করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ঘরের বাইরে বেড়োনো এখন নিষেধ। কিন্তু ক্ষুধা- দারিদ্র্য কি এই নির্দেশ মানতে চায়? উপার্জনের পথ বন্ধ। কর্মহীন মানুষের চাই খাবার। ইতোমধ্যে খাবার সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন অনেক বিত্তবান কিংবা সমব্যথী সম্পন্ন মানুষ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যক্তি কিংবা সরকারি উদ্যোগেও চলছে ত্রাণ বিতরণ। কিন্তু এই বিতরণ কার্যক্রম বিশৃঙ্খলায় পূর্ণ। গণজমায়েত করে দেয়া হচ্ছে ত্রাণ। সতর্কতার কোনো বালাই নেই। ত্রাণ সংগ্রহকারী সাধারণ মানুষও ভিড় জমাচ্ছেন গায়ে ঠেলে। নেই মাস্ক, বজায় রাখা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। এভাবে ত্রাণ দেয়াকে ভয়ঙ্কর বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে করে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে ত্রাণ না দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে।
গত রোববারের চিত্র। গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডে সকাল থেকে রাস্তার দু’পাশে গাদাগাদি করে বসে আছেন সফুরা, তাহেরা, লাভলী ও বশির মিয়াসহ অনেকেই। ত্রাণ বা খাদ্যসহায়তার জন্য তাদের এ অপেক্ষা। সাহায্য নিয়ে কেউ এলেই হুমড়ি খেয়ে পড়বেন সবাই। একে অপর থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূরের কথা তাদের অনেকের মুখে মাস্কও নেই।
গত শনিবার সেগুনবাগিচায় একটি সাহায্যকারী সংস্থাকে দেখা গেছে, গাদাগাদি করে দীর্ঘ সারি বসিয়ে খাদ্রসামগ্রী বিতরণ করতে।
রাজধানীতে ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকে খিচুড়ি বিতরণ করছেন। উদ্যোগটি শুভ। কিন্তু করোনা সতর্কতার কোনো পদক্ষেপ এখানে নেই।
সম্প্রতি রাজধানীর সায়েন্সল্যাব ও নিউমার্কেট এলাকায় দরিদ্র মানুষের মধ্যে নগদ টাকা বিতরণ করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ ইমদাদুল। বিতরণের সময় মানুষের ভিড়ে হিমশিম খেয়ে একপর্যায়ে ১০০ টাকার অনেকগুলো নোট ছিটিয়ে দেন তিনি। তখন নোটগুলো কুড়িয়ে নিতে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে। একে অপরকে ধাক্কা দিয়ে নোট ধরতে পরস্পরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন এই মানুষগুলো।
একই রকম গণজমায়েত দেখা যায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের ত্রাণ বিতরণের সময়ও। এভাবে গণজমায়েতের মাধ্যমে সাহায্য বিতরণের সাথে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে কি না সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
কমমূল্যে টিসিবির বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে। টিসিবির ট্রাকের সামনে প্রতিদিনই জটলা দেখা যাচ্ছে। ন্যূনতম কোনো সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে না। সারা দেশে সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগে যে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে, প্রতিটিই বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে। করোনা নিয়ে তামাশা চলে না, সেটা কেউ বুঝতেছে না।
করোনা মহামারীতে থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। এই মহামারীর সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষে-মানুষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সবধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এতে বন্ধ হয়ে গেছে নিম্ন আয়ের মানুষের উপার্জনের পথ। এ অবস্থায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেকেই। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও সাহায্য করা হচ্ছে। তবে এ সাহায্য বিতরণে জমায়েত হচ্ছে শত শত মানুষ। এভাবে লোক জমায়েত করে সাহায্য বিতরণে করোনা ঝুঁকি অনেক গুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করলেও তা মানা হচ্ছে না। অনেক সময় প্রশাসনের লোকদেরও জমায়েত করে সাহায্য দিতে দেখা গেছে।
করোনা ঝুঁকিতে ভিড় এড়িয়ে ভিন্ন উপায়ে সাহায্য বিতরণ কর্মসূচি পালন করতে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের প্রফেসর খান আবুল কালাম আযাদ। তিনি বলেন, ‘এভাবে গণজমায়েত করে ত্রাণ বা সাহায্য বিতরণ করার খবরটি এখন ভয়ঙ্কর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বারবার বলা হচ্ছে, এ রোগের আপাতত একটাই সমাধান- সেটা হচ্ছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। এক জায়গায় পাঁচজনের বেশি জমায়েত হতে পারবে না। একজনের থেকে আরেকজনের কমপক্ষে তিন ফিট দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে। এমনকি লিফটেও এক সাথে তিনজন উঠতে পারবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘এটি শুধু আমরা বলছি না, আন্তর্জাতিকভাবেও বলা হচ্ছে। এ ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে আর কোনো প্র্যাকটিস না করলেও একে অপর থেকে কম করে হলেও তিন ফিট দূরে থাকতে হবে। এভাবে গণজমায়েত করে সাহায্য দিলে, এক সময় ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে।’
গণজমায়েত করে দেখানো দান না করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাহায্য পৌঁছে দেয়া হবে উত্তম কাজ। অথবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে সহায়তার বিষয়টি দেখভাল করলে সেটি বেশি ভালো হবে বলেও জানান তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা