২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বেড়েছে সব ধরনের যানবাহন : চেকপোস্টের পেছনে দীর্ঘ যানজট

কঠোর লকডাউনের সপ্তম দিন
-

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারঘোষিত কঠোর লকডাউনের সপ্তম দিনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বাস ছাড়া বাকি সব ধরনের যানবাহন চলাচলের সংখ্যা আরো বেড়েছে। একই সাথে কমে গেছে চেকপোস্টের সংখ্যা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে প্রচুর পরিমাণ প্রাইভেটকার, নামীদামি ব্র্যান্ডের জিপ, মাইক্রোবাস, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পিকআপ ভ্যান, ছোট-বড় ট্রাক চলাচল করেছে। এছাড়া পুরো রাস্তাই যেন ছিল মোটরসাইকেল এবং অগণিত রিকশার দখলে। কোনো চেকপোস্টের পেছনে লম্বা যানজট সৃষ্টি হতেও দেখা গেছে। এদিকে মার্কেট শপিংমলগুলো বন্ধ থাকলেও খুলে গেছে অলি-গলির প্রায় সব দোকান। এমনকি বিকেলের পরে এসব স্থানে আগের মতোই বসছে চটপটি-ফুসকাসহ নানা ধরনের খাবারের দোকানও। রাজধানীর মিরপুর, বিজয়সরণি, তেজগাঁও, ফার্মগেট, বাংলামোটর, মগবাজার, পল্টন ও মতিঝিল এলাকা ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
চলমান কঠোর লকডাউনের প্রথম কয়েক দিন বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি চালানো হয়েছিল। বর্তমানে সেসব চেকপোস্ট অনেকটাই শিথিল হয়ে গেছে। আবার কোনো সড়কে ৩-৪টি চেকপোস্ট থাকলে বর্তমানে সেখানে দু-একটি চেকপোস্ট দেখা গেছে। তবে কোথাও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চললে কেবল সেখানেই যানবাহন ও জনচলাচলে কঠোরতা লক্ষ করা গেছে। কিছু কিছু চেকপোস্টে লকডাউনে বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চাওয়ার চেয়ে ট্রাফিক পুলিশকে গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মামলা দিতে দেখা গেছে।
বিকেলে তেজগাঁও সাতরাস্তায় পলিটেকনিক্যালের সামনে দেখা যায় লম্বা যানজট। চেকপোস্টের কারণে সেখান দিয়ে একটি করে গাড়ি পার হতে হচ্ছে। যার কারণে রাস্তায় প্রচুর গাড়ি থাকায় চেকপোস্টের পেছনে লম্বা লাইন লেগে যাচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ের মতোই বিজয়সরণি এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত দেখা গেছে ট্রাফিক পুলিশদের। দুপুরে শেখ রাসেল স্কয়ারে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানেও যানজট দেখা যায়।
এদিকে লকডাউন অমান্য করে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরার অভিযোগে ৫৬৮ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কয়েকটি থানা পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে বলে ডিএমপির জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার ফারুক হোসেন জানান। তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অপ্রয়োজনে ঘোরাফেরা ও স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করায় ৫৬৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া মোবাইল কোর্টে ২০৬ জনকে তিন লাখ ৪০ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ ৪৩১টি গাড়িকে ৯ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে।
সাতরাস্তা চেকপোস্টে দায়িত্বরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ব্যারিকেড দিয়ে চেকপোস্ট বসানোতে রাস্তা সরু হওয়ায় গাড়ির দীর্ঘ লাইন লেগে যাচ্ছে। আর যদি প্রতিটি গাড়ি দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তবে এখানে যানজট লেগে যাবে। তারপরও সব গাড়ি ছেড়ে দেয়া হচ্ছে না। অনেক গাড়ি দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, কিছু অফিস খোলা রয়েছে। আর গতকাল বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস হওয়ায় মানুষের মুভমেন্ট বেশি হয়েছে। যার কারণে হয়তো মানুষ ও যানবাহনের চাপ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা জানান, কঠোর লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও এক শ্রেণীর লোক সরকারি বিধিনিষেধের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে চলছে। মানছে না সরকারি আইন কানুন। আর তাদের সহায়তা করছে এক শ্রেণীর সুবিধাগ্রহণকারী মহল। চলমান করোনাকালীন পরিস্থিতিতে সংক্রমণ বাড়তে থাকলেও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল বিশ্বরোড থেকে মাইক্রোবাসে করে শত শত মানুষ ঢাকায় পাড়ি দিচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিশ্বরোডের একটি প্রভাবশালী চক্রের সহযোগিতায় প্রতিদিন শত শত যাত্রী ঢাকায় যাচ্ছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড থেকে মাইক্রোস্ট্যান্ডে কিছু ব্যক্তি বিশেষ সুবিধা গ্রহণ করে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে ৩-৪ গুণ বেশি ভাড়া নিয়ে ঢাকার যাত্রী পাঠাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ওই প্রভাবশালী মহলটি ৫০ শতাংশ কমিশন পেয়ে থাকে। যাত্রীরা মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারে উঠতে তাদের ৫-৬ শত টাকা দিতে হচ্ছে। খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজালাল আলম বলেন, এভাবে যাত্রীর চলাফেরা নিষেধ। বিশ্বরোড মোড়ে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন।
মুন্সীগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, কঠোর লকডাউনের সপ্তম দিনে গতকাল ফেরিঘাটে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল উভয়মুখী। একদিকে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ তো অপর দিকে বিভিন্ন প্রয়োজনে ছুটছে বাড়িতে। এতে করে শিমুলিয়া বাংলাবাজার নৌরুটে উভয়মুখী যাত্রীদের চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। এদিকে যাত্রীর চাপ ও ভাড়াতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।
উভয় পাড়ে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী গাড়িসহ ছয় শতাধিক যানবাহন । তবে মানা হচ্ছে না কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি। ঘাট এলাকায় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা থাকলেও তাদের তেমন কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি। তবে শিমুলিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ছয়টি ফেরির মাধ্যমেই যানবাহন ও যাত্রীদের পারাপার করা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement