২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ভাড়া না পেয়ে ভাড়াটিয়ার দরজায় তালা, বন্ধ ঘরে শিশুর মৃত্যু

ভাড়া না পেয়ে ভাড়াটিয়ার দরজায় তালা, বন্ধ ঘরে শিশুর মৃত্যু - ছবি : সংগৃহীত

খুলনা মহানগরীর হরিণটানা রিয়াবাজার এলাকায় ঘর ভাড়ার অগ্রিম না পেয়ে পাঁচ দিন ধরে ছয় মাসের দুগ্ধপোষ্য শিশু সন্তানসহ ভাড়াটিয়া পরিবারকে তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বন্ধ ঘরে বালতির পানিতে ডুবে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার শিশুটির মা-বাবা এ ঘটনায় বাড়িওয়ালা মো. নওশেরকে অভিযুক্ত করে থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ তা গ্রহণ না করে অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করেছে। এ বিষয়ে আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২০ সালে ডিসেম্বর মাসে কাঠের ডিজাইন মিস্ত্রী ইমদাদুল ইসলাম ও তার স্ত্রী তামান্না মাসিক চার হাজার টাকা চুক্তিতে রিয়াবাজার এলাকায় একতলা বাড়ির দু’টি কক্ষ ভাড়া নেন। মাসের (জানুয়ারি) শুরুতে ভাড়া দিতে না পারায় গত ৬ জানুয়ারি থেকে ঘরে শিশু সন্তানসহ তামান্নাকে তালাবদ্ধ করে রাখেন বাড়িওয়ালা নওশের। এ সময় তামান্নার স্বামী মোংলা জিউধরা এলাকায় কাঠের কাজ করছিলেন।

তামান্না জানান, তালাবদ্ধ অবস্থায় গত ১১ জানুয়ারি দুপুরে তিনি বাড়ির ছাদে কাপড় নাড়তে যান। শিশুটি খেলতে গিয়ে হঠাৎ বালতির পানির মধ্যে উল্টে পড়ে যায়। ঘরে এসে তিনি শিশুটিকে উদ্ধার করলেও বাইরে থেকে ঘর তালাবদ্ধ থাকায় চিকিৎসকের কাছে নিতে পারেননি। ওই অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। ‘মায়ের আকুতি, আমার মতো এভাবে যেন আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়। আর কোনো পাষণ্ড বাড়িওয়ালা যেন এভাবে অন্যায় করতে না পারে। এ জন্য তিনি বাড়িওয়ালার বিচার দাবি করেন।’

শিশুটির বাবা ইমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘নিম্ন আয়ের মানুষ। সংসারে অভাব অনটন থাকলেও সন্তানকে নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসতাম। কিন্তু বাড়িওয়ালার নির্মমতায় আজ ওই সন্তানকে হারাতে হলো।’

জলমা ইউপির সদস্য শহিদুল ইসলাম লিটন জানান, ‘শিশুটির মা জানালা দিয়ে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন তালা ভেঙে তাদেরকে উদ্ধার করেন। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে শিশুটি মারা যায়। এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।’

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা জেলার কো-অর্ডিনেটর অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম জানান, ‘অসহায় মা-বাবা থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুটির ডেথ সার্টিফিকেট ও থানায় দায়ের করা ইউডি মামলার কপি হাতে পেয়েছি। আগামী সোমবার খুলনা চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আমলী আদালত ‘লবণচরা অঞ্চল’ এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হবে।’

তবে, অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাড়িওয়ালা মো. নওশের।

এ বিষয়ে লবণচরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সমীর কুমার সরকার বলেন, ‘মায়ের অবহেলার কারণেই তার শিশু সন্তান পানিতে ডুবে মারা গেছে। এ কারণেই অপমৃত্যু মামলা নেয়া হয়েছে। তবে বাড়িওয়ালা বাইরে থেকে ঘর তালাবদ্ধ করেছিল কি-না তা জানা নেই’


আরো সংবাদ



premium cement