২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

টালমাতাল সিনেমা পাড়া, ব্যস্ততা কমছে শাকিবের

-

দীর্ঘ দিন ধরেই দেশের সিনেমার বাজার নাজুক। একমাত্র শাকিব খান ছাড়া কারো নামের ওপর ভরসা করে বিনিয়োগে আস্থা পেতেন না প্রযোজকরা। মহামারীর ধাক্কায় এই নামটির উপরও আস্থা হারাতে বসেছেন বিনিয়োগকারীরা। করোনার মধ্যে শাকিবের সর্বশেষ ছবি মুক্তি পেয়েছিল গত ১৬ ডিসেম্বর ওটিটি প্লাটফর্মে। প্রত্যাশা মতো ব্যবসা না হওয়ায় ওভার দ্য টপের নতুন কোনো চুক্তিতে যেতে পারেননি তিনি। তাহলে কি দেশের সিনেমায় শাকিব আদিপত্য কমতে শুরু করেছে।
প্রায় এক বছর ধরে ঢাকার বড় সিনেমা হলগুলো বন্ধ। লকডাউনের মধ্যেই যে কয়েকটা সিনেমা হল খোলা হয়েছিল সেগুলোও ভালো সিনেমা এবং দর্শকের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় সিনেমা ব্যবসীয়দের কাছে ভরসার জাগা পেয়েছে ওভার দ্য টপ (ওটিটি)। এই প্লাটফর্মটি প্রথমে শুধু ওয়েব সিরিজ নির্ভর হলেও এখন বাণিজ্যিক সিনেমাকেও তাদের কনটেন্ট হিসেবে গ্রহণ করছে। যেখানে শাকিব খান প্রবেশ করেছিলেন অনন্য মামুন পরিচালিত ‘নবাব এলএলবি’ ছবির মাধ্যমে। ছবির টিজার প্রকাশের পর শাকিবের লুক এবং গানের দৃশ্য বেশ আলোচনায় এসেছিল। কিন্তু অনলাইনে টাকা খরচ করে প্রত্যাশা অনুযায়ী দর্শক তার সিনেমা দেখতে যায়নি। বরং এই সিনেমা নিয়ে শাকিব খানের সাথে পরিচালকের দ্বন্দ্ব প্রকাশে আসায় ভক্ত মহলে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শাকিব খান বলেন, ‘আমার কাজটুকু যথাযথভাবেই আমি করেছিলাম। প্রয়োজক ও পরিচালক অযথা বিষয়টি নিয়ে পানি ঘোলা করেছিল।’ তবে সমালোচকরা বলছেন, প্রত্যাশানুযায়ী ছবি ভালো ব্যবসা না করতে পারায় নায়ক-প্রযোজক-পরিচালক দোষারূপের খেলায় মেতেছিলেন।
প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে সিনেমা বাজার এখন চাঙ্গা রেখেছে ওটিটি প্লাটফর্ম। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও ওটিটির বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি হয়েছে। শত কোটি টাকা (শাপলা মিডিয়ার ১০০ ছবি) বিনিয়োগেরও ঘোষণা এসেছে। কিন্তু এই বিনিয়োগের কোথাও নেই শাকিব খানের নাম। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে ঢালিউডে রাজত্ব করা শাকিব বেশির ভাগ সময় কাটে ফ্লাটে অলস বসে থেকে । মাঝে মধ্যে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে বিভিন্ন ইস্যুতে পোস্ট দেয়া ছাড়া যেন তার অন্য কোনো কাজ নেই। সর্বশেষ তার দেয়া পোস্টগুলোর মধ্যে আলোচিত করোনা টিকা সংক্রান্ত একটি লেখা। যেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘টিকা আমাকে, আমার আপনজনদের এবং আমার দেশকে পোলিও, হাম এবং টিবির মতো মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা করেছে। আমি করোনাভাইরাস টিকা নিয়েছি যাতে আমার আপনজনদের নিরাপদ রাখতে পারি। যখন আপনার সময় আসবে, তখন করোনাভাইরাস থেকেও টিকা আপনাকে এবং আপনার আপনজনদেরকে নিরাপদ রাখবে।’ এটি মূলত ইউনিসেফের একটি প্রচারণা। অন্য আরো অনেক তারকার সাথে শাকিব ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়েছেন। সিনেমার কোনো কাজের বিষয়ে তার সর্ব শেষ পোস্টগুলোতে কিছুই চোখে পড়েনি। শাকিব খানের এই অবস্থা কি করোনায় সৃষ্ট লকডাউনের কারণে নাকি আগে থেকেই পরিকল্পনাহীন চলার ফলে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শাকিব খানের সবচেয়ে বেশি ছবি মুক্তি পেয়েছিল ২০১৮ সালে। ওই বছর মুক্তি পায় তার অভিনীত ৮টি ছবি। যার মধ্যে ছিল ‘চালবাজ’ ‘পাংকু জামাই’ ‘চিটাগাইঙ্গা পোয়া নোয়াখাইল্যা মাইয়া’ ‘সুপার হিরো’ ‘ভাইজান এলো রে’ ‘ক্যাপ্টেন খান’ ‘নাকাব’। ছবিগুলোর তিনটিই ছিল যৌথ প্রযোজনার। ব্যবসায়িক দিক থেকে ওইগুলোই দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল। এর পর থেকেই শাকিবের নজর যায় বড় বাজেটের ছবির দিকে। দেশের সমসাময়িক সিনেমার বাজারের অবস্থা বিবেচনায় না নিয়ে শাকিবের এমন সিদ্ধান্তই তাকে পিছিয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন অনেক সমালোচক। কারণ এর পরের বছর ২০১৯ সালে তার যে তিনটি ছবি মুক্তি পেয়েছিল তার মধ্যে ‘পাসওয়ার্ড’ ও ‘নোলক’ ছিল যৌথ প্রযোজনার। ছোট বাজেট নিয়ে যারা তাকে ছবির প্রস্তাব দিয়েছেন সবাইকে তিনি না বলেছেন।
শাকিব খান সর্বশেষ শুটিং করেছেন গত ফেব্রুয়ারিতে ‘অন্তরাত্মা’ সিনেমার। এই ছবিতে বিপরীতে অভিনয় করছেন ভারতের কলকাতার অভিনয়শিল্পী দর্শনা বণিক। ছবিটি সিনেমা হল খুললে মুক্তি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পরিচালক। কিন্তু দেশের সিনেমা হলের বর্তমান যে সংখ্যা তাতে হাউজ ফুল দর্শক হলেও শাকিবের ছবির লগ্নির টাকা উঠে আসবে কি-না সন্দেহ রয়েছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, বর্তমান সিনেমার বাজারে টিকে থাকতে হলে সিনেমা হলের পাশাপাশি ওটিটি প্লাটফর্মে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। কারণ বেলা শেষে সিনেমার সফলতা ব্যর্থতা নির্ধারণ হয় পকেটে বিনিয়েগের কত টাকা ফেরত এলো তার ওপর হিসাব করে। এই জায়গাটায় দেশের শীর্ষ নায়ক অনেক পিছিয়ে আছেন। পরিকল্পনা না পাল্টালে এই বাজারে টিকে থাকা শাকিবসহ সব তারকার জন্যই কষ্ট হয়ে যাবে বলে মন্তব্য সমালোচকদের।

 


আরো সংবাদ



premium cement