অপ্রয়োজনীয় বড় বড় টেস্ট দিয়ে রোগীদের হয়রানি না করতে ডাক্তারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ।
তিনি সোমবার (১৩ মার্চ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কনভেনশন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বড় ডাক্তার হয়ে অপ্রয়োজনীয় বড় বড় টেস্ট দিয়ে রোগীদের হয়রানি করবেন না ... অসুস্থ ও অসৎ প্রতিযোগিতা পরিহার করতে হবে।’
তিনি চিকিৎসাসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও সেবার মনোভাব নিয়ে দায়িত্বশীল আচরণ করার জন্যও জোর তাগিদ দেন।
রাষ্ট্রপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় চ্যান্সেলর আবদুল হামিদ ডাক্তার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিএসএমএমইউ’র সেবাদান পদ্ধতি সহজ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘বিএসএমএমইউ’র আউটডোরে প্রায়শই সকালে ল্যাবরেটরি বিভাগ খোলা হয় না বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এর ফলে রোগীদের রিপোর্ট সংগ্রহে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’
সক্ষমতার দিক থেকে বিএসএমএমইউকে ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের অবহেলা, দায়িত্বহীনতা ও প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগ নেই। চিকিৎসার নামে সাইনর্বোডসর্বস্ব ও দালাননির্ভর সব ধরনের প্রতারণা বন্ধ করতে প্রশাসনিক উদ্যোগের সাথে চিকিৎসকদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, কিছুসংখ্যক অসাধু ও প্রতারক চিকিৎসকের জন্য যাতে চিকিৎসার নামে গোটা চিকিৎসক সমাজের সুনাম ক্ষুণ্ণ না হয়, সেদিকেও সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই দেখা যে, ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা হাসপাতাল ক্লিনিকগুলো রোগীদের জিম্মি করে ব্যবসা করে। অনেক সময় দালালদের খপ্পরে পড়েও রোগীরা, বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা রোগীরা, চরম হয়রানির শিকার হন।
তিনি বলেন, ‘মানবসেবা একটি স্বর্গীয় গুণ ... রোগাক্রান্ত মানুষ সৃষ্টিকর্তার পর একজন ডাক্তার ও নার্সের ওপর ভরসা রাখেন। আপনাদের ভালো ব্যবহার ও চিকিৎসা যেকোনো রোগীর পরম কাম্য।’
আবদুল হামিদ বলেন, চিকিৎসা সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশেও বিদেশের মতো বাণিজ্যিক নামের (ট্রেড নেম) পরিবর্তে সাধারণ নাম (জেনেটিক নেম) চালু করার বিষয়টি ভাবতে হবে।
রাষ্ট্রপ্রধান চিকিৎসা সেবায় গবেষণা কার্যক্রমের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, কালের বিবর্তনে প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট বহুবিধ কারণে রোগ-জীবাণুর ধরণ ও প্রকোপ পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই ভবিষ্যতে মানবজাতির জন্য হুমকি মোকাবেলায় বিভিন্ন রোগের কারণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার নির্ণয়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নত গবেষণার কোনো বিকল্প নেই।
বিএসএমএমইউ চ্যান্সেলর বলেন, চিকিৎসা গবেষণাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউশনাল রিভিউ বোর্ড (আইআরবি) গঠন করা হয়েছে। দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন সংস্থার সাথে যৌথভাবে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের দেশের রোগব্যাধির ধরন উন্নত ও পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে ভিন্ন। তাই আমাদের নিজস্ব গবেষণাকর্মই কেবলমাত্র পারবে এদেশের বৈচিত্র্যপূর্ণ রোগসমূহের কার্যকর ও সুলভ চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবন করে এদেশের রোগীদের সত্যিকারের সমাধানটি সহজলভ্য করতে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি আশা করি, আপনারা উদার মন নিয়ে জনসাধারণের মাঝে ভালো ডাক্তারের পাশাপাশি বড় মানুষ হিসেবেও বিবেচিত হবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ এই সমাবর্তনে ‘সমাবর্তন বক্তা’ হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভারতীয় ইউনিভার্সিটি সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রাজ-বর্ধন আজাদ। বিশ্ববিদ্যালয় চ্যান্সেরল তাকে ক্যাম্পাসের স্বাগত জানিয়ে বলেন, বিএসএমএমইউ ক্যাম্পাসে এর প্রধান বক্তা হিসেবে তার উপস্থিতি দেশের গণমানুষকে আরো ভালো সেবা প্রদানের দিকে স্নাতকদের নির্দেশনা দিবে।
ডিগ্রিপ্রাপ্ত গবেষক, চিকিৎসক ও নার্সদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মনে রাখবেন, ডিগ্রি অর্জনের পিছনে আপনাদের মা-বাবা, অভিভাবক ও শিক্ষকদের যেমন অবদান রয়েছে, তেমনি রয়েছে এ দেশের খেটেখাওয়া মানুষেরও বড় অবদান। তাই যাদের কারণে আপনাদের রুটিরুজি তাদের প্রতি আপনাদের আরো যত্নবান হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, বেসরকারি খাতে থাকা হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোকে অবশ্যই গুণে-মানে সমৃদ্ধ হতে হবে। চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে।
হাসপাতালে নার্সদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, হাসপাতালে একজন রোগী সার্বক্ষণিক সেবা ও সাহচার্য পায় নার্সদের কাছ থেকে। একজন নার্সের সুন্দর ব্যবহার ও উৎসাহব্যাঞ্জক কথা রোগীর হাসপাতালে অবস্থানকে আরামদায়ক ও তার আরোগ্য ত্বরান্বিত করে। তিনি নার্সদের রোগীর সেবায় আরো আন্তরিক হওয়ার তাগিদ দেন এবং বলেন, একই সাথে নার্সদের কর্মপরিবেশ উন্নয়ন, উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ও তাদের যথাযথ সামাজিক মর্যাদা প্রদানও জরুরি।
আমাদের দেশে অনেক স্বনামধন্য চিকিৎসক, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও প্রতি বছর প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশী চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাচ্ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, তাই আমাদের ভাবতে হবে আসল সমস্যাটা কোথায়। রোগীর আস্থা অর্জনে একজন ডাক্তারকে সবার আগে ভালো শ্রোতা হতে হবে।
রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদেরও মনে রাখতে হবে যে, ডাক্তাররা আল্লাহ বা ভগবান নন। তারাও মানুষ। তারা কেবল চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন। তাই রোগীর কিছু হলেই ডাক্তারদের দায়ী করবেন আর হাসপাতাল ভাংচুর করবেন- এটাও কাম্য নয়। এজন্য ডাক্তার, রোগী ও আত্মীয়স্বজনদের আরো বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। এমন অবস্থা কারোরই কাম্যই নয়, যার ফলে সাধারণ মানুষ ও রোগীরা অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হন।
চ্যান্সেলর আশা প্রকাশ করেন, বিএসএমএমইউ এদেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিকাশ ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথপরিক্রমায় এবং একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে অবদান রাখবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জাহিদ মালেক, বিএসএমএমইউ’র ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা: মো: শারফুদ্দিন আহমেদ, প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা: মোশাররফ হোসেন, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা: ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, ও প্রো-ভিসি (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা: মো: মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: মোহাম্মদ আতিকুর রহমান ও প্রক্টর অধ্যাপক ডা: মো: হাবিবুর রহমান দুলাল।
সমাবর্তনে তিনজনকে সম্মানসূচক (পিএইচডি) ডিগ্রি প্রদান করা হয়। তারা হলেন- সূচনা ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ, বিএসএমএমইউ’র সাবেক ভিসি ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা: মো: নজরুল ইসলাম এবং অর্থোপেডিক সার্জন অধ্যাপক ডা: কাজী শহিদুল আলম।
চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ৩৫ জনকে ‘চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক’ দেয়া হয়।
সূত্র : বাসস
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা