০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


তিন হত্যা মামলায় ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড : যাবজ্জীবন ৮

-

কক্সবাজার, রংপুর ও মাগুরায় পৃথক তিন হত্যা মামলায় আদালত সাতজনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে কক্সবাজার ছাত্র হত্যায় চারজন, রংপুরে অটোচালক হত্যায় দুইজন এবং মাগুরায় ছাত্র হত্যায় একজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এ তিন মামলায় আরো আটজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।


কক্সবাজারে ফয়সাল হত্যা মামলায় ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড ২ জনের যাবজ্জীবন
কক্সবাজার অফিস জানান, কক্সবাজার সদর উপজেলার চাঞ্চল্যকর জিয়া উদ্দিন ফয়সাল হত্যা মামলায় চারজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং দু’জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন দায়রা জজ আদালত।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হচ্ছে- কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের পূর্ব মাছুয়াখালী গ্রামের নুরুচ্ছফার ছেলে রেজাউল করিম প্রকাশ বুইল্ল্যানির ছেলে (২০), মৃত আমান উল্লাহ'র ছেলে নুরুল হক (২২), মৃত অছিউর রহমানের ছেলে রমজান আলী (২৪) এবং মো: ইসহাকের ছেলে রুবেল (২০)। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হচ্ছে- একই এলাকার নুরুল আবছারের ছেলে শাহীন উদ্দিন (১৯) এবং দুদু মিয়ার ছেলে মনি আলম (১৯)। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল গতকাল বুধবার সকালে এ রায় ঘোষণা করেন।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস এম আব্বাস উদ্দিন এ তথ্য জানিয়েছেন। কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের পূর্ব মাছুয়াখালী গ্রামের মো: নুরুল আনোয়ারের ছেলে, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র জিয়া উদ্দিন তার এলাকার মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ ও বিক্রিতে বাধা দিত। এতে মাদক কারবারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ২০১৬ সালের ১৬ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে পিএমখালী ইউনিয়নের পূর্ব মাছুয়াখালী জামে মসজিদের উত্তর পাশে মাদক ব্যবসায়ীরা সংঘবদ্ধভাবে জিয়া উদ্দিন ফয়সালের ওপর সশস্ত্র হামলা করে। এ হামলায় জিয়া উদ্দিন ফয়সাল গুরুতর আহত হলে তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক জিয়া উদ্দিন ফয়সালকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় জিয়া উদ্দিন ফয়সালের পিতা মো: নুরুল আনোয়ার বাদি হয়ে ফৌজদারী দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় ৯ জনকে আসামি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
বিচার ও রায় : কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি ও রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, এ হত্যা মামলাটি তদন্ত করে তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও), কক্সবাজার সদর মডেল থানার তৎকালীন এসআই কুতুব উদ্দিন খান ২০১৭ সালের ৪ জুলাই আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলাটি ২০১৮ সালের ১ মার্চ চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়। চার্জশিটে এজাহারের ৯ আসামির মধ্যে ছয়জনকে প্রাথমিকভাবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
মামলাটিতে ১২ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামিদের পক্ষে সাক্ষীদের জেরা, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, সুরতহাল প্রতিবেদন, ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদন পর্যালোচনা, আলামত প্রদর্শন, আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্কসহ বিচারের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল গতকাল বুধবার উপরোক্ত সাজা প্রদান করেন।
রায়ের বিষয়ে পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির সাক্ষী, আলামত প্রদর্শনসহ বিচারের জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু আদালতে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে রায় ঘোষণা করতে পেরেছেন। এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেন।


রংপুরে অটো চালককে হত্যা মামলায় ২ জনের ফাঁসি
রংপুর অফিস জানায়, রংপুরের গঙ্গাচড়ায় অটো রিকশা চালককে হত্যা মামলায় দুইজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার বিকেলে রংপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক তারিক হোসেন এই আদেশ দেন।
সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী নয়নুর রহমান টফি জানান, রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার নেকিরহাট গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে আবুল কাশেমের অটো রিকশা চার ব্যক্তি ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট ভাড়া নিয়ে গঙ্গাচড়া উপজেলার খলেয়া নামক স্থানে যায়। ওই এলাকার জনৈক ডা: নুর আলমের বাড়ির পাশে অটো রিকশা চালক আবুল কালাম আজাদকে অস্ত্রের মুখে ধানক্ষেতে নিয়ে গিয়ে ছোড়া দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে অটো রিকশা ছিনতাই করে। এ ঘটনার নিহত অটো চালক আবুল কালাম আজাদের মা মোখলেস বেগম বাদি হয়ে গঙ্গাচড়া থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ রংপুরের সদর উপজেলার গোকলপুর ধনিপাড়া গ্রামের মফিজুল ইসলামের দুই ছেলে সফিকুল ইসলাম ও সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুই আসামি অটো চালককে হত্যা করে অটো ছিনতাই করার ঘটনা স্বীকার করে। পরে তারা দু’জনেই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। মামলায় ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষে দুই ভাই সফিকুল ইসলাম ও সাইফুল ইসলামকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
তিনি আরো জানান, গ্রেফতার হওয়ার পর দুই আসামি জামিন নিয়ে পলাতক থাকায় তাদের অনুপস্থিতিতেই রায় ঘোষণা করেছেন আদালত।
আসামি পক্ষের আইনজীবী আলাউদ্দিন আলমগীর জানান, এ রায়ে তার সন্তুষ্ট নন, সে কারণে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।


মাগুরায় পাভেল হত্যা মামলায় ১ জনের ফাঁসি ৬ জনের যাবজ্জীবন
মাগুরা সংবাদদাতা জানান, মাগুরার মহম্মদপুরের মৌলভী জোকা গ্রামের বহুল আলোচিত পলিটেকনিক ছাত্র মেহেদী হাসান পাভেল হত্যা মামলায় প্রতিবেশী মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আজাদের ফাঁসি এবং তার স্ত্রী ও শাশুড়িসহ ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ রায় দিয়েছেন মাগুরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ফারজানা ইয়াসমিন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৬ আগস্ট রাতে প্রেমঘটিত বিরোধে দণ্ডপ্রাপ্তরা মামলার বাদি রেজাউর রহমান রিজুর ছেলে মেহেদী হাসান পাভেলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এ ঘটনায় প্রতিবেশী মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আজাদ, তার স্ত্রী রুমা পারভিন, নাবালিকা কন্যা লিমা খাতুন, শ্বশুর আবির হোসেন, শাশুড়ি মোমেনা খাতুন, শ্যালক সাহিদুর রহমান, জাকির হোসেন ও খালিদ হাসানের বিরুদ্ধে মহম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা হয়।
মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার দুপুরে মাগুরা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আবির হোসেন বাদে অন্যরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং রায় শুনে তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) কাজী এস্কেন্দার আজম বাবলু জানান, পাভেল হত্যার রায়ে মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আজাদের ফাঁসি এবং তার স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ এবং প্রত্যেকের ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আসামি লিমা খাতুন নাবালিকা থাকায় বৃহস্পতিবার শিশু ট্রাইব্যুনালে তার রায় ঘোষিত হবে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী রোকনুজ্জামান খান রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন জানিয়ে বলেন, বাদিপক্ষ যে অভিযোগে মামলা করেছিল সে ঘটনায় প্রত্যক্ষ কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ না পেলেও আদালত এ রায় প্রদান করেছেন। আমরা উচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব, আশা করছি উচ্চ আদালতে ন্যায় বিচার পাবো।

 


আরো সংবাদ



premium cement