০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫
`


৫৪তম দেশ হিসেবে করোনার টিকাদান শুরু করল বাংলাদেশ

-

করোনার টিকাদান শুরুর দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৪তম। গতকাল বুধবার একজন নার্সকে টিকা দেয়া শুরু করার মধ্যদিয়ে বিশ্বের ২০০-এর বেশি দেশের মধ্যে এই স্থানটি করে নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে যোগ দিয়ে টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। তার সামনে প্রথম পাঁচজন টিকা নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সবার সাথে কথা বলেন এবং সবাইকে উৎসাহ দেন। যুক্তরাষ্ট্রের ব্লøুমবার্গ অনলাইনের তথ্য অনুসারে গতকাল পর্যন্ত বিশ্বের ৫৭টি দেশে সাত কোটি ১৩ লাখ (৭১.৩ মিলিয়ন) মানুষকে করোনার টিকা দেয়া হয়েছে। দৈনিক গড়ে ৩৫ লাখ ৭০ হাজার মানুষকে টিকা দেয়া হচ্ছে এই ৫৭টি দেশে। গত ৮ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে প্রথম করোনার টিকা দেয়া হয় ব্রিটেনে। বাংলাদেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকা গত ২৫ জানুয়ারি আনা হয় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে। সেই টিকাটিই গতকাল প্রথম দেয়া হলো।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে রুনু ভেরোনিকা কস্তা নামের একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স প্রথম করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে নাম লেখান। এরপর টিকা নিয়েছেন একই হাসপাতালের ডা: আহমেদ লুৎফুল মোবেন। তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে টিকা নিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। চতুর্থ ব্যক্তি হিসেবে টিকা নিয়েছেন মো: দিদারুল ইসলাম নামের একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট এবং পঞ্চম ব্যক্তি হিসেবে টিকাটি নিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ। এই পাঁচজন ছাড়াও গতকাল আরো ২১ জন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকা কোভিশিল্ড নিয়েছেন।
গতকাল টিকা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী টিকা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি আগে নিইনি। আগে নিলে বলবে, আগে নিলো কাউকে দিলো না। সবাইকে দিয়ে নিই, তারপর নেবো।’
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও মুগদা জেনারেল হাসপাতাল হাসপাতালে ৫০০ জনকে টিকা দেয়া হবে। এ উপলক্ষে আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন : আশার আলো ও প্রাসঙ্গিক কথা’ শীর্ষক একটি বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত টিকা গ্রহণকারীদের কারো মধ্যে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি বলে জানা গেছে।
আরো যারা গতকাল টিকা নিয়েছেন তারা হলেনÑ মো: মাজেদুল ইসলাম, সানজিদা সুলতানা, আব্দুল মালেক, মো: আব্দুল হালিম, মো: এনামুল হাসান, মুফতি হামজা ইসলাম, শাম্মী আকতার, মুহাম্মদ শাহজাহান, ডা: আল মামুন শাহরিয়ার সরকার, ডা: ফরিদা ইয়াসমিন, ডা: আফরোজা জাহিন, ডা: অরূপ রতন চৌধুরী, অধ্যাপক ডা: আব্দুল কাদের খান, মো: আব্দুর রহিম, কাজী জসিম উদ্দিন, মোশারফ হোসাইন, মো: তারা মিয়া, মো: রফিকুল আলম, মাসুদ রায়হান পলাশ, মো: আল মাসুম মোল্লা, আমিরুল মোমেনিন, রীনা সরকার, মুন্নী খাতুন, মো: আশিকুল ইসলাম, দেওয়ান হেমায়েত হোসাইন। তালিকায় হাফিজ আহমেদ মজুমদার এমপি, মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমানের নাম থাকলেও এই দু’জন গতকাল করোনার টিকা নেননি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের কাছে মোট ৭০ লাখ ডোজ করোনার টিকা কোভিশিল্ড রয়েছে। ৫০ টাকা ডোজ সরকারের কেনা এবং অবশিষ্ট ২০ লাখ ভারত সরকারের উপহার হিসেবে দেয়া। সবগুলো টিকাই সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি।
করোনায় মৃত্যু ১৭, শনাক্ত ৫২৮ : দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরো ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গতকাল বুধবার পর্যন্ত দেশে করোনায় মারা গেছেন মোট আট হাজার ৭২ জন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৫২৮ জন। এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছেন পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার ৪৪৪ জন। একই সময়ে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৫০৯ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন চার লাখ ৭৭ হাজার ৯৩৫ জন। গতকাল বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা সংগৃহীত হয়েছে ১৫ হাজার ৯৩২টি। আর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৫ হাজার ৭২০টি। এখন পর্যন্ত করোনার মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩৬ লাখ ৫০৮টি। বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, দেশে বর্তমানে ২০০টি পরীক্ষাগারে করোনার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। এর মধ্যে আরটি-পিসিআরের মাধ্যমে পরীক্ষা হচ্ছে ১১৬টি পরীক্ষাগারে, জিন-এক্সপার্ট মেশিনের মাধ্যমে পরীক্ষা হচ্ছে ২৮টি পরীক্ষাগারে, আর র্যাপিড অ্যান্টিজেনের মাধ্যমে পরীক্ষা হচ্ছে ৫৬টি পরীক্ষাগারে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার তিন দশমিক ৩৬ শতাংশ, আর এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৫১ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৭ জনের মধ্যে পুরুষ আট ও নারী ৯ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ছয় হাজার ১১৫ জন পুরুষ এবং এক হাজার ৯৫৭ জন নারী মারা গেছেন। শতকরা হিসাবে পুরুষের মৃত্যুহার ৭৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ আর নারীর মৃত্যুহার ২৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। গতকাল মারা যাওয়া ১৭ জনের মধ্যে বয়স বিবেচনায় দেখা গেছে ষাটোর্ধ্ব বয়সী রয়েছেন ৯ জন, ৫১-৬০ বছরের মধ্যে আছেন পাঁচজন, ৪১-৫০ বছরের মধ্যে আছেন দুইজন এবং ৩১-৪০ বছরের মধ্যে আছেন একজন। মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের আছেন ১৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের দুইজন, বরিশাল ও রংপুর বিভাগের আছেন একজন করে। তারা সবাই হাসপাতালে মারা গেছেন। দেশে গত ৮ মার্চ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল