২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জন্মগত কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার শিশু

-

প্রতিদিন কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাক আমাদের অজান্তে আক্রমণ করে যাচ্ছে। অথচ আমরা দিব্যি সুস্থ হয়ে হাঁটছি। ‘রোগ প্রতিরোধ’ বা ইমিউনিটি নামের ক্ষমতার জন্য আমরা জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হচ্ছি প্রতিনিয়ত। যখন পরাজিত হই তখনই ঘটে বিপত্তি। হালকা সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে মরণঘাতী অসুখ দানা বাঁধে শরীরে।
এই রোগ প্রতিরোধের কিছু ক্ষমতা আমাদের জন্ম থেকেই থাকে। আমাদের চামড়া বাইরের জীবাণু ভেতরে ঢুকতে দেয় না। চোখের অশ্রু, পাকস্থলীর অম্ল ব্যাকটেরিয়া দূর করে। আমাদের রক্তের শ্বেতকণিকার প্রধান কাজই হচ্ছে জীবাণু মেরে ফেলা। বয়সের সাথে সাথে টিকা এবং বিভিন্ন সংক্রমণের মাধ্যমে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরো পোক্ত হয়। একবার ভাবুন, এই প্রতিরোধ ক্ষমতার যদি একটিও ঘাটতি হয়, তাহলে কী হবে। আপনার চামড়া কেটে গেলে জীবাণু ঢুকে যেতে পারে রক্তে। চোখের পানি না থাকলে চোখে ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ। আর যদি রক্তে কোনো প্রতিরোধী কণিকা বা রস না থাকে, সেটিও খুব বড় একটি সমস্যা।
জন্মগতভাবে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কোনো এক বা একাধিক অংশ অনুপস্থিত থাকতে পারে। এ সমস্যাটিকে আমরা বলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি (চজওগঅজণ ওগগটঘঙ উঊঋওঈওঊঘঈণ)। রোগ নির্ণয় ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতির ফলে আগে শনাক্ত করা যেত না এমন অনেক রোগ আজকাল নির্ণয় করা যাচ্ছে। অনেক রোগী পাওয়া যাচ্ছে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই জন্মগত কম। তবে দু’টি ভিন্নধর্মী ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। সব অসুখের সাথে এ সমস্যা মিশিয়ে ফেলা যাবে না এবং কখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমের সন্দেহ করতে হবে সেটি জানতে হবে। আমি ১০টি লক্ষণের কথা বলছি যখন একজন চিকিৎসক সন্দেহ করবেন রোগীর জন্মগত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।
১. এক বছরের মধ্যে চার বা তারও বেশিবার নতুন করে কান পাকা। অর্থাৎ একবার ভালো হয়ে গেছে, আবার নতুন করে কান পাকছে।
২. শিশুর বারবার সাইনোসাইটিসের গুরুতর সমস্যা হচ্ছে। এক বছরে দুই বা ততোধিকবার তীব্র সাইনোসাইটিসের সমস্যা হলে সন্দেহ করতে হবে।
৩. বারবার সমস্যার জন্য শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হচ্ছে অথচ তেমন কোনো ফল হচ্ছে না। এরকমভাবে দুই মাস পার হয়ে গেলে নতুন করে ভাবতে হবে। অবশ্য আদৌ অ্যান্টিবায়োটিক দরকার ছিল কি না, অথবা অ্যান্টিবায়োটিক অতি ব্যবহৃত হচ্ছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে।
৪. এক বছরে কমপক্ষে দু’বার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া।
৫. জন্মের প্রথম বছরে ঠিকমতো লম্বা বা ওজন বৃদ্ধি হচ্ছে না। চিকিৎসক এ ক্ষেত্রে জন্মের ওজন এবং দৈর্ঘ্য, খাদ্যমান, মা-বাবার উচ্চতার বিষয়গুলোও মাথায় রাখবেন।
৬. কোনো শিশুর বারবার চামড়ার ভেতরে বা ভেতরের কোনো অঙ্গে ফোঁড়া হচ্ছে।
৭. জিহ্বা, তালুতে অনেক দিন ধরে সর (ঞঐজটঝঐ) পড়ে আছে। অথবা চামড়ায় ছত্রাকের সংক্রমণ ভালো হচ্ছে না।
৮. সংক্রমণজনিত অসুখ হলেই রক্তের শিরায় অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আবার ৩ নম্বর লক্ষণটি মাথায় রাখতে হবে।
৯. দু’বারের বেশি রক্তে (ঝঊচঞওঈঊগওঅ) বা শরীরের অভ্যন্তরে জীবাণু ছড়িয়ে পড়া।
১০. পরিবারে অন্য কারো জন্মগত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ইতিহাস থাকা।
এই প্রসঙ্গে আরেকটি কথা বলে রাখা উচিত, জন্মগতভাবে সুস্থ শিশুরও পরবর্তীতে সাময়িক বা স্থায়ীভাবে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যেতে পারে। তবে জন্মগতভাবে এ সমস্যাটি এখন আর মোটেও দুর্লভ বলা যাবে না। চিকিৎসক এবং রোগী সবার এ ব্যাপারে আরো সচেতন হওয়া জরুরি।
লেখক : রেজিস্ট্রার, আইসিএমএইচ, মাতুয়াইল, ঢাকা।
ফোন : ০১৯১২২৪২১৬৮


আরো সংবাদ



premium cement