চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার তারানিবাস গ্রামে সরকারি জমিতে ৩০ থেকে ৩৫ বছর ধরে বসবাসকারী একটি ভূমিহীন দম্পতি সরকারিভাবে কোনো ঘর বরাদ্দ না পেলেও আছেন উচ্ছেদ আতঙ্কে। উচ্ছেদ আতঙ্কে ভূমিহীন দম্পতি মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
উপজেলার হাসাদহ ইউনিয়নে তারানিবাস গ্রামের ভূমিহীন দম্পতি ওয়াদুদ (৬৫) ও হাওয়াতন নেছা (৬০) সরকারি ৫ শতক খাস জমিতে একটি ঝুঁপড়ি ঘর তুলে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিলেও সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বলা হয়েছে সেখানে সরকারিভাবে ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে।
সরকারি ঘর তাদের নামে বরাদ্দ না হওয়ায় তাদেরকে সেখান থেকে বাড়ি ঘর ভেঙে চলে যেতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতেই তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ওয়াদুদ-হাওয়াতন নেছা ভূমিহীন দম্পতি। এদিকে যুগের পর যুগ ধরে খাস জমিতে বসবাসকারী ভূমিহীন পরিবারকে সরকারি ঘর বরাদ্দ না দিয়ে অন্য জায়গা থেকে কথিত ভূমিহীন পরিবার এনে সেখানে সরকারি ঘর বরাদ্দ দেয়ার গুঞ্জনে গ্রামবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ওই দম্পতির বাস্তভিটা কখনই ছিল না। যুগ যুগ ধরে সরকারি খাস জমিতে জরাজীর্ণ ঝুঁপড়ি ঘরে বসবাস করে এলেও জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে ধরনা দিয়ে কোনো ঘর কিংবা একখণ্ড জমি পায়নি। প্রায় তিন যুগ ধরে বসবাস করছেন খাস জমিতে। প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে সেখানে পানি জমে যায়। বর্তমানে সেখান থেকে উচ্ছেদ আতঙ্কে ঘুম হারাম হয়ে গেছে ওয়াদুদ দম্পতির।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওয়াদুদ-হাওয়াতন দম্পতি পাটখড়ির বেড়া বিশিষ্ট একটি ঝুঁপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। দিন মজুর তাদের পেশা হলেও বর্তমানে বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়ায় আর আগের মতো ক্ষেতে-খামারে শ্রম খাটতে পারে ওয়াদুদ। এক দিকে বয়স অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাতের কারণে ওয়াদুদ বর্তমানে অসহায় হয়ে পড়েছে। অতিসম্প্রতি বাড়ির সাথেই একটি টং দোকান দিয়ে সেখানে সন্ধ্যার পর থেকে চা আর কিছু বিস্কুট-রুটি বিক্রি শুরু করেছেন। শত অভাবের সংসারেও তাদের কোনো চাহিদা নেই। শুধু একটিই আকুতি তারা মাথার গোঁজার জন্য তাদের দীর্ঘ দিনের বসতি খাস জমিতে একটি ঘর। এজন্য তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে একাধিকবার আবেদন করেছেন। কিন্তু এখনো তাদের সেই কাঙ্ক্ষিত দাবি অপূর্ণই রয়ে গেছে। তার ওপর আবার উচ্ছেদ আতঙ্ক।
ওয়াদুদের স্ত্রী হাওয়াতন নেছার দাবি, তিনি বর্তমানে চোখে দেখেন না। আমরা যুগ যুগ ধরে ভূমিহীন হয়ে ঝুঁপড়ি ঘরে বসবাস করলেও আমাদের খবর কেউ রাখে না। আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। ওই স্থান থেকে আমাদেরকে উচ্ছেদ করা হলে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না। সেখানে আমাদেরকে সরকারি ঘর বরাদ্দ না দিয়ে অন্য গ্রাম থেকে ভূমিহীন এনে সেখানে ঘর দেয়ার ঘোষণা দেয়ায় আমরা বর্তমানে উচ্ছেদ আতঙ্কে মানবেতর জীবনযাপন করছি।
সংশ্লিষ্ট এলাকার সাবেক মেম্বার ও মানবাধিকার কর্মী সাংবাদিক মতিয়ার রহমান বলেন, ওয়াদুদ-হাওয়াতন শুধু ভূমিহীন নয়, তারা বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়েছে এবং তারা স্বামী-স্ত্রী দু’জনই এক প্রকার শারীরিক প্রতিবন্ধী। এ পরিবারটি দীর্ঘ তিন যুগ ধরে সরকারি খাস জমিতে ঝুঁপড়ি ঘরে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু তাদেরকে অগ্রাধিকার না দিয়ে সেখান থেকে তাদেরকে উচ্ছেদ করে অসামাজিক ও কথিত ভূমিহীন রোকেয়া নামের এক নারীকে অন্য গ্রাম থেকে এখানে তাকে সরকারি ঘর বরাদ্দ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আমার জানামতে, রোকেয়ার গুচ্ছপাড়ায় জমি ও পাকা ঘর রয়েছে। এ ব্যাপারে আমি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী মহোদয়ের সাথে সরাসরি কথা বলে ওয়াদুদ-হাওয়াতন দম্পতিকে মানবিক কারণে উচ্ছেদ না করে সেখানে সরকারিভাবে তাদেরকে একটি ঘর বরাদ্দ দেয়ার জন্য লিখিতভাবে আবেদন করা হয়েছে।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলাম বলেন, সরকারি জমিতে যে সব ভূমিহীন পরিবার বসবাস করছেন তাদেরকে উচ্ছেদ করে নয়, সরকার সব ভূমিহীন পরিবারের পর্যায়ক্রমে আবাসনের ব্যবস্থা করবেন। সরকারি জমিতে যে সব ভূমিহীন পরিবার বসবাস করছেন তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঘর দেয়ার কথা বলা হয়েছে। যাদের নামের তালিকা আগে করা হয়েছে, তাদেরকে আগে ঘর দেয়া হবে। ভূমিহীন ওয়াদুদ-হাওয়াতন দম্পতি পরিবারকে উচ্ছেদের কোনো নির্দেশ দেয়া হয়নি। তাদের ব্যাপারটি আগে জানলে আমি অবশ্যই এবারই ব্যবস্থা করতাম। তবে এবার ঘর না পেলেও পরবর্তীতে ব্যবস্থা করা হবে।