২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ছানি অপারেশন-পরবর্তী সতর্কতা

-

ছানি সম্পর্কে আমরা অনেকই কমবেশি পরিচিত। চোখের ভেতর একটি প্রাকৃতিক স্বচ্ছ লেন্স থাকে যাকে বলা হয় হিউমেন লেন্স। কোনো কারণে যদি প্রাকৃতিক এই লেন্সটি তার স্বচ্ছতা হারিয়ে ফেলে অর্থাৎ ঘোলা হয়ে যায় তবে আলোকরশ্মি চোখের ভেতরে প্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে দেখার কাজটি বিঘিœত হয়। লেন্সের এই ঘোলা অবস্থাটিকে বলা হয় ক্যাটারেক্ট বা ছানি।
ছানির চিকিৎসা হলো অপারেশন। অপারেশনের মাধ্যমে ঘোলা লেন্সটি অপসারণ করে সেখানে একটি স্বচ্ছ কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করা হয়। কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করলে আশা করা যায় অপারেশনের পরে চোখের দৃষ্টি ফিরে আসবে।
বর্তমানে আধুনিক যে পদ্ধতিতে ছানি অপারেশন করা হয় তা ফেকো অপারেশন নামে বহুল পরিচিত। এতে খুব অল্প পরিমাণ কাটাছিঁড়ার বিষয় থাকে। তারপরও অপারেশন-পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যে সমস্যাটির ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকতে হয় সেটি হলো- ইনফেকশন। পোস্ট অপারেটিভ ইনফেকশন থেকে চোখকে রক্ষা করতে তাই অপারেশন-পরবর্তী সময়ে চোখে পানি লাগানো, চোখে হাত দেয়া বা ময়লা কাপড়ে চোখ মোছা বা চোখ পরিষ্কার করা, গোসল করা ইত্যাদি বারণ করা হয়। ডায়াবেটিসের রোগীদের ইনফেকশনের শঙ্কা তুলনামূলক বেশি থাকে বিধায় অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। অপারেশন-পরবর্তী সময়টিতে চলাফেরায় কিছুটা বিধিনিষেধ থাকে, তাই এই সময়টিতে খাওয়া-দাওয়ার বিষয়ে অধিকতর সতর্কতা প্রয়োজন। তৃতীয় কাজটি হলো- নিয়ম করে ওষুধ ব্যবহার করা। এ তিনটি কাজ মেনে চললে আশা করা যায় ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। অপারেশনের পর এক মাসের মধ্যে যেকোনো সময় হঠাৎ দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা, চোখ হঠাৎ লাল হওয়া এবং সাথে ব্যথা ও চোখে অনবরত পানি ঝরা ইত্যাদি উপসর্গ হলে বিষয়টি দ্রুত সার্জনের নজরে আনতে হবে। কারণ এগুলো বেশির ভাগ সময় ইনফেকশনের লক্ষণ।
ইদানীং অনেক রোগীই আছেন যারা বেশ কর্মক্ষম। অর্থাৎ নিয়মিত অফিস, পড়ালেখা বা কম্পিউটারে কাজ করে থাকেন। তাদের একটি প্রশ্ন থাকে অপারেশনের কতদিন পরে কাজ করতে পারবেন। জরুরি হলে সপ্তাহখানেক বিশ্রামে থেকে কাজে যেতে পারবেন। তবে স্ক্রিনে কাজ করতে হলে প্রাথমিক অবস্থায় যতটুকু সহনীয় ততটুকু। দ্বিতীয় প্রশ্নটি থাকে, কালো চশমা কতদিন পরতে হবে। অপারশনের পরে যেহেতু আলো বাধাহীনভাবে চোখে প্রবেশ করে তাই আলোতে এক ধরনের অস্বস্তি হয়। তাই কালো চশমা দেয়া হয় যাতে আলোতে চোখ সহনীয় থাকে। আলোতে খারাপ না লাগলে কালো চশমা পরিহার করতে সমস্যা নেই। তৃতীয় বিষয়টি হলো, গোসল করবে কতদিন পর। অনেক সার্জনের পছন্দ এক মাস। তবে ফেকো পদ্ধতিতে অপারেশন হলে দুই সপ্তাহ পরে গোসল করা যেতে পারে। তবে বিষয়টি অপারেশন-পরবর্তী ধাপে সার্জনদের পরামর্শ মেনে স্থির করতে হবে। এ ছাড়াও অনেকেই জানতে চান, একটি অপারেশনের কতদিন পরে অন্য চোখে অপারেশন করা যাবে। এ ক্ষেত্রে জরুরি না হলে অন্তত এক মাস ব্যবধানে করাই উত্তম। যেহেতু অপারেশনের-পরবর্তী এক মাস ইনফেকশনের রিস্ক বিদ্যমান তাই এই সময়ের পরে দ্বিতীয় অপারেশনে যাওয়াই ভালো। তবে এর আগেও করা যাবে। সে ক্ষেত্রে সার্জনের পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
কিছু ক্ষেত্রে ইনফেকশন ছাড়াও দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে। যেমন আগে থেকেই বিদ্যমান ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, কিডনি রোগ ইত্যাদি সমস্যাজনিত রেটিনোপ্যাথি, গ্লোকুমা, মেকুলার ডিজেনারেশন, রেটিনাল ডিটাচমেন্ট, মেকুলার হোল, রক্তনালী ও রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা, ইউভিয়াইটিসের জটিলতা ইত্যাদি। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে বিষয়টিকে মেনে নিয়ে পরবর্তী ধাপের চিকিৎসা নিতে হবে। ছানি অপারেশনের শতভাগ সুফল পেতে তাই অপারেশন-পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ চোখের যতœ নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এমবিবিএস, এফসিপিএস (চক্ষু), এমএস (চক্ষু)
সহযোগী অধ্যাপক, কনসালট্যান্ট-আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার, ৩৮/৩-৪ রিং রোড, আদাবর, ঢাকা ০১৯২০৯৬২৫১২


আরো সংবাদ



premium cement