২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ভুটানের রাজাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

-


বাংলাদেশে স্বাধীনতা দিবসে বিশেষ অতিথি হিসেবে আসা ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিল ওয়াংচুককে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহবুদ্দীন বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে রাজার অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনসহ তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিদ্যামান সহযোগিতাবিষয়ক একটি চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে। শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনায় আঞ্চলিক যোগাযোগ ও জ্বালানি সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
সফরসঙ্গীসহ ভুটানের রাজাকে বহনকারী বিশেষ বিমান গতকাল সকাল ১০টা ১০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে পৌঁছায়। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও তার স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিল ওয়াংচুক ও রাণী জেৎসুন পেমাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। রাষ্ট্রীয় অতিথিকে অভ্যর্থনার অংশ হিসেবে রাজা বিমান থেকে নামার পর ২১ বার তোপধ্বনি করা হয়। পরে সশস্ত্রবাহিনীর একটি চৌকস দল অতিথিকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।

বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ভুটানের রাজা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে যান। সেখানে রাজা ও রানীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা এবং নাতনী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। ভুটানের রাজা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তিনি জাদুঘর ঘুরে দেখেন এবং স্মারক বইয়ে সই করেন।
এরপর হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে ভুটানের রাজার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রাজা ওয়াংচুক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে প্রথমে একান্তে এবং পরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠক শেষে বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য ১৯০ একর জায়গার ওপর বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে বাংলাদেশের উপহার হিসেবে একটি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা এবং ভোক্তা সুরক্ষায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতাবিষয়ক এমওইউ সই হয়। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিদ্যামান সহযোগিতা চুক্তিটি নবায়ন করা হয়।
ভুটানের রাজার সাথে সাক্ষাৎ শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভুটান থেকে আমরা জলবিদ্যুৎ আমদানি করতে চাইছি। আমরা ইতোমধ্যে নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য চুক্তি সই করেছি। এক্ষেত্রে ভারত আমাদের সহায়তা করেছে। ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির সময়ও ভারত আমাদের সহায়তা করবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, ভুটানের রাজার এবারের সফরকালে জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য চুক্তি সই হবে না। আরো কিছু কাজ বাকি আছে। আমরা আশা করছি এটি খুব শিগগিরই সম্পন্ন হবে।

হাছান মাহমুদ বলেন, যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতায় ভুটান যাতে আবারো যুক্ত হয়, সে জন্য রাজাকে অনুরোধ জানিয়েছি। মানুষে-মানুষে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য আমি বিবিআইএনে যোগ দেয়ার বিষয়টি আলোচনায় এনেছি। ভুটানের রাজা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে শুনেছেন।
প্রসঙ্গত, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপের কথা বিবেচনা করে ভুটানের পার্লামেন্ট বিবিআইএন মোটর ভেইক্যাল অ্যাগ্রিমেন্ট (এমভিএ) অনুমোদন করা থেকে বিরত রয়েছে। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভুটান বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগ সীমিত রাখার পক্ষপাতি। পর্যটন শিল্পকেও তারা খুব বেশি উৎসাহিত করে না। এ জন্য আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সংখ্যাও সীমিত রাখে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভুটানে বিমানের ফ্লাইট সপ্তাহে মাত্র দু’টি। এটি বাড়ানোর বিষয়ে কথা হয়েছে। তবে ভুটানে বাংলাদেশীদের ট্রাভেল ট্যাক্স কমানোর বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
ভুটানের রাজার সফরের ওপর দেয়া যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, আগামী বছর থেকে বাংলাদেশের সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে এমবিবিএস কোর্সে ভুটানের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ করা আসন সংখ্যা ২২ থেকে বাড়িয়ে ৩০ করা হবে। প্রতি বছর ভুটানের ফরেন সার্ভিস অফিসারদের জন্য বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রশিক্ষণের জন্য দু’টি আসন বরাদ্দ করা হবে। বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি ভুটানে একটি কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা দেবে। বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিলে ভুটানের কৃষিবিষয়ক কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মেয়াদে তিন বছরব্যাপী প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। একই সাথে ভুটানের সরকারি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ল্যাপটপ ও ট্যাবসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস উপহার হিসেবে দেবে বাংলাদেশ।

কর্মসূচি অনুযায়ী, আজ সকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে ভুটানের রাজা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর তিনি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করবেন। বিকেলে তিনি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহবুদ্দীনের সাথে বৈঠক করবেন। ভুটানের রাজার সম্মানে রাষ্ট্রপতি ইফতার ও নৈশভোজের আয়োজন করেছেন।
বুধবার ভুটানের রাজা পদ্মা সেতু এবং নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করবেন। বৃহস্পতিবার তিনি কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করবেন। একই দিন রাজা ওয়াংচুক স্থলসীমান্ত পথে ভারত হয়ে ভুটানে যাবেন। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ বাংলাদেশ সীমান্তে তাকে বিদায় জানাবেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement