০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫
`


প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপে সুপ্রিম কোর্ট বারে পুনরায় নির্বাচন দাবি

সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার মো: রুহুল কুদ্দুস কাজল - ফাইল ছবি

ভোট গণনা নিয়ে মারামারি, হট্টগোল ও নানা নাটকীয়তার পর ৪৬ ঘণ্টা পর ব্যাপক পুলিশী নিরাপত্তার মধ্যে ভোট গণণার প্রেক্ষাপটে প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপে একটি স্বাধীন নির্বাচন সাব-কমিটি গঠন করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পুনরায় নির্বাচন চান বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার মো: রুহুল কুদ্দুস কাজল।

শনিবার (৯ মার্চ) গণমাধ্যমে দেয়া বিবৃতিতে ব্যারিস্টার মো: রুহুল কুদ্দুস কাজল এ দাবি জানান।

লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় টিকে থাকতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যেসব উপায় অবলম্বন করে থাকে তার সবকিছুই তারা সদ্যসমাপ্ত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে প্রয়োগ করেছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সংগঠনও তাদের কালো থাবা থেকে নিষ্কৃতি পেলো না। এ পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি, মাননীয় প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপে একটি স্বাধীন নির্বাচন সাব-কমিটি গঠন করে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠান জরুরি। তা নাহলে বিচার বিভাগের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতা বাড়তে থাকবে।

বর্তমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অবৈধ দখলদার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। এতদসত্ত্বেও আমাদের প্রত্যাশা ছিল, বিগত দুই বছরের কলঙ্কজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি এবছর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে ঘটবে না। এমনকি অবৈধ দখলদাররাও অবলীলায় নিজেদের কৃতকর্মের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে এবছর অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে নানাভাবে প্রার্থীদেরকে আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু ওই যে চিরাচরিত প্রবাদ- ‘চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী’ এটি আওয়ামী লীগের মজ্জাগত।

গত ৬ মার্চ ভোট গ্রহণের প্রথম দিন। ভোট গ্রহণের শুরুতেই বিতর্কিত ব্যক্তিদের দিয়ে ভোট গ্রহণ শুরু করার চেষ্টা করলে প্রার্থীরা প্রতিবাদ জানান। কিন্তু প্রার্থীদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও তাদেরকে দিয়ে নির্বাচনী কাজ শুরু করেন। যার ফলাফল একেবারে প্রথম থেকেই দৃশ্যমান হতে থাকে। ভোটার স্লিপ দেয়া, ব্যালট প্রদান ও ব্যালট বাক্স ভর্তির সব কাজে আওয়ামীলীগের কর্মিরা নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। ভোটার নন এমন ব্যক্তিদেরকে ব্যালট দিয়ে দেন। একই ব্যক্তিকে একাধিক ব্যালট সরবরাহ করেন। অডিটরিয়ামের পিছনের গেট দিয়ে অবৈধ ব্যালট বাক্সে ঢুকানো হয়। নির্বাচন সাব-কমিটির আমাদের দলীয় কো-অপ্ট সদস্যরা প্রতিবাদ করলে সরকারি দলের রাজনৈতিক কর্মীরা মারমুখি আচরণ করে।

নির্বাচন চলাকালে প্রার্থীরা অডিটরিয়ামের বাইরে অবস্থান করায় ভিতরের অবস্থা তাৎক্ষণিকভাবে অবলোকন করতে পারেননি। কিন্তু প্রথম দিনের মধ্যাহ্ন বিরতির সময়ে আমাদের প্রার্থীরা নির্বাচন সাব-কমিটির প্রধানের কাছে অভিযোগ করলে তিনি অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন এবং এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর যেন না ঘটে সেই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। নির্বাচনের দু’দিন আমি, সম্পাদক প্রার্থী মিডিয়ার সামনে ভোট গ্রহণের নানা অনিয়ম এবং ক্ষমতাশীল রাজনৈতিক দলের দাপটের বিষয়টি মিডিয়ার সামনে একাধিকবার উপস্থাপন করি। এমন অবৈধ প্রক্রিয়ায় দু'দিনের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। নির্বাচন সাব-কমিটির ঘোষণা অনুযায়ী দু’দিনে ৫৩১৯ ভোট কাস্টিং হয়।

নির্বাচন সাব-কমিটির পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচন শেষ হওয়ার সাথে ব্যালট পেপার গোছানো (সর্টিং) ও ভোট গণনা শুরুর কথা ছিল। রাত ১১টার পরে সমিতির অডিটরিয়ামে প্রথমে সদস্য পদের ব্যালট বাক্স উন্মুক্ত করে সর্টিং শুরু হয়। এ সময়ই ভোট জালিয়াতি ও নানা অনিয়মের বিষয়টি প্রমান হতে শুরু করে। একাধিক ব্যালট একত্রে ভাজ করা অবস্থায় পাওয়া যায়। সদস্য পদের হলুদ রঙের ব্যালটের সাথে অফিস বিয়ারারের গোলাপী রঙের শতাধিক ব্যালট পাওয়া যায়। ব্যালট গণনাকালে সদস্যপদে ১৫০টি অতিরিক্ত ব্যালট পাওয়া যায়।
অডিটরিয়ামে উপস্থিত আমি, সম্পাদক প্রার্থী মো: রুহুল কুদ্দুস (কাজল), নাহিদ সুলতানা যুথী ও ফরহাদ উদ্দিন ভূইয়া তাৎক্ষণিকভাবে ঘোষিত ভোটের অতিরিক্ত ১৫০টি ব্যালটের অস্তিত্ব কিভাবে এলো তা নির্বাচন সাব-কমিটির প্রধানের কাছে জানতে চাই। তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এ অবস্থায় আমরা তিনজন সম্পাদক প্রার্থী রাত ১টা ৮ মিনিটে নির্বাচন সাব-কমিটি আহ্বায়ক বরাবরে যৌথভাবে এক লিখিত আবেদন করে দফতরে রক্ষিত ব্যালট বাক্সের মুড়ির সাথে ব্যালট পেপার মিলিয়ে ভুয়া ব্যালট বাতিল করে প্রকৃত ব্যালট গণনাপূর্বক ফলাফল ঘোষণার দাবি জানাই (কপি সংযুক্ত)। নির্বাচন সাব-কমিটি প্রধান বিষয়টি আমলে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে পুনরায় আশ্বস্ত করেন।

উল্লেখ্য, নির্বাচনের দু’দিন ব্যালট বাক্সে ব্যালট ঢুকানোর সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল চিহ্নিত একজন সরকারি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল। আপত্তিকৃত ১৯ জন নির্বাচন সাব-কমিটির সদস্যের মধ্যে তিনি অন্যতম। তার বিরুদ্ধে একাধিকবার আপত্তি করলেও তাকে তার অপকর্ম থেকে সরানো যায়নি।

অফিস বিয়ারার পদের গোলাপী রঙের ব্যালট সর্টিং করার সময় ধরা পড়ে আরেক ভয়াবহ ঘটনা। তিনটি করে ব্যালট একত্রে ভাজ করা অবস্থায়ও পাওয়া যায়। নির্বাচন সাব-কমিটির প্রধান এমন ব্যালটগুলো পাওয়া গেলে তার কাছে জমা দেয়ার জন্য বলেন। কিন্তু যেহেতু সর্টিংয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ৩০ জন সদস্যের অধিকাংশই সরকারি দলের রাজনৈতিক কর্মী ও বেতনভুক্ত আইন কর্মকর্তা, তাদের হাতে এমনটি ধরা পড়লেও তাদের অ্যাসাইনমেন্ট অনুযায়ী সেগুলো উল্লেখ করেননি।

আমাদের দলীয় দু’জন নারী সহকর্মী একাধিকবার এমন ব্যালটের সন্ধান পান এবং নির্বাচন সাব-কমিটি প্রধানের কাছে জমা প্রদান করেন। এমন প্রতিটি ব্যালটেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের প্যানেলে ভোট দেয়া ছিল। এছাড়া অফিস বিয়ারার পদে ঘোষিত ভোটের অতিরিক্ত ৪০টি ব্যালট পাওয়া যায়। একথা সহজে বোধগম্য যে ব্যালট জালিয়াতি করে ঘোষিত ভোটের অতিরিক্ত ভোট ব্যালট বাক্সে ঢুকানো হয়েছে। এছাড়া সদস্য পদ এবং অফিস বিয়ারার পদের ব্যালটের পার্থক্যও প্রমাণ করে যে নির্বাচনে কারচুপি আর ক্ষমতাসীনদের বিজয়ী করার জন্যই এ আয়োজন।

নানা নাটকীয়তার পর এক পর্যায়ে দু’টি টেবিলে ভোট গণনা শুরু হয়। কিন্তু আওয়ামী সমর্থক সম্পাদক পদপ্রার্থী জনাব শাহ মঞ্জুরুল হকসহ আওয়ামী লীগ প্যানেলের সদস্যরা এতে আপত্তি জানান এবং পরদিন ভোট গণনার জন্য দাবি জানান। জনাব শাহ মঞ্জুরুল হক নিজেও ভোট গণনা বন্ধের দাবি জানান। বাকি তিনজন সম্পাদক প্রার্থী পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণার জন্য নির্বাচন সাব-কমিটির প্রধানের কাছে অনুরোধ জানাতে থাকেন। এক পর্যায়ে ক্ষমতাসীন দলের কিছু সংখ্যক বহিরাগত অডিটরিয়ামে প্রবেশ করে এবং সেখানে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। তারা সেখানে উপস্থিত আইনজীবীদের মারধর করে।

কিছুক্ষণ পর সাব-কমিটি প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আবুল খায়ের সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগ নেত্রী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথীকে বিজয়ী ঘোষণা করে অডিটরিয়াম ত্যাগ করেন। ব্যালট পেপার সম্বলিত বাক্সগুলো বহিরাগতরা অডিটরিয়াম থেকে বাইরে বের করে নিয়ে চলে যায়। এ ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে ৮ মার্চ সকাল ৮টার দিকে আমাদের দলীয় প্রার্থীরা অডিটরিয়াম ছেড়ে চলে আসেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাচন নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা মিডিয়ার সামনে প্রকাশ করেন।

অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় এই যে, ৮ মার্চ ভোরবেলা অডিটরিয়ামের ভিতরে ঘটা নৈরাজ্যকর ঘটনা আওয়ামী লীগের দু’জন প্রার্থী জনাব শাহ মঞ্জুরুল হক ও নাহিদ সুলতানা যুথী’র সমর্থকদের মধ্যে সংঘটিত হলেও উক্ত ঘটনায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী, আমি মো: রুহুল কুদ্দুস (কাজল) এবং আরো তিনজন আইনজীবী নেতাকে আসামি করে শাহবাগ থানায় একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের বাড়িতে/চেম্বারে হানা দেয়া হচ্ছে। এমন আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে যে কোনো আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারছেন না।

এমন একটা ভয়াবহ পরিস্থিতিতে গত ২০২২ এবং ২০২৩ সালের সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচন ও সদ্যসমাপ্ত ঢাকা আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের ন্যায় নিজেদের পছন্দমতো ব্যক্তিদের নাম বিজয়ী ঘোষণা করা হতে পারে। অথচ ইতোমধ্যেই সম্পাদক পদে ভোট গণনা ছাড়াই আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থীকে সম্পাদক ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন সাব-কমিটির প্রধান চাপে পড়ে উক্ত ঘোষণা দিয়েছেন মর্মে একটি বিবৃতি আমার দৃষ্টিতে এসেছে। আমার আশঙ্কা পাল্টা চাপে তিনি এবার আওয়ামী লীগের অপর প্রার্থীকে সম্পাদক পদে নির্বাচিত ঘোষণা করতে পারেন। এরকম মেরুদণ্ডহীন ও দলকানা ব্যক্তিদের দ্বারা যেকোনো কিছু করা সম্ভব।”


আরো সংবাদ



premium cement