‘রেইনট্রি’ যাকে এই সাতক্ষীরা অঞ্চলের মানুষ শিশুফুল গাছ নামে চেনে। বর্তমানে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় এই গাছে ব্যাপক হারে জায়ান্ট মিলিবাগ নামক পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এ পোকার আক্রমণে মরে যাচ্ছে শত শত গাছ।
কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, রেইনট্রিতে জায়ান্ট মিলিবাগ পোকার আক্রমণের কারণে উপজেলার ছোট-বড় কয়েক হাজার গাছ মারা যাওয়ায় লাখ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তবে সকলের সহযোগিতা পেলে এ বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব। এ জন্য সবাইকে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে।
কালিগঞ্জ, শ্যামনগর, দেবহাটা ও আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রেইনট্রি’র গা-বেয়ে উঠে আঠার মতো লেগে আছে জায়ান্ট মিলিবাগ পোকা। এই পোকা গাছগুলোর শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগের কঁচি পাতা, ফলের বোটা বা গাছের গায়ে দলবদ্ধভাবে সাদা রংঙের চাঁদর বিছিয়ে গাদাগাদি করে থাকে। এর ফলে আক্রান্ত গাছটির সেই স্থানটি সহজে দেখা যায় না। গাছের রস চুষে খাচ্ছে পোকাগুলো। এক পর্যায়ে গাছটি ঠিকমতো খাদ্য তৈরি করতে পারছে না। পাতা কালো হয়ে যাচ্ছে। গাছ ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে শেষ পর্যন্ত মারা যাচ্ছে।
কালিগঞ্জ উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের শওকত আলী, আবু বক্কার ও আবু দাউদ জানান, তাদের বাগানের রেইনট্রিতে এ পোকা ব্যাপক হারে আক্রমণ করেছে। বাড়ন্ত গাছগুলি মারা যাওয়ায় তারা ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। একই কথা জানান উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের আব্দুর রহিম, দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের রুহুল কুদ্দুস, কুশুলিয়া ইউনিয়নের কাজী মোনায়ামে হোসেন।
এছাড়াও সড়কের পাশে বড় বড় রেইনট্রি জায়ান্ট মিলিবাগ পোকার আক্রমণের ফলে শুকিয়ে গেছে। যার কারণে লাখ লাখ টাকার জাতীয় সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়াও এসব মরা গাছের নীচ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পথচারী ও নানা প্রকার যানবাহন চলাচল করছে। প্রায়ই শুকনো ডাল ভেঙে দুর্ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছে মানুষ।
এ ব্যাপারে কালিগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার শেখ ফজলুল হক মনি জানান, এই পোকাটি ১৯২৩ সালে আফ্রিকা মহাদেশ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বর্তমানে এটি শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন ফলদ উদ্ভিদ যেমন- নারিকেল, আম, লেবু, কাঁঠাল ছাড়াও বনজ বৃক্ষ রেইনট্রি, কড়ই, পাহাড়ি তুলা ইত্যাদি গাছে আক্রমণ করে থাকে।
তিনি আরও জানান, সাধারণত ফাল্গুন-চৈত্র মাসে স্ত্রী পোকা গাছ থেকে নেমে আসে এবং মাটির ৫-১৫ সেন্টিমিটার গভীরতায় গুচ্ছাকারে ৩০০ থেকে ৫০০ ডিম পাড়ে। আশ্বিন মাসের শেষ সপ্তাহ হতে ডিম ফুটে নিম্ফ বের হয়ে আসে এবং হেঁটে হেঁটে খাদ্যের সন্ধানে গাছে উঠতে শুরু করে।
জায়ান্ট মিলিবাগের হাত থেকে গাছ রক্ষার জন্য তিনি দু’টি পদ্ধতির কথা বলছেন। প্রথমত, গাছে আক্রমণকালে যে কোনো সময় জৈব বালাইনাশক, ফাইটোক্লিন দিয়ে পোকাটি দমন করা যায়। এছাড়াও কার্তিক মাসে সদ্য ফোটা নিম্ফ ধ্বংস করা এবং ফাল্গুন-চৈত্র মাসে পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী পোকা ধ্বংস করা সম্ভব।
তিনি আরও জানান, এই পোকার আক্রমণ কমাতে আমাদের পক্ষ থেকে খুব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সকলের সহযোগিতা পেলে এ বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব। এজন্য সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এমতাবস্থায় জায়ান্ট মিলিবাগ পোকা যাতে মহামারি আকার ধারণ করতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ভুক্তোভোগীসহ সচেতন মহল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা