২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সিরিয়া সঙ্কটের উপেক্ষা আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি বাড়াবে : জাতিসঙ্ঘ

-

সিরিয়ার বাসিন্দা এবং মানবিক সহায়তা সমন্বয়কারী আদম আবদুল মৌলা বলেছেন, সিরিয়ার সাহায্যের আহ্বান উপেক্ষা করা এই অঞ্চলে এবং এর বাইরেও সম্প্রতি দেখা সন্ত্রাসবাদের পুনরুত্থানসহ একটি বিপজ্জনক, অস্থিতিশীল প্রভাব ফেলবে। শুক্রবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। ভয়েস অব আমেরিকা।
তিনি বলেন, ‘সিরিয়ার সঙ্কট বিশ্বের বেসামরিক নাগরিকদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনাগুলোর অন্যতম। সিরিয়ার বিভিন্ন অংশে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে এবং সম্প্রতি, বিশেষ করে উত্তরে এটি প্রচণ্ডভাবে বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে।’ জাতিসঙ্ঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়বিষয়ক কার্যালয়ের (ওসিএইচএ) মতে, সঙ্ঘাতের কারণে ২০২৩ সালের প্রথম ১০ মাসে ৮৮ জন নারী ও ১১৫টি শিশুসহ ৪৫৪ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। এই হতাহতের ঘটনাগুলো সিরিয়ার জনসংখ্যার ওপর যুদ্ধের কারণে নিহতের সংখ্যার সর্বসাম্প্রতিক বহিপ্রকাশ।
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার ১৩ বছরেরও বেশি সময় পরে জাতিসঙ্ঘ বলেছে, দেশটি বেসামরিক নাগরিকদের জন্য আরো বিপজ্জনক জায়গায় পরিণত হয়েছে। তারা উল্লেখ করেছে, সঙ্ঘাতটি শুরু করার জন্য দায়ী প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অত্যাচারী সরকার এখনো ক্ষমতায় আছে এবং একাধিক অঙ্গনে ক্রমাগত বৈরিতা বাড়িয়ে চলেছে।
জাতিসঙ্ঘ ধারণা করে, ২০১১ সালের ১৫ মার্চ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তিন লাখ মানুষ নিহত হয়েছে, এক কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সিরিয়ার ভেতরে ৬৮ লাখ এবং পাঁচটি প্রতিবেশী দেশে শরণার্থী হিসেবে রয়েছে ৫৪ লাখ মানুষ। রাজধানী দামেস্ক থেকে রাখা বক্তব্যে আদম আবদুল মৌলা বলেন, ‘আজ সিরিয়ায় প্রায় এক কোটি ৬৭ লাখ মানুষের যেকোনো ধরনের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। তিনি উল্লেখ করেন প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ তীব্র ক্ষুধায় ভুগছে।
যদিও সিরিয়ার বেসামরিক জনসংখ্যার বিপর্যয়কর পরিস্থিতির জন্য মানবসৃষ্ট দুর্যোগগুলো মূলত দায়ী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জলবায়ুর প্রভাবগুলো এই দুর্দশাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। ওসিএইচএ বলছে, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিধ্বংসী ভূমিকম্পে প্রায় ছয় হাজার লোকের মৃত্যু হয় এবং ১২ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি আহত হয়। যা পরিষেবা ব্যবস্থাগুলোর ওপর চাপ বাড়ায়, বাস্তুচ্যুতি ঘটায় এবং ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।
তারা আরো উল্লেøখ করে, ‘অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভয়াবহ থাকা অবস্থায় অনেক পরিবার তাদের প্রধান উপার্জনকারীকে হারিয়েছে।’ ওসিএইচএ বলছে, গত সপ্তাহে দু’দিনের প্রবল বন্যা ইদলিব এবং উত্তর আলেপ্পোর বেশ কয়েকটি শরণার্থী শিবিরে ১৫ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি লোককে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এ বছর উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় ১০০টিরও বেশি বন্যায় তিন হাজার ৩০০টিরও বেশি পরিবারের তাঁবু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৫০০টি ধ্বংস হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘ এই বছর এক কোটি ৬৭ লাখ সিরীয়র মধ্যে এক কোটি আট লাখ মানুষকে জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য ৪০৭ কোটি ডলারের আবেদন করছে। আবদুল মৌলা সতর্ক করেন, সিরিয়ার সাহায্যের আহ্বান উপেক্ষা করা এই অঞ্চলে এবং এর বাইরেও সম্প্রতি দেখা সন্ত্রাসবাদের পুনরুত্থানসহ একটি বিপজ্জনক, অস্থিতিশীল প্রভাব ফেলবে।
তিনি আরো সতর্ক করেন, সিরিয়ার দুর্দশা থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়ার ফলে লেবানন এবং জর্দানের মতো দেশে শরণার্থীদের একটি নতুন ঢেউ আসতে পারে। এই দেশগুলো ইতোমধ্যে প্রচুরসংখ্যক সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার চাপে ভুগছে। তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালে আমরা ইউরোপে আশ্রয়ের জন্য এক লাখ ৮১ হাজার নতুন আবেদন দেখেছি। এটি ২০২২ সালের তুলনায় ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধির প্রকাশ।


আরো সংবাদ



premium cement