২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জার্মানিতে শরণার্থী সঙ্কট সামলাতে নতুন উদ্যোগ

জার্মানিতে শরণার্থী সঙ্কট সামলাতে নতুন উদ্যোগ। - ছবি : সংগৃহীত

শরণার্থীদের সংখ্যা বেড়ে চলায় হিমশিম খাচ্ছে জার্মানির পৌর স্তরের প্রশাসন। বুধবার চ্যান্সেলর ও মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে এর সমাধান সম্ভব না হলেও ফেডারেল সরকার বাড়তি অনুদান দিতে রাজি হয়েছে।

শরণার্থীদের ঢল সত্ত্বেও ইউরোপিয় ইউনিয়ন এখনো সম্মিলিতভাবে ওই সঙ্কট সামলাতে ব্যর্থ হচ্ছে। পারস্পরিক সংহতির ভিত্তিতে আগত শরণার্থীদের বণ্টনের ক্ষেত্রেও কোনো ঐকমত্য অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ওই সঙ্কট আরো বড় আকার ধারণ করেছে। ফলে জার্মানির মতো দেশ শরণার্থীদের ঢল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। বিষয়টি ওই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।

জার্মানির ফেডারেল সরকারের শরণার্থী-সংক্রান্ত নীতি ও সিদ্ধান্তের প্রভাব আর মানতে চাইছে না রাজ্য সরকারগুলো। বুধবার জার্মান চ্যান্সেলর ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের এক বৈঠকে দলমতনির্বিশেষে ফেডারেল ও রাজ্য সরকারের মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যায়। এমনকি জার্মানির জোট সরকারের প্রধান শরিক দল এসপিডির মুখ্যমন্ত্রীরাও চ্যান্সেলর শলৎসের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত আপস মীমাংসার প্রশ্নে ঐকমত্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।

জার্মানির রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীরা শরণার্থী গ্রহণ, তাদের আশ্রয়, সমাজের মূল স্রোতে তাদের সম্পৃক্ত করার উদ্যোগের বিপুল ব্যয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে পৌর স্তরে ওই দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে অনেক শহর, জেলা ও গ্রাম কর্তৃপক্ষ নাজেহাল হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন।

তারা জানিয়ে দেন, ফেডারেল সরকারের বাড়তি আর্থিক সহায়তা ছাড়া ওই গুরুদায়িত্ব সামলানো আর সম্ভব নয়। অথচ চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সরকার রাজ্য ও পৌর কর্তৃরক্ষের দাবি গ্রাহ্য করছিল না। বুধবারের দীর্ঘ বৈঠকের পর নতি স্বীকার করে ফেডারেল সরকার চলতি বছর ১৬টি রাজ্যের জন্য বাড়তি ১০০ কোটি ইউরো মঞ্জুর করেছে। একই সাথে ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলো শরণার্থী সংক্রান্ত নীতির কাঠামোর সংস্কারের লক্ষ্যে ধাপে ধাপে আরো কিছু পদক্ষেপ কার্যকর করার প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জার্মানিতে শরণার্থীর ঢলের ক্ষেত্রে কোনো ধারাবাহিকতা না থাকায় বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কখনো বেশি শরণার্থীর জন্য প্রস্তুতি নিলে বাস্তবে তাদের সংখ্যা কম থাকছে। যেমন চলতি বছর জানুয়ারি মাসে ফেডারেল কর্তৃপক্ষ প্রায় এক লাখ দুই হাজার শরণার্থীর আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণ করেছে, যা গত বছর একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৭৮ ভাগ বেশি। আবার প্রস্তুতির মাত্রা কমালে আচমকা বিপুল চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা তাই এক ‘ডায়নামিক’ বা গতিশীল নীতির দাবি করছেন। এককালীন অনুদানের বদলে শরণার্থীদের জন্য মাথাপিছু ব্যয় স্থির করে বাস্তব সংখ্যা অনুযায়ী ফেডারেল সরকারের আর্থিক সহায়তা চাইছেন মুখ্যমন্ত্রীরা।

আপাতত ওই দাবির বিষয়ে কোনো বোঝাপড়া না হলেও ভবিষ্যতে এমন ব্যবস্থা চালু করার লক্ষ্যে কিছু প্রক্রিয়াগত পরিবর্তনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে।

প্রথমত, সব রাজ্যকে এক ডিজিটাল কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যার মাধ্যমে আগত শরণার্থী-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আদানপ্রদান করা সম্ভব হবে। তাছাড়া ফেডারেল পুলিশ বাহিনীর হাতে কিছু বাড়তি ক্ষমতা তুলে দিয়ে বিচার ও অভিবাসন কর্তৃপক্ষের মধ্যে তথ্য বিনিময় আরো সহজ করা হবে। তারপর, আগামী নভেম্বর মাসে সমাধানসূত্র অর্জনের চেষ্টা চালানো হবে। সংসদে বিরোধী পক্ষের মতে, এত বিলম্বের কারণে ২০২৪ সালে নতুন কাঠামো কার্যকর করা যথেষ্ট কঠিন হবে। পৌর স্তরের প্রশাসনগুলোকেও তত দিন বাড়তি চাপ সামলাতে হবে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে।


আরো সংবাদ



premium cement