সরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়নি বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, আমি শপথ নেয়ার প্রথম দিনই বলেছিলাম, আজ থেকে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বাড়বে না। কিন্তু আপনারা (সাংবাদিকেরা) লিখেছেন খেলাপি বেড়েছে। কিন্তু আমার কাছে যে তথ্য আছে তাতে সরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বাড়েনি, বরঞ্চ কমেছে। তিনি আরো বলেছেন, যারা ত্রæটি-বিচ্যুতি স্বীকার করে আমাদের কাছে আসবেন, তাদের বিষয়টি আমরা দেখব। কিন্তু যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে নিয়ে গেছেন বা বালিশের নিচে রেখেছেন তাদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে তা শুরু হয়ে গেছে। তাদের অনেকে জেলে পর্যন্ত আছে। তাদের পরিবারও জেলে আছে। আমরা তাদের ছাড় দেবো না।
গতকাল সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকের এমডি ও চেয়ারম্যানদের সাথে বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। বেলা ৩টায় শুরু হয়ে এ বৈঠকটি শেষ হয় বিকেল ৬টায়। টানা তিন ঘণ্টার এই বৈঠকে বিভিন্ন সরকারি ব্যাংক তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা অর্থমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেন বলে জানা গেছে।
পরে অর্থমন্ত্রী পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, সোনালী ব্যাংকে ২০১৮ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩০ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ২০১৯ সালে মার্চে তা হয় ২৯ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং জুনে তা আরো কমে হয়েছে ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ। একইভাবে জনতা ব্যাংকে ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৩৭ দশমিক ৩২ শতাংশ, মার্চে (২০১৯) তা বেড়ে হয় ৪৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং জুনে তা কমে হয়েছে ৩৫ শতাংশ। অগ্রণী ব্যাংকে ডিসেম্বরে ২০ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং মার্চে ১৬ দশমিক ৬৫, জুনে ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। রূপালী ব্যাংকে ডিসেম্বরে ১৯ দশমিক ২১, মার্চে ১৮ দশমিক ১৫ এবং জুনে ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ। বেসিক ব্যাংকে ডিসেম্বরে ৫৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ, মার্চে ৫৮ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং জুনেও ৫৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। বিডিবিএল ডিসেম্বরে ৫৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ, মার্চে ৫৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
তিনি বলেন, ঋণ খেলাপিদের জন্য যে ‘এক্সিট প্ল্যান’ দেয়া হয়েছে তা যদি পুরোপরি বাস্তবায়িত হয় তাহলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরো অনেক কমে যাবে। বৈঠকে সুদের হার নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আমরা সুদের হার অবশ্যই সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসব। কারণ সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে না নামিয়ে আনলে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পায়। এই সুদের কারণে কেউ ঋণ পরিশোধ করতে পারেন না। তাই ব্যবসায়ী, সাধারণ জনগণসহ সবার দাবিÑ সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা। কারণ সুদ বেশি থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা লাভবান হয় না, ঋণ গ্রহীতারাও লাভবান হন না। আমরা ব্যবসায়ী ও ঋণ গ্রহীতাÑ সবাইকে লাভবান করতে চাই।
তিনি বলেন, সুদের হার যদি ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়, তবুও তা অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। কিন্তু এখন ১৪-১৫ শতাংশ সুদ দিয়ে কেউ ব্যবসা করতে পারবে না।
ব্যাংকি খাত জোরদার করার জন্য ব্যাংকের গ্রাহকদের সাথে সম্পর্ক ও যোগাযোগ বাড়ানো হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, যারা ত্রæটি-বিচ্যুতি যা করেছে, তা যদি আমাদের কাছে এসে বলে তবে আমরা সেই ত্রæটিবিচ্যুতি দূর করব। কিন্তু তাদের টাকা-পয়সা যা নিয়েছে তা ফিরিয়ে দিতে হবে।
আরা যারা আমদানি-রফতানির নামে অন্যায়ভাবে টাকা নিয়েছে, সেই টাকা হয় দেশের বাইরে নিয়ে গেছে বা দেশের অন্য জায়গায় নিয়ে রেখে দিয়েছে, বালিশের তলায় রেখেছে, যাই করুক একই অপরাধ করেছে। যারা আমাদের ব্যাংকিং সিস্টেম থেকে টাকা বাইরে নিয়ে গেছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা দেশের প্রচলিত নিয়ম ও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি বলেন, আপনারা জানেন, এরই মাঝেই অনেকে জেলখানায় আছেন, তাদের অন্যায়ের কারণে তারা জেলে আছেন। জনতা ব্যাংকের অনেকে জেলে আছেন, ফারমার্স ব্যাংকের আছে এবং অন্যান্য ব্যাংকেও এমনিভাবে তারা জেলে আছে। তাদের পরিবারসহ জেলে আছে। আমরা সেখানে কাউকে ছাড় দেবো না। আমরা তাদের ধরে আইনের কাছে নিয়ে যাব।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাকিং খাত ভালো অবস্থায় রয়েছে। তাই তিন মাস পর পর এখাত নিয়ে আলোচনা করা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা