১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


ডেঙ্গুভাইরাস সংক্রমণ কি করোনায় প্রতিরক্ষা দেয়?

-

ব্রাজিলে সম্প্রতি চালানো একটা গবেষণায় দেখা যায়, আগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রবণতা অপেক্ষাকৃত কম এবং এই সংক্রমণ থেকে মারাত্মক করোনায় মৃত্যুহারও কম। এই গবেষণাপত্রটি প্রি-প্রিন্ট সার্ভার সবফজীরাতে প্রকাশিত হয়েছে ২১ সেপ্টেম্বর এবং বর্তমানে একটি পিয়ার রিভিউড জার্নালে তা প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের দিক দিয়ে ব্রাজিল রয়েছে তৃতীয় স্থানে। তবে দেশটিতে সংক্রমণ বিস্তারে আঞ্চলিক অসামঞ্জস্যতা দেখা যায় প্রকটভাবে, যা গাণিতিক মডেলে অনিয়ম হিসেবে গণ্য হয়। ব্রাজিলের বেশ কিছু রাজ্য বা শহরে করোনা সংক্রমণ অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি। আবার কিছু কিছু অঞ্চলে এই সংক্রমণ খুবই কম। করোনা সংক্রমণে এ ধরনের আঞ্চলিক বিস্তার নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশেও দেখা যায় কিছু জেলা বা শহর করোনায় অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি আক্রান্ত। অবশ্য এর অনেক কারণ থাকতে পারে।
তবে ব্রাজিলের গবেষকদল সংক্রমণ বিস্তারে কয়েকটি কৌশলগত কারণ ছাড়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ প্রতিরোধবিষয়ক কারণ উদঘাটন করেছে। গোটা ব্রাজিলে চালানো ইপিডেমিওলোজিক্যাল এবং সেরোকনভার্সন ডাটাবেজ সার্ভেতে তারা দেখতে পান ব্রাজিলের যেসব অঞ্চল ২০১৯-২০ সময়টিতে ডেঙ্গু মহামারীতে আক্রান্ত হয়েছিল সেসব অঞ্চলে মার্চে শুরু হওয়া করোনা সংক্রমণ এবং পরবর্তীতে তা বিস্তারের গতি অন্যান্য ডেঙ্গুমুক্ত অঞ্চলের চেয়ে অনেক কম। ইমিউনোলজিক্যাল রেকর্ড থেকে দেখা যায়, মূলত যাদের শরীরে ডেঙ্গুভাইরাসের অ্যান্টিবডি (ওমগ) ছিল তারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে কম। একইভাবে ব্রাজিলের যেসব শহরে মানুষের শরীরে ডেঙ্গুভাইরাসের অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়, সেসব শহরে করোনা সংক্রমণও গড়পড়তায় অনেক কম।
গবেষকরা দেখার চেষ্টা করেন আরেকটি মশাবাহিত ভাইরাস চিকুনগুনিয়া সংক্রমণের সাথে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনো সম্পর্ক আছে কি না। তারা একইভাবে ভৌগোলিক এবং ইমিউনোলজিক্যাল সার্ভে চালিয়ে দেখতে পান, চিকুনগুনিয়া সংক্রমণ করোনাভাইরাস সংক্রমণে কোনো প্রভাব ফেলে না। অর্থাৎ ডেঙ্গুভাইরাসের সংক্রমণে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি করোনাভাইরাসের বিপরীতে যে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, তা চিকুনগুনিয়ায় তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি তা করতে পারে না।
ডেঙ্গু জ্বরপ্রবণ অঞ্চলগুলো যে শুধু ব্রাজিলেই করোনা মহামারীর তীব্রতা থেকে রক্ষা পেয়েছে, তাই নয়; বরং এমনটি দেখা গেছে পৃথিবীর আরো ১৫টি ডেঙ্গু আক্রান্ত দেশেও। এদের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা এবং প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরসংলগ্ন দ্বীপগুলোতে দেখা যায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব ওই সব অঞ্চলকে করোনা মহামারী থেকে রক্ষা করেছে। এই ফলাফল থেকে এটি অনেকটা পরিষ্কার যে, ডেঙ্গু জ্বরের বিপরীতে তৈরি হওয়া রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব : গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে রেকর্ডসংখ্যক প্রায় ৮২ হাজার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় এবং নভেম্বরে সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখে, যার ভেতরে অর্ধেকের বেশি রোগীই ছিল ঢাকায়। ২০১৯ সালের আগস্ট-ডিসেম্বরে ঢাকায় এলাকা অনুযায়ী ডেঙ্গুর সংক্রমণের বিস্তার কেমন ছিল এবং এ বছর ওই সব স্থানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কেমন? বস্তি এলাকাগুলোতে কি গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি ছিল? এ বছর ঢাকার বস্তি এলাকাগুলোতে করোনা সংক্রমণের হার কেমন? ধারণা করা হয় রাজধানীর বস্তি এলাকাগুলোতে বসবাসকারীদের ভেতরে করোনা সংক্রমণ অপেক্ষাকৃত অনেক কম। ঢাকায় একটা সংক্রমণ সার্ভে করলে আসল তথ্যটা জানা যাবে যে ব্রাজিলের মতো ঢাকার বস্তিগুলোতেও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব করোনা সংক্রমণে কোনো ভূমিকা রাখছে কি না।
ডেঙ্গু ইমিউনিটি কিভাবে করোনা প্রতিরোধ করে?
ডেঙ্গু ভাইরাস ও করোনাভাইরাস দু’টি দুই ধরনের। ডেঙ্গু হচ্ছে ফ্ল্যাভিভাইরাস, যা মানুষে ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে; আর করোনাভাইরাস হলো করোনাভিরিডি গোত্রের রেসপিরেটরি ভাইরাস, যা মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় হাঁচি কাশির মাধ্যমে। দুটো ভাইরাস দুই গোত্রের হলেও এরা উভয়ই পজিটিভ সেন্স আরএনএ ভাইরাস। এই দুটো ভাইরাসই রক্তনালীর এন্ডোথেলিয়াল কোষকে সংক্রমিত করে এবং সিভিয়ার রোগের ক্ষেত্রে সাইটোকাইন স্টোর্ম সংগঠনের মাধ্যমে মৃত্যু ঘটাতে পারে। ডেঙ্গু ও করোনা এই দু’টি ভাইরাসই সিভিয়ার রোগে রক্ত জমাট বাঁধায়। রক্ত পরীক্ষায় এই দুই ভাইরাসের ক্ষেত্রেই ডি-ডাইমারের উপস্থিতি বেড়ে যায়। অর্থাৎ ভাইরাসের গৌত্রগত ভিন্নতা থাকলেও এদের দ্বারা সংগঠিত ক্লিনিক্যাল সিম্পটমগুলোয় অনেক সাদৃশ্য রয়েছে।
অন্য দিকে ল্যাবরেটরি গবেষণায় দেখা যায় দুটো দুই ধরনের ভাইরাস হলেও ডেঙ্গুভাইরাস ও করোনাভাইরাসের নিউক্লিয়োক্যাপসিড প্রোটিনে অনেকটা সাদৃশ্য রয়েছে। ধারণা করা হয় এই সাদৃশ্যের কারণে ডেঙ্গুভাইরাসের নিউক্লিয়োক্যাপসিড প্রোটিনের বিপরীতে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি এবং টি-সেল ইমিউনিটি সম্ভবত করোনাভাইরাসের বিপরীতেও ইমিউনিটি দেয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে মার্স ও সার্স ভাইরাসের বিপরীতে তৈরি হওয়া টি-সেলগুলো করোনাভাইরাসের বিপরীতেও ইমিউন রিঅ্যাকশন করে। আবার এটাও দেখা গেছে, অন্যান্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে তৈরি হওয়া ইমিউনিটি নোভেল করোনাভাইরাসের বিপরীতেও কার্যকরী (ইগঔ, ১৭ সেপ্টেম্বর)। এর আগে অ্যান্টিবডি টেস্টে দেখা যায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি ক্রস রিয়্যাক্ট করে। সুতরাং বলা যায়, ডেঙ্গুর বিপরীতে তৈরি হওয়া নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি এবং সেল-মেডিয়েটেড ইমিউনিটি কিছুটা হলেও করোনাভাইরাসের বিপরীতে কার্যকরী হতে পারে।
ডা: খোন্দকার মেহেদী আকরাম, এমবিবিএস, এমএসসি, পিএইচডি, সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, শেফিল্ড ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্য


আরো সংবাদ



premium cement
বাংলাদেশের জন্য মনোনীত মার্কিন বিশেষ রাষ্ট্রদূত মিল আগে যেসব দায়িত্ব পালন করেছেন বান্দরবানে কেএনএফের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেন বম উজিরপুরে বিশ্বনবীকে কটূক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল তামিমের ব্যাটে বাংলাদেশের উড়ন্ত শুরু নাটোরে এক প্রার্থীর সমর্থককে মারপিট করায় অপর প্রার্থী গ্রেফতার বিশ্বকাপ দলে সুযোগ না পেয়ে অবসরে নিউজিল্যান্ডের ওপেনার কক্সবাজারে ৩ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ সরকারের জনসমর্থন শূন্যের কোঠায় : গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দস্যুর দখলে লক্ষ্মীপুরের দ্বীপ চর মেঘা, বিপাকে দেড়শতাধিক কৃষক রেলপথ উন্নয়নে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করল চার দেশ একাদশে ৩ পরিবর্তন, টসে হেরে ব্যাট করছে বাংলাদেশ

সকল