০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫
`


মা পদক-এর যাত্রা শুরু

মা পদক-এর যাত্রা শুরু -

মা দোয়া করে দিলে সাহস পেতাম : রুনা লায়লা
প্রত্যেক সন্তানের জীবনে মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। কোনো কিছুই আসলে মায়ের স্নেহ, ভালোবাসার তুলনা হতে পারে না। গত রোববার মা দিবসে ‘মা পদক-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেছেন দেশের কিংবদন্তি শিল্পী, সাংবাদিক ও রেমিট্যান্স যোদ্ধারা।
দেশে প্রথমবারের মতো এই পদকের সূচনা হলো এদিন। যেখানে মায়েদের হাতে পদক তুলে দিতে উপস্থিত হয়েছিলেন দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের দুই কিংবদন্তি রুনা লায়লা ও শবনম।
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্যে রুনা লায়লা সব মাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে নিজের শৈশবের স্মৃতিচারণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বয়স যখন ১২ কিংবা ১৩। তখন থেকে আমি সিনেমায় গান করি। প্রথমে করাচি পরবর্তীতে লাহোরে থাকা হতো বেশি। সবখানেই আমার সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন মা। প্রায়ই আমাকে অনেক কঠিন গান গাওয়ার প্রস্তাব দেয়া হতো। ভয়ে সেগুলো বাদ দেয়ার চেষ্টা করতাম। তখন সাহস জোগাতেন মা। তিনি সব সময় ফ্লাক্সে গরম পানি এবং চা রাখতেন। কোনো কিছুতে ভয় পেয়ে গেলে ফ্লাক্স থেকে পানি ঢেলে দোয়া পড়তেন, তারপর ফুঁ দিয়ে আমাকে খাওয়ার জন্য বলতেন। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, ওই পানি পান করার পর আমি ভয়ের কাজটা খুব সহজেই করে ফেলতাম। মা দোয়া করে দিয়ে সাহস পেতাম। আমার মা যখন মারা যান তখন আমি তার সাথেই ছিলাম। শেষ বিদায়ের সময় মায়ের পা আমার চোখে লাগিয়ে ছিলাম। তখন মনে হয়েছিল দুনিয়া থেকে আমার বেহেশত চলে যাচ্ছে। আজ আমি যে রুনা লায়লা হয়েছি তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমার মায়ের।’
মা পদক-২০২২-এর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন অভি মঈনুদ্দীন। তাকে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছেন স্বপ্নধরা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বশর ফাউন্ডেশন, জেড অ্যান্ড জেড অ্যাসোসিয়েটস। মা পদক সম্পর্কে অভি বলেন, ‘আমার বাবা ও আবদুল হক কাকার স্বপ্ন পূরণে গঠিত আলী-রূপা ফাউন্ডেশনের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো মা পদকের যাত্রা শুরু হলো। এই স্বপ্নপূরণে পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন শাবনাজ আপু, মৌ, তারিন আপু, পূর্ণিমা, অনন্যা রুমা, কণা, সজল, রুনা খান, প্রতীক ও প্রীতম, তানজিন তিশা, রেমিট্যান্স যোদ্ধা ইমরান, সাংবাদিক এফ আই দীপু, নিপু বড়ুয়া, মীর সামী, লিমন আহমেদ, রকিব হোসেন। শান্তা জাহান অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় ছিল এক কথায় অনবদ্য, অনুষ্ঠান সফল করার ক্ষেত্রে তারই অবদান সবচেয়ে বেশি। সব পুস্কারপ্রাপ্ত তারকাশিল্পী, সাংবাদিক, উপস্থাপিকা, রেমিট্যান্স যোদ্ধা, অনুষ্ঠান প্রযোজকের মায়েদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা। ইনশাআল্লøাহ প্রতি বছর মা দিবসে ‘মা পদক’ ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করব।’
অনুষ্ঠানে মাকে সাথে করে পুরস্কার নিতে এসে প্রায় সব তারকা ও সাংবাদিকরা আবেগাপ্লুত হয়েছিলেন। এ বিষয়ে অভিনেত্রী তারিন জাহান মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আসলে মা এমন একটি সত্তা যার সাথে সব সন্তানের আবেগের স্মৃতিগুলো প্রায় একই রকম। অনেক ছোটবেলা থেকে আমি শোবিজ অঙ্গনের সাথে সম্পৃক্ত। নতুন কুঁড়িতে থাকার সময় থেকেই আমাকে সবাই চিনতেন। তখন মিডিয়াতে কাজ করা অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। ভালো পরিবারের মানুষ মিডিয়াতে কাজ করবে এটা কেউ মেনে নিতে চাইত না। ওই জায়গায় আমাকে সাহস জুগিয়েছেন মা।’
অভিনেত্রী রুনা খান বলেন, ‘আমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে টাঙ্গাইলের সখিপুরে। যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখনই আমার উচ্চতা পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি। ওই বয়স থেকেই আমার বাসায় নিয়মিত বিয়ের প্রস্তাব আসত। তখন মা বলতেন, পড়াশোনা শেষ না হলে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এলেও মেয়ে বিয়ে দেবো না। মায়ের ওই প্রতিশ্রুতির কারণেই আজ আমি রুনা খান হতে পেরেছি।’
অভিনেতা সজল বলেন, ‘ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত আমি ট্রন্সিলের রোগী ছিলাম। বাবা থাকতেন বিদেশে। তখন প্রতি মাসে দুইবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতেন মা। আমার আরো দুই ভাইবোন আছে। তাদের রেখে আমার দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হতো মাকে। আজ আমি যতটুকু হয়েছি তার সবই মায়ের জন্য।’ অভিনেত্রী পূর্ণিমা বলেন, ‘আমি যখন সিনেমায় অভিনয় শুরু করি। তখন আমার বয়স ১৩ কি ১৪ হবে। তখন সাংবাকিরা প্রশ্ন করতেন, আপনি কেন সিনেমায় এসেছেন? আমার উত্তর ছিল, মা জানে। আবার প্রশ্ন করা হতো, আপনার ভবিষৎ লক্ষ্য কি? আমার উত্তর ছিল, মা জানেন। এখনো আমি বলি সবকিছু জানেন মা। আসলে মা ছাড়া আমি কোনো পরিকল্পনা করতে পারি না।’

 


আরো সংবাদ



premium cement