০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


শেয়ারবাজারে ৩০০ কোটি টাকার নিচে লেনদেন

বিদেশী বিনিয়োগে ভাটা
-


দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ অব্যাহতভাবে কমছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের পুঁজিবাজারে এক টাকাও বিদেশী বিনিয়োগ আসেনি। উল্টো অতীতে যে বিনিয়োগ এসেছিল, সেগুলোও বিক্রি করে দিয়ে টাকা দেশে নিয়ে যাচ্ছেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজারের যে বেহাল দশা তার জন্য বিদেশী বিনিয়োগের এই করুণ দশাও একটি কারণ বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। এ দিকে শেয়ারবাজারে লেনদেন তিন শ’ কোটি টাকার নিচে নেমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নিট বিনিয়োগের (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) পরিমাণ ছিল ৩৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এর পরের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এটি কমে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলারে নেমে আসে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা আরো কমে নেমে আসে মাত্র চার কোটি ৪০ লাখ ডলারে। ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে নিট বিদেশী বিনিয়োগ ২৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার ঋণাত্মক হয়। অর্থাৎ ওই বছরে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে যত বিদেশী বিনিয়োগ এসেছিল, তার থেকে প্রায় ২৭ কোটি ডলার বেশি চলে যায়।


গত ২০২১-২২ অর্থবছরেও সেই ঋণাত্মক ধারা অব্যাহত থাকে; বছর শেষে নিট বিদেশী বিনিয়োগ ২০ কোটি ডলারের মতো ঋণাত্মক হয়। সর্বশেষ চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) পুঁজিবাজারে নিট বিদেশী বিনিয়োগ চার কোটি ৩০ লাখ ডলার ঋণাত্মক হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই তথ্যই বলছে, গত আড়াই বছরে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে নতুন কোনো বিদেশী বিনিয়োগ আসেনি।
দেশে সার্বিক বিদেশী বিনিয়োগ ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। দুই বছরের করোনা মহামারীর পর এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো হোঁচট খেলেও বিদেশী বিনিয়োগ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ৩০৬ কোটি ৬০ লাখ (৩.০৭ বিলিয়ন) ডলারের সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে দেশে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরের এই সাত মাসে ২৭৩ কোটি (২.৭৩ বিলিয়ন) ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। এই সাত মাসে দেশে নিট এফডিআই বেড়েছে ৪ দশমিক ১১ শতাংশ। ১৩৪ কোটি ৩০ লাখ ডলারের নিট এফডিআই এসেছে দেশে। গত বছরের এই সময়ে এসেছিল ১২৯ কোটি ডলার।


গত ২০২১-২২ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৪৭০ কোটি ৮০ লাখ (৪.৭১ বিলিয়ন) ডলারের এফডিআই এসেছিল দেশে, যা ছিল আগের বছরের (২০২০-২১) চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি। নিট এফডিআই বেড়েছিল আরো বেশি, ৬১ শতাংশ। গত অর্থবছরে নিট এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। তার আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৩৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। নিট এফডিআই এসেছিল ১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার।
এ দিকে বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল দিনভর সূচক ওঠানামার মধ্যদিয়ে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেনের সমাপ্তি হয়েছে। এ দিন খাদ্য, আইটি ও বীমা খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক বেড়েছে ৮ পয়েন্ট। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক বেড়েছে ২৬ পয়েন্ট।


সূচকের পাশাপাশি দাম কমার বিপরীতে বেড়েছে দ্বিগুণ কোম্পানির শেয়ার। কিন্তু লেনদেন নেমে এসেছে তলানিতে। এ দিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে মাত্র ২৮৬ কোটি টাকা। আর সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি টাকা অর্থাৎ দুই পুঁজিবাজারে মিলেও লেনদেন হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা নিচে, যা গত এক মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনেদেন। এর আগের গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ২৬১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আস্থাহীনতায় ভয়াবহ তারল্য সঙ্কটের মুখে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। এ কারণে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৭০০ কোটি টাকার লেনদেন কমে ৩০০ কোটি টাকার নিচে চলে এসেছে।


ডিএসইর তথ্যমতে, শেয়ার বিক্রির চাপের মধ্যদিয়ে আজ বৃহস্পতিবার দিনের লেনদেন শুরু হয়। পতনের ধারায় লেনদেন হয় সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এরপর আইটি, খাদ্য এবং বীমা খাতের শেয়ারের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে বাড়তে শুরু করে সূচক, যা অব্যাহত ছিল দিনের লেনদেনের শেষ সময় পর্যন্ত।
দিন শেষে ডিএসইতে মোট চার কোটি ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯৬৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এতে লেনদেন হয়েছে ২৮৬ কোটি ৯৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩২৮ কোটি ৪৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ দিনের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে।
এ দিন প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৮ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২১৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসইর অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক দশমিক ৭৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৫৩ পয়েন্টে আর ডিএসই ৩০ সূচক ২ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২১৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইতে মোট ৩০৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৭৪টি কোম্পানির। দাম কমেছে ২৪টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২০৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের দর।


এ দিন ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে ছিল রয়েল টিউলিপ সি পার্লের শেয়ার। এরপর সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের শেয়ার। আর তৃতীয় স্থানে ছিল আরডি ফুডের শেয়ার। তারপর যথাক্রমে রয়েছে শাইনপুকুর সিরামিক, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, রূপালী লাইফ, আলহাজ টেক্সটাইল, জেনেক্স ইনফোসিস, ফাইন ফুডস লিমিটেডে এবং অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ার।
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৪ পয়েন্ট বেড়ে ১৮ হাজার ৩৭৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
গতকাল সিএসইতে ১১৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৪২টির, কমেছে আটটির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৫টির। দিন শেষে সিএসইতে ১২ কোটি ১৫ লাখ ৪০ হাজার ৪৭৬ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement