৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


যেতে পেরেছে দ্বিগুণ ভাড়ায় ফিরতে তারও বেশি

ছুটি শেষে রাজধানীতে ফিরছে মানুষ। কমলাপুর রেলস্টেশনের চিত্র : নয়া দিগন্ত -

বাড়ি গিয়েছি বাড়তি ভাড়া দিয়ে। তখন বাড়ি যাওয়ার একটা টান ছিল, পকেটেও পয়সা ছিল। দ্বিগুণ ভাড়া গুনতেও কোনো সমস্যা হয়নি। এখন কি করব, পকেট তো খালি! এখনো সেই দ্বিগুণ ভাড়াই চাচ্ছে বাস কাউন্টারগুলো। প্রশাসনের সব বুলি ফাঁকাই প্রমাণ হলো। কথাগুলো বলেছেন নাসির উদ্দিন। ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলেন তিনি। এখন ঢাকায় ফিরবেন। কিন্তু বাসের ভাড়া তো তার নাগালের মধ্যে নেই।
এমন হাজার হাজার নাসির উদ্দিন এখন ঢাকার পথে। বাড়তি ভাড়া গুনে নাড়ির টানে বাড়ি গিয়েছিলেন। আবার সেই বাড়তি ভাড়ায় ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে তাদের। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল এবার কেউ বাড়তি ভাড়া আদায় করতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কোন কোন এলাকায় মাইকিং করে বাড়তি ভাড়ায় যাত্রী বহন করা হচ্ছে। যাত্রীরাও বাধ্য হচ্ছেন বাড়তি ভাড়া গুনতে। ঈদের আগে ঢাকায় দু-একটি পরিবহন কাউন্টারে অভিযান চালানো হলেও যাত্রীরা বলেছেন, ‘ওসব আইওয়াশ’। একটি কাউন্টারে অভিযান চলেছে, বাকি শত শত কাউন্টারে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়েছে।
যাত্রী নাসির উদ্দিন জানালেন, বরিশালের নথুল্লাবাদ থেকে যতগুলো পরিবহন ঢাকায় আসছে সবগুলোতেই বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে এবং তা দ্বিগুণেরও বেশি। তিনি জানান, স্বাভাবিক সময়ে ওই টার্মিনাল থেকে ঢাকার ভাড়া সাড়ে ৩০০ টাকা। এখন আদায় করা হচ্ছে ৮০০ টাকা। মানুষ ন্যায্য দামে টিকিটের জন্য এ কাউন্টার থেকে ও কাউন্টারে ঘুরছেন। কিন্তু সব কাউন্টারের অবস্থাই এক।

উজিরপুরের শানুহার কাউন্টার থেকে ঢাকার ভাড়া আড়াই শ’ টাকা। অথচ এই ঈদ মৌসুমে সেই ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা। কোনো পরিবহনই ন্যায্য ভাড়া আদায় করছে না। কয়েকজন যাত্রী জানান, এ নিয়ে তারা পুলিশকে অবহিত করেছেন। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অথচ পুলিশের শীর্ষ কর্তারা বলেছিলেন, বাড়তি ভাড়া আদায় করলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঝালকাঠীর রাজাপুর থেকে ঢাকার সায়েদাবাদ পর্যন্ত সকল পরিবহনের ভাড়া ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা ছিল। এখন কোনো কোনো পরিবহন দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া আদায় করছে। শাকুরার আগের ভাড়া ছিল ৬০০ টাকা। ঈদকে সামনে রেখে এখন ভাড়া নির্ধারণ করেছে ৯০০-১০০০ টাকা। লাবিবা পরিবহনে ভাড়া ছিল ৫৫০ টাকা। এখন ভাড়া আদায় হচ্ছে ১১০০ টাকা। বরিশাল এক্সপ্রেসের ভাড়া ছিল ৬০০ টাকা। এখন নির্ধারণ করেছে ৯৫০ টাকা। যমুনা লাইনের ভাড়া ছিল ৬০০ টাকা। এখন আদায় হচ্ছে ১২০০ টাকা। ইসলাম পরিবহনের ভাড়া ছিল ৬০০ টাকা। এখন আদায় হচ্ছে ১২০০ টাকা। ওই এলাকার কাউন্টার মালিকরা জানান, তারা পড়েছেন বিড়ম্বনার মধ্যে। ভাড়া বাড়িয়েছে কোম্পানি। কিন্তু কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে তাদেরকে। হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা। অথচ ৫০০-৬০০ টাকায় টিকিট কেটেও তারা যে কমিশন পেতেন; এখন ভাড়া দ্বিগুণ হয়েছে , কিন্তু তাদের কমিশন বাড়েনি।
ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলেছেন, এমন কোনো পরিবহন নেই যেখানে ভাড়া বাড়েনি। কেউ কম, আর কেউ বেশি। অজুহাত দিচ্ছে যাত্রী নিয়ে গেলে খালি ফিরে আসতে হয়। কিন্তু এ কথা মোটেও সঠিক নয় বলে জানালেন যাত্রীরা। যাত্রী যেমন যাচ্ছে; তেমনি আসছে। বাস কখনোই খালি থাকছে না।


আরো সংবাদ



premium cement