২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ওয়াশিংটন ‘পিঠে ছুরি মারায়’ ফ্রান্সে ক্ষোভ

অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাথে অনলাইন আলোচনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। - ছবি : সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক স্তরে মনোমালিন্য কীভাবে কূটনৈতিক সম্পর্কের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান উত্তেজনা তা স্পষ্ট করে দিচ্ছে। গোটা সমস্যার মূলে রয়েছে একটি পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন। চীনের বেড়ে চলা আগ্রাসী মনোভাবের মুখে আত্মরক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়াকে এমন রক্ষাকবচ বিক্রি করার কথা ছিল ফ্রান্সের। ২০১৬ সালেই এই মর্মে বোঝাপড়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন ‘ছলে-বলে-কৌশলে' সেই সুযোগ ছিনিয়ে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে সেই সাবমেরিন বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠছে। বুধবার এই তিন দেশ মিলে নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতার অঙ্গীকার করেছে।

এই আঁতাতের ফলে আলোচনায় অগ্রগতি সত্ত্বেও চার কোটি ডলার মূল্যের নিউক্লিয়ার সাবমেরিনের বরাত ফ্রান্সের হাতছাড়া হয়ে গেল। বলা বাহুল্য, ফ্রান্স তথা গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ওয়াশিংটনের এমন আচরণে বিরক্তি ও ক্ষোভ অনুভব করছে। ফ্রান্স এমন সিদ্ধান্তকে পিঠে ছুরি মারার সাথে তুলনা করেছে। ইইউ এ ক্ষেত্রেও ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে শলা-পরামর্শের উদ্যোগের অভাব বোধ করছে। বাইডেনও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট' নীতি আঁকড়ে ধরে রয়েছেন বলে অনেকে অভিযোগ করছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পরেও অ্যালান্টিকের দুই প্রান্তের মধ্যে ক্ষতবিক্ষত সম্পর্ক কিছুতেই পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারছে না। ইউরোপীয় সহযোগীদের সাথে শলা-পরামর্শ ছাড়াই বাইডেন প্রশাসন যেভাবে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে ইউরোপের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করেছিল, বার্লিন, ব্রাসেলস বা প্যারিসে সেটা ভালো চোখে দেখা হয়নি।

এবার সাবমেরিন সরবরাহের বরাত ‘ছিনিয়ে' নিয়ে ওয়াশিংটন আবার বিরক্তি সৃষ্টি করলো।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবারই ইইউ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাথে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করার নতুন কৌশল ঘোষণা করেছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ফ্রান্সকে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অ্যামেরিকার গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ওয়াশিংটনে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর ব্লিংকেন বলেন, আমেরিকা ফ্রান্সকে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেও ইউরোপের সাথে সহযোগিতার যাবতীয় সুযোগ কাজে লাগাতে চায়। সে ক্ষেত্রে ফ্রান্সের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সাবমেরিন বিক্রির বিষয়ে ফ্রান্সের সাথে যোগাযোগ রেখে চলা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফ্রান্সের এক কর্মকর্তার অভিযোগ, সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে সে দেশ অস্ট্রেলিয়ার সাথে চুক্তির বিষয়ে জানতে পেরেছিল।

অস্ট্রেলিয়াকে আদৌ পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন সরবরাহের সিদ্ধান্তের জের ধরে চীনও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সে দেশের অভিযোগ, আমেরিকা, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়া আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার মারাত্মক ক্ষতি করছে।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেন, মার্কিন প্রশাসন মোটেই চীনের সাথে সংঘাত চায় না। এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা রক্ষাই ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্য। আমেরিকা থেকে সাবমেরিন প্রযুক্তি গ্রহণের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি অস্ট্রেলিয়ার ছিল বলেও সাকি মনে করিয়ে দেন।

সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement