০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`


রমজানে ক্ষমা প্রার্থনা

-

পবিত্র রমজানের রহমতের দশক শেষ হয়ে গেছে। অবশিষ্ট দিনগুলোতেও আল্লাহর রহমত বিদ্যমান থাকবে। তবে রহমতের বিশেষ সুযোগটা শেষ হয়ে গেছে। এরপর আছে সাধারণ সুযোগ। বিশেষ সুযোগে আমরা রহমত পেয়েছি কি না নিশ্চিত নই। তাই সারা রমজানেই আল্লাহর কাছে রহমত পাওয়ার জন্য দোয়া ও মেহনত করতে হবে। আমরা আল্লাহর রহমতের কাঙাল। আল্লাহর রহমত আমার কাঙাল নয়। এমন বিনয়ের মনোভাব নিয়েই আল্লাহর কাছে রহমত চাইতে থাকতে হবে।
রমজানের দ্বিতীয় দশককে মাগফিরাতের দশক বলা হয়। মাগফিরাত অর্থ ক্ষমা করা। রমজানের এই দশকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে বিশেষভাবে ক্ষমা করে থাকেন। প্রথম দশকেও ক্ষমা করেন, দ্বিতীয় দশকেও ক্ষমা করেন, তৃতীয় দশকেও ক্ষমা করেন। তবে মধ্যের এই দশকে বিশেষভাবে ক্ষমা করেন। একদিন রাসূলুল্লাহ সা: মিম্বরে বয়ান করার জন্য উঠছিলেন। তিনি যখন প্রথম ধাপে পা দিলেন, তখন বললেন, আমিন! অনুরূপ দ্বিতীয় ধাপে পা রাখার সময়ও বললেন, আমিন! তৃতীয় ধাপেও বললেন, আমিন! এমনটা কখনো হয়নি। সাহাবায়ে কেরাম বয়ান শেষে এর কারণ জানতে চাইলে রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, আমি যখন প্রথম ধাপে পা রাখলাম তখন জিবরাইল আ: আমার কাছে এসে বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যে পবিত্র রমজান মাস পেলো অথচ তার গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারল না। আমি বললাম, আমিন! অর্থাৎ আল্লাহ তাই করুন। দ্বিতীয় ধাপে পা রাখার সময় জিবরাইল আ: বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যার সামনে আপনার নাম আলোচিত হওয়া সত্ত্বেও সে আপনার ওপর দরুদ পাঠাল না। আমি বললাম, আমিন! যখন তৃতীয় ধাপে পা রাখলাম, তখন তিনি বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যার মা-বাবা উভয়ে কিংবা একজন বৃদ্ধাবস্থায় পৌঁছল অথচ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারল না, অর্থাৎ তাদের খুশি করে জান্নাত হাসিল করতে পারল না। আমি বললাম, আমিন!
যেহেতু এই দশকটা মাগফিরাতের দশক, তাই আল্লাহর কাছে বেশি বেশি করে ক্ষমা চাওয়া দরকার। নতুন-পুরোনো সব ধরনের গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া দরকার। এমন যেন না হয়, অতীতে যেসব গুনাহ হয়ে গেছে তার জন্য বহুবার মাফ চেয়েছি, এখন আর তার জন্য মাফ চাওয়ার প্রয়োজন নেই। এমনটি হওয়া মোটেও উচিত নয়। বরং তার জন্যও মাফ চাওয়া দরকার। গুনাহ স্মরণ করে যত বেশি তওবা করা যায়, যত বেশি মাফ চাওয়া যায়, আল্লাহতায়ালা তত বেশি খুশি হন।
গুনাহের জন্য মাফ চাওয়া, এটাও একটা স্বতন্ত্র আমল। নামাজ পড়লে আল্লাহ খুশি হন, রোজা রাখলে আল্লøাহ খুশি হন, ইবাদত-বন্দেগি করলে আল্লাহ খুশি হন, এমনিভাবে যেকোনো আমল করলে আল্লাহ খুশি হন। তদ্রƒপ গুনাহের জন্য মাফ চাইলেও আল্লাহ খুশি হন। যত বেশি মাফ চাওয়া যায়, তত বেশি আল্লাহ খুশি হন যে, বান্দা আমার কাছে নতিস্বীকার করেছে। বান্দার নতিস্বীকার করা, বান্দার নত হওয়াকে আল্লাহ খুব বেশি পছন্দ করেন। বান্দা অহঙ্কার করবে, মাথা উঁচু করবে, আল্লাহ এটা পছন্দ করেন না। আর বান্দা যত নত হবে, আল্লøাহর কাছে যত কাকুতি-মিনতি করবে, যত দীনতা-হীনতা প্রকাশ করবে, আল্লাহ তত বেশি খুশি হবেন।
লেখক : সিনিয়র শিক্ষক, দারুল উলুম কাকরাইল, রমনা, ঢাকা


আরো সংবাদ



premium cement