০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ঢাকায় মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদল

ইতিবাচক মনোভাব দরকার

-

বাংলাদেশে শ্রম আইন ও শ্রম অধিকার দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে সফররত মার্কিন বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদল গত রোববার বৈঠক করেছে বাংলাদেশ দলের সাথে। বৈঠকে বাংলাদেশে শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ বাড়ছে বলে জানান বাণিজ্যসচিব। এ ছাড়া ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ন্যূনতম শ্রমিক সংখ্যা আরো কমানো, শ্রমিকদের মতামতের গুরুত্ব দেয়া, বিদ্যমান ট্রেড ইউনিয়ন বাতিলের সুযোগ রদ এবং আইন লঙ্ঘনকারী মালিকদের শাস্তির মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানায় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের তরফে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের অগ্রাধিকার বাজারসুবিধা জিএসপি পুনর্বহালের কথা বলা হয়।
বৈঠকের বিষয়ে বাণিজ্যসচিবের বক্তব্যে মোটামুটি ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, বাংলাদেশের আকাক্সক্ষা অদূর ভবিষ্যতে পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা কম। গত বছর ঢাকায় এক সাক্ষাৎকারে বর্তমান প্রতিনিধিদলের প্রধান ব্রেন্ডান লিঞ্চ বলেন, শ্রমিকদের অধিকারের ঘাটতি ও অনিরাপদ কর্মপরিবেশে বাংলাদেশ ২০১৩ সালে জিএসপি সুবিধা পাওয়ার যোগ্যতা হারায়। সে যোগ্যতা নতুন করে অর্জনে বাংলাদেশে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়েছে এমন নয়। প্রতিনিধিদল জানিয়েছে, শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা দিতে তাদের আইন সংস্কার করতে হবে। আর জিএসপি পুনর্বহালের এখতিয়ার একান্তভাবে মার্কিন কংগ্রেসের। এসব বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী অবস্থান থেকে সবুজ সঙ্কেত না এলে বাংলাদেশের কোনো চাওয়া সহসা পূরণ হওয়ার নয়। আর এ সবুজ সঙ্কেত আসা নির্ভর করে বাংলাদেশের সদিচ্ছার ওপর।
মার্কিন প্রতিনিধিদলের এ সফর নিছক রুটিন ওয়ার্ক এবং এর সাথে অন্য কোনো বিষয় জড়ানোর সুযোগ নেই বলে কেউ উল্লেখ করলেও বাস্তবতা ভিন্ন। গত বছর নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র নতুন শ্রমনীতি ঘোষণা করে। সে সময় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্বজুড়ে যারা শ্রমিক অধিকার হরণ করবে, শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখাবে এবং আক্রমণ করবে তাদের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। কারণটাও স্পষ্ট করেন তিনি। ব্লিঙ্কেন বলেন, শ্রম অধিকার আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা ও বৈদেশিক নীতির চাবিকাঠি। এটি শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও বৈদেশিক নীতির বিষয়। তিনি বাংলাদেশে শ্রমিক অধিকার নিয়ে সক্রিয় কল্পনা আক্তারের নাম উল্লেখ করে বলেন, কল্পনা এখনো বেঁচে আছেন আমেরিকার দূতাবাস তার পক্ষে ছিল বলে।
বাংলাদেশ শ্রম আইনের অপব্যবহারের একটি বৈশ্বিক নজির তৈরি করেছে গ্রামীণ ব্যাংকের অধ্যাপক ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সূত্রে। নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের ব্যাপারে মার্কিন আগ্রহ অপ্রকাশ্য কিছু নয়।
বাংলাদেশে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গত বছর ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকায় পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ কঠোর হাতে দমন করা হয়। নিহত হন বেশ ক’জন শ্রমিক। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রমনীতির প্রভাব নিয়ে দেশে আলোচনা হয়। দেখার বিষয়, সে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়েছে কিনা।
বাণিজ্য আলোচনায় শ্রম আইনের প্রসঙ্গ ছাড়াও এ দেশে বিনিয়োগ পরিবেশ ও ডিজিটাল বাণিজ্যে প্রভাব রাখে এমন নীতি, মেধাসম্পদের সুরক্ষা, আইনের যথাযথ প্রয়োগসহ বিভিন্ন বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে। বাংলাদেশে উপাত্ত সুরক্ষা আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ আছে। এ আইন পাস হলে দুই হাজারের বেশি মার্কিন প্রতিষ্ঠান ব্যবসায় গুটিয়ে নেবে- এমনও শোনা গিয়েছিল সে সময়।
কার্যত, আলোচনা যে বিষয়ে হোক, কম্পাসের কাঁটা ঘুরেফিরে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নির্বাচন, সুশাসনের প্রয়োজনের দিকে নির্দেশ করে। সুতরাং সরকারকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগোতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement