২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


লবণের নয় গুণগান

-

ক্লিনিক্যাল ফেলো, মেনাস ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া সেই আদিকাল থেকে লবণের কত গুণগান। কথায় বলে, নুন খাই যার গুণ গাই তার। রোমান সৈনিকদের বেতন দেয়া হতো লবণ কেনার জন্য। এ জন্য বেতন বলতে ইংরেজিতে ‘ঝঅখঅজণ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অতএব লবণের মূল্য অসাধারণ। লবণ ছাড়া খাবার সুস্বাদু হয় না সত্য; কিন্তু কতটুকু লবণ খাওয়া উচিৎ এ নিয়ে অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব। কারণ অতিরিক্ত লবণ খেলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি খাবারে লবণ এবং পটাসিয়ামের নতুন নির্দেশনা প্রকাশ করেছে। একজন মানুষের দিনে ৫ গ্রাম অর্থাৎ প্রায় ১ চা চামচের কম লবণ খাওয়া উচিৎ। আর দৈনিক পটাসিয়াম বরাদ্দ ৩.৫ গ্রাম । ১০টি কলাতে এই পরিমাণ পটাসিয়াম পাওয়া যায়। অবশ্য আরো অনেক ফলেও প্রচুর পটাসিয়াম থাকে।
খাবারে অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। লবণ বেশি খেলে রক্তরসের পরিমাণ বেড়ে যায়, যার ফলে রক্তচাপও বেড়ে যায় বলে মনে করা হয়। এ জন্য খাবারে লবণের পরিমাণ সীমিত রাখা দরকার। কিন্তু আসলে খাবারে কতটুকু লবণ থাকা দরকার তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সেখানে একটি প্রমাণভিত্তিক মতৈক্য স্থাপন করলো।
খাবারের লবণের বৈজ্ঞানিক নাম সোডিয়াম ক্লোরাইড। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা দৈনিক আড়াই গ্রামের বেশি সোডিয়াম গ্রহণ করি। এ পরিমাণ সোডিয়াম ৬ গ্রাম বা ১ চা চামচ খাবার লবণের সমতুল্য। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশে এখন পরিষ্কার জানানো হয়েছে একজন মানুষের দিনে ৫ গ্রাম অর্থাৎ প্রায় ১ চা চামচের কম লবণ খাওয়া উচিৎ। এটা ভাত-তরকারি এবং পাতের লবণসহ হিসাব করা হয়েছে। অনেকে মনে করেন পাতে লবণ না খেয়ে তরকারিতে বেশি পরিমাণে লবণ ব্যবহার করলে কোনো ভয় নেই। আবার কেউ কেউ বলেন পাতে কাঁচা লবণ না খেয়ে তরকারিতে ভাজা লবণ খেলে ভালো। কিন্তু এসব কথা সত্য নয়। লবণ যে ভাবেই ব্যবহার করা হোক না কেন একজন সুস্থ মানুষের সার্বিকভাবে এক চা চামচের বেশি লবণ খাওয়া উচিৎ নয়।
আজকাল আধুনিক সুপার মল কিংবা চেইন শপগুলোতে হিমায়িত খাবার কিংবা কৌটাজাত ফলমূল এবং শব্জি বিক্রি হয়। মাছ-গোশত, রান্না করা ভাত, রুটি, পাস্তা, নান রুটি ইত্যাদি হরেক রকম খাবার এভাবে সংরক্ষিত অবস্থায় ব্যাপকভাবে বিক্রি হয়। যারা হোস্টেল, মেস কিংবা ডরমিটরিতে বাস করেন অথবা কর্মব্যস্ততার কারণে রান্না করার সময় পান না তাদের কাছে এ সব রেডিমেড খাবার অত্যন্ত জনপ্রিয়। গৃহবধূর হাতে রান্না করা সুস্বাদু গরম তরকারি আর ভাত যাদের নিয়তিতে নেই তাদের জন্য মোড়ক জাত নানাবিধ প্রস্তুত খাবার দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতোই। কম লবণযুক্ত ঘোল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিন্তু মোড়কজাত সংরক্ষিত খাবারের ব্যাপারে সাবধান।
প্রাকৃতিকভাবেই বিভিন্ন খাবারে লবণ থাকে। যেমন- দুধে প্রতি ১০০ গ্রামে ৫০ মি. গ্রাম এবং ১০০ গ্রাম ডিমে ৮০ মি. গ্রাম লবণ থাকে। খাবার সংরক্ষণের জন্য নানাবিধ রাসায়নিক উপাদানের কথা বাদ দিলেও, এসব খাবারে অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ জন্য মোড়কজাত খাবার কেনার আগে মোড়কের গায়ে উল্লিখিত লবণের পরিমাণ দেখে নেয়া উচিৎ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আধ কাপ পরিমাণ হিমায়িত মটরশুঁটিতে ১২৫ মি. গ্রাম লবণ থাকে। সমপরিমাণ কৌটাজাত মটরশুঁটিতে ৩৮০ মি. গ্রাম লবণ থাকে। অর্থাৎ কৌটাজাত মটরশুঁটিতে সাধারণ হিমায়িত মটরশুঁটির চেয়ে তিনগুণ বেশি লবণ থাকে। অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন- পাউরুটিতে ২৫০ গ্রামে ১০০ মি. গ্রাম আর বেকনে প্রতি ১০০ গ্রামে ১৫০০ মি.গ্রাম লবণ থাকে। পপ কর্নে ১০০ গ্রামে ১৫০০মি.গ্রাম, সয়া সসে ১০০ গ্রামে ৭০০০ মি.গ্রাম লবণ থাকে। এভাবে সব সংরক্ষিত খাবারের প্যাকেটে লবণের পরিমাণ দেখে নিলে বোঝা যায় আমরা কী পরিমাণ লবণ গ্রহণ করছি।
লবণ ছাড়া যাদের নিকট খাবার বিস্বাদ মনে হয় তারা বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন ধরনের মসলা যেমন- আদা, মরিচ, রসুন, লবঙ্গ, গোল মরিচ, ব্যাসিল, পার্স লি , পেস্তা ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।
পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্যের মধ্যে রয়েছে- শিম এবং মটরশুঁটি ( প্রতি ১০০ গ্রামে ১৩০০ মি.গ্রাম), বাদাম ( প্রতি ১০০ গ্রামে ৬০০ মি.গ্রাম), সব্জি যেমন- পালং, বাঁধাকপি, পার্সলি (১০০গ্রামে ৬০০ মি.গ্রাম) এবং বিভিন্ন ফল যেমন-কলা, পেঁপে, খেজুর (১০০ গ্রামে ৩০০ মি.গ্রাম)।
আমাদের বর্তমান প্রবণতা হচ্ছে লবণ বেশি খাওয়া আর পটাসিয়াম কম খাওয়া। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এটা উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টির ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ থাকা মানেই হৃদরোগ এবং পক্ষাঘাত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া । আর হৃদরোগ এবং পক্ষাঘাত এখন পৃথিবীতে মানুষের মৃত্যু এবং শারীরিক অক্ষমতার প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বর্তমান নির্দেশনায় দুই বছরের উপরের শিশুদের জন্যও করণীয় ব্যাখ্যা করা হয়েছে । এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । কারণ আজকের যে শিশুটির রক্তচাপ বেশি, বড় হলেও তার উচ্চ রক্তচাপ থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা বিভিন্ন দেশের জন স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষ ভূমিকা রাখবে। কারণ বিভিন্ন অ-সংক্রামক ব্যাধি যেমন হৃদরোগ, পক্ষাঘাত, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, ক্রনিক হাঁপানি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিক নির্দেশনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই নির্দেশনার ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং পক্ষাঘাত প্রতিরোধ করার জন্য জনগণ কে কম লবণ খাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে সুবিধা হবে। এ ছাড়া খাদ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানসমূহকে লবণের ব্যবহার সীমিত করার বিষয়ে সজাগ করা সম্ভব হবে।
লেখক : মেডিসিন বিশেষজ্ঞ


আরো সংবাদ



premium cement
যুক্তরাষ্ট্রে গুলিতে ২ বাংলাদেশী নিহত ভারতের বিশ্বকাপজয়ী কোচ এবার পাকিস্তানে ইউরোপে চীনের গুপ্তচরবৃত্তি বাড়ার অভিযোগ ফিলিপাইনে সরকারি স্কুলে সশরীরে পাঠদান স্থগিতের ঘোষণা বিএনপি গরিবের পাশে দাঁড়ায় আর আ’লীগ সরকারি ত্রাণ চুরি করে : ইশরাক চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস সেন্ট লুইসে ইসরাইলবিরোধী সমাবেশ থেকে আটক মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জিল স্টেইন গাজা বিষয়ক সম্মেলনে আতিথেয়তা করবে সৌদি আরব চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড শ্রীনগরে নাতিকে মাদরাসায় দিয়ে ফেরার পথে ট্রেনের ধাক্কায় বৃদ্ধার মৃত্যু ইউক্রেনের ১৭টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে রাশিয়া

সকল