২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পণ্যের দর বেঁধে দেয়া অকার্যকর

পরবর্তী করণীয় ঠিক করুন

-

পবিত্র রমজানের কয়েক মাস আগে থেকে সরকার দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছিল, এবার পণ্যমূল্য বাড়বে না। এ জন্য যা কিছু করণীয় তা করা হবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। রমজান শুরুর আগে বাজারের বেহাল দশা। ক্রমে তা অবনতির দিকে। অনেকে বলছেন, অন্য যেকোনো বছরের চেয়ে এবার জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ।
অবশ্য, বাজার নিয়ন্ত্রণে অন্য সব বছরের চেয়ে এবার সরকারের নড়াচড়া চোখে পড়ার মতো। বাণিজ্য, খাদ্য, শিল্প, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং কৃষি মন্ত্রণালয় যুগপৎ নানা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষে যুক্ত হয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। যদিও বাজারদর স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ। আইন অনুযায়ী, কৃষিপণ্যের দরদাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার পুরো দায় কৃষি বিপণন অধিদফতরের। সংস্থাটি শেষ পর্যন্ত উদ্যোগী হয়েছে। গত শুক্রবার বিকেলে ২৯ পণ্যের দাম বেঁধে দেয় এ সংস্থা। তবে বেঁধে দেয়া দামে একটি পণ্যও কোথাও পাওয়া যায়নি। গতকাল একাধিক জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে এ বিষয়ে নেতিবাচক চিত্র উঠে এসেছে। খুচরা বিক্রেতারা বেঁধে দেয়া দাম নিয়ে কৌতুককর কথাবার্তা বলছেন। পণ্য উৎপাদনকারীদের প্রতিনিধিরা বলছেন, দর বেঁধে দেয়ার আগে আলোচনা করা হয়নি। অধিদফতরের মহাপরিচালক বলছেন, তারা সবার সাথে আলোচনা করে যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করেছেন।
সব মিলিয়ে পুরো বিষয়টি কার্যত ব্যর্থতার দিকে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এমন অবস্থায় সংস্থার প্রধান বলেছেন, তারা কোনো পণ্যের দর ধার্য করেননি; বরং পণ্যের দাম যৌক্তিকভাবে কত হতে পারে সেটি বলেছেন। দায় এড়ানোর এ কৌশল বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিক্রেতারা এটিকে ইচ্ছামতো দর বাড়ানোর সুযোগ হিসেবে নেবে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, তারা উৎপাদন ও মজুদ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং এসব পর্যায়ে নির্ধারিত দাম কার্যকরের বিষয়ে বেশি মনোযোগী। এসব স্তরে দাম স্বাভাবিক হলে খুচরা বাজারেও নির্ধারিত দর কার্যকর হবে। কিন্তু পণ্য সরবরাহের প্রতিটি পর্যায়ে চাঁদাবাজির মতো নানা বাড়তি খরচ যোগ হয়। এ বাস্তবতা চরম আকার নিয়েছে। চাঁদাবাজির সাথে কারা জড়িত জনগণ জানে। জানে সরকার, প্রশাসনও। কৃষিপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন পাইকাররাও। তারা দাম বৃদ্ধির জন্য চাঁদাবাজির দায় চাপান। পরিবহনের বাড়তি ভাড়াও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। সরকার এসব বিষয়ে কখনো হস্তক্ষেপ করে না।
বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের অনেকগুলো সংস্থা এখন তৎপর। কিন্তু কোনোরকম সমন্বয় নেই। সরকারের দুই সংস্থা একই পণ্যের দুই ধরনের দাম নির্ধারণ করেছে এমন দৃষ্টান্তও আছে। তবে এটি সত্য যে, বর্তমান সরকারের সময়ে বাজারদর কখনো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল না। যৌক্তিকও না। ২০২১ সালে ছয়টি এবং ২০২২ সালে ৪০ পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছিল কৃষি বিপণন অধিদফতর। গত বছর আলুর দাম বেঁধে দেয় সংস্থাটি। কোনোটি কার্যকর হয়নি।
বাজারদর নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা। সেটি বোঝা যাবে যখন দলমত নির্বিশেষে মজুদদার, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলে। তেমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

 

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement