসনমতে দেশ চালাতে চাই।

তিনি আরো বলেছেন- খান কম, অনুশীলন করুন বেশি, বই পড়ুন বেশি। প্রত্যেকের নিজ পরিবার একটি নিরাপদ জায়গা - যা আমাদের এই জটিল সমাজে স্থিরতা আনে। সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা হলে ধর্ম কখনো অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য বাধা হতে পারে না। চিকিৎসা বিদ্যায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকের জন্য রাজনীতি একটি ভালো পেশা। একজন ডাক্তার রোগীকে পর্যবেক্ষণ করেন, স্বাস্থ্যগত ইতিহাস রেকর্ড করেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন, ল্যাব পরীক্ষা করেন এবং চূড়ান্তভাবে রোগ নির্ণয় করেন। এ প্রক্রিয়াটি রাজনীতির মতই।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল