২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তাবলিগের কার্যক্রম স্থগিত

কাকরাইল মারকাজে আসা-যাওয়া নিষেধ
-

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও মানিকগঞ্জে একজন আক্রান্ত হওয়ার কারণে সারা দেশে তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কাকরাইল নিজামুদ্দিন মারকাজের অনুসারী শূরার পক্ষ থেকে সব জেলার দায়িত্বরতদের চিঠি দিয়ে জানান হয়েছে। কাকরাইল মারকাজে অবস্থানরতদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। বর্তমানে কাকরাইল মারকাজে প্রবেশ ও বের হওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আর যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন মসজিদে অবস্থানরতদের সেখানেই থেকে সরকার ও চিকিৎসকদের দেয়া বিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে। কাকরাইল মারকাজ মসজিদে ১৯৮ জনসহ সারা দেশে বর্তমানে বিদেশী মেহমান রয়েছেন ৩৪১ জন। তাদের সবাই সুস্থ আছেন বলে কাকরাইল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ভারতের রাজধানী দিল্লির নিজামুদ্দিন তাবলিগের মূল কেন্দ্রবিন্দু। গত ২৪ মার্চ মোদি সরকার হঠাৎ করে সারা দেশে লকডাউনের ঘোষণা দিলে সেখানে তাবলিগের অনেক লোক আটকা পড়ে। তাদের মধ্যে অনেকে সম্প্রতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে ভারতের বিভিন্ন মিডিয়া দাবি করেছে। তবে এ ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন তাবলিগের মুরব্বিরা। তারা বলছেন হঠাৎ লকডাউন করায় তারা মসজিদ থেকে বের হতে পারেননি। তা ছাড়া তাবলিগের বেশির ভাগ সাথীই মুরব্বি। যাদের স্বাভাবিকভাবেই জ্বর, সর্দি থাকতে পারে। তাদের কারো কারো করোনাও হতে পারে। কিন্তু এটাকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে মুসলিমবিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। তা ছাড়া মাওলানা সাদ কান্ধলভী নিজামুদ্দিন মারকাজের মসজিদ সংলগ্ন বাসাতেই বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি গত ২২ মার্চ এবং গত ১ এপ্রিল দুই দফায় চিঠি দিয়ে সারা বিশে^র তাবলিগের সাথীদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এবং নিজ নিজ দেশের সরকারের আইনকানুন ও চিকিৎসকদের দেয়া নির্দেশনা মেনে চলার তাগিদ দিয়েছেন।
দেশে তাবলিগের কার্যক্রম স্থগিত : বর্তমান করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় গত ৩ এপ্রিল দেশের সব জেলার জিম্মাদার, আহলে শূরা ও জিম্মাদার সাথীদের চিঠি পাঠিয়েছে কাকরাইল মারকাজ। নিজামুদ্দিন মারকাজের অনুসারী তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের ফয়সাল ও আহলে শূরা মাওলানা মোশাররফ হোসেন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছেÑ বর্তমান অবস্থায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, মসজিদে নামাজের সাথে সাথে ঘরে অবস্থান করে দাওয়াত, ইবাদত, দোয়া ও আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করুন। সর্বসাধারণের উপকার ও নিরাপত্তার জন্য সরকার যে দিকনির্দেশনা দেয় তা দ্বীনেরই অংশ। আমাদের কোনো কাজ যেন সরকারের নিয়মের বিরোধী না হয়। এ ছাড়া চিঠিতে আরো বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব জামাত মসজিদে অবস্থান করছে তাদের সেখানেই থাকতে হবে। এ ব্যাপারে স্থানীয়ভাবে কোনো বাধা আসলে প্রশাসনের সহযোগিতা নিতে হবে। কারণ এ ব্যাপারে সরকারের নির্দেশও রয়েছে যে, জামাত যে মসজিদে রয়েছে তারা সেখানেই অবস্থান করবে।
এ ব্যাপারে তাবলিগের কাকরাইল মারকাজের মুকিম মাওলানা আব্দুল্লাহ গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা সারা দেশে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো প্রকার জমায়েত করা যাবে না। সরকার ও চিকিৎসকরা যেসব নির্দেশনা দিয়েছে তা মেনে চলার জন্য বলা হয়েছে। আর যেসব মসজিদে বর্তমানে জামাত রয়েছে তারা সেখানেই থেকে নিজেরা ইবাদত-বন্দেগি করবেন।
দেশে তাবলিগের বিদেশী মেহমান ৩৪১ জন : বর্তমানে দেশে বিভিন্ন দেশের ৩৪১ জন তাবলিগের সাথী অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে ১৯৮ জন কাকরাইল মারকাজে অবস্থান করছেন। বাকিরা দেশের বিভিন্ন মসজিদে অবস্থান করছেন। বিদেশীদের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া এবং ভারতের সবচেয়ে বেশি সাথী রয়েছেন। এ ছাড়া চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, থাইল্যান্ড, ইথিয়পিয়া, মিসরসহ বিভিন্ন দেশের লোক রয়েছে। মাওলানা আব্দুল্লাহ জানান, কাকরাইল মারকাজে দেশী ৬০-৭০ জন এবং বিদেশী ১৯৮ জন রয়েছেন। তারা সম্পূর্ণ কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। বিদেশ থেকে তাবলিগের সাথী সবশেষ গত ১৭ মার্চ এসেছেন। তারা সবাই ইতোমধ্যে ১৪ দিন পার করেছেন। তাদের মধ্যে কোনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নেই। কাকরাইল মসজিদের আহলে শূরার সদস্য খান শাহাবুদ্দিন নাসিম নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমানে কাকরাইল মারকাজে প্রবেশ ও বের হওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
দেশে তাবলিগের একজন করোনায় আক্রান্ত : ফরিদপুরের নগরকান্দা থেকে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে তাবলিগ জামাতে গিয়ে এক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার বয়স আনুমানিক ৬০ বছর। তিনি সিঙ্গাইর পৌরসভার আজিমপুর নয়াডাঙ্গী এলাকার বাইতুল মামুর ও মারকাযুল মা আরিফ ওয়াদ-দা ওয়াহ মাদরাসায় তাবলিগ জামাতে এসেছিলেন। এ ঘটনায় ওই ব্যক্তির সাথে থাকা অন্য ১১ সদস্য ও স্থানীয় ৬ সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। শনিবার রাত ১২টার দিকে আইইডিসিআর থেকে তার করোনায় আক্রান্তের খবর জানানোর পর সিঙ্গাইর পৌরসভা এলাকা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তাবলিগের কাকরাইলের মুকিম মাওলানা আব্দুল্লাহ বলেন, তার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ দেখা দিলে আমরা তাকে প্রথমে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এরপর বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ে এবং সেখান থেকে তাকে আইইডিসিআরে নিয়ে যাই।

 


আরো সংবাদ



premium cement