২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সমন্বয়ের নামে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি

সরকারের ভুলনীতির খেসারত দিচ্ছেন ভোক্তা

-

যেকোনো জ্বালানির দাম বাড়লে তা সরাসরি নাগরিকদের ওপর গিয়ে বর্তায়। বাসাবাড়িতে ব্যবহার ছাড়াও শিল্পপণ্য উৎপাদন খরচ গ্যাস কিংবা বিদ্যুতের মূল্যের ওপর নির্ভরশীল। ফলে গ্যাস অথবা বিদ্যুতের দাম বাড়লে জনজীবনে এর প্রভাব পড়ে। তবু সরকার সব জেনেবুঝে বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের নামে দফায় দফায় বাড়াচ্ছে। সর্বশেষ বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রতি পরিবারে মাসিক ব্যয় গড়ে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্রশিল্পে ৯ দশমিক ১২ শতাংশ, ব্যবসায় ও অফিসে ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ, শিল্পে ১০ শতাংশ এবং সেচে ১ দশমিক ০২ শতাংশ বিদ্যুৎ বিল বেড়েছে। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও এর সাথে বেড়েছে। এতে করে বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অগ্নিমূল্য হয়ে পড়েছে যা অনেক আগে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। অথচ বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে সরকারের ভুলনীতি দায়ী। নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) মতে, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রক্রিয়াগত ত্রুটি ও এ খাতে সরকারের ভুলনীতিসহ নানা কারণে বিদ্যুতের অস্বাভাবিক উৎপাদন খরচের খেসারত ভোক্তার ঘাড়ে চাপছে। পাশাপাশি বর্ধিত ভর্তুকির দায় জনগণের ওপর চাপিয়ে দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করছে সরকার। এর ফলে মূল্যস্ফীতির চাপে জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় আরো বেড়ে গেছে। অথচ মূল্যবৃদ্ধি না করার অনেক বিকল্প ছিল বলে জানিয়েছে সিপিডি।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করে এটি সমন্বয় বলছে। বাস্তবতা হলো- এটি মূল্যবৃদ্ধি। ভর্তুকি সমন্বয়ের নামে এ মূল্যবৃদ্ধি করেছে সরকার। এর ফলে ভোক্তার ব্যয় বেড়েছে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি পেমেন্টে এভাবে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হচ্ছে। অযৌক্তিক ক্যাপাসিটি পেমেন্ট সমন্বয় করা গেলে বিদ্যুতের মূল্য এভাবে বৃদ্ধির দরকার হতো না।
যে হারে ভোক্তা বাড়ছে তার থেকে দ্বিগুণের বেশি হারে ক্যাপাসিটি বাড়ানো হচ্ছে। উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনছে সরকার। কোন ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে মূল্যবৃদ্ধির সেটিও কারণ। গ্যাস থেকে এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে সরে যাওয়ায় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ ছাড়া ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল ব্যবহারের কারণেও উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। প্রতিযোগিতার অভাবের কারণেও বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। উন্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে এখন বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে না। বিভিন্ন কোম্পানির সাথে চুক্তির আলোকে বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে।
সিপিডি মূলত চারটি বিকল্প সরকারের কাছে তুলে ধরেছে। তাতে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির খুব কম অংশ ভোক্তার ওপরে দেয়া যেতে পারে। যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র ফেজ আউট হবে, সরকার বলছে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে যেতে চায়, সে লক্ষ্যে যাওয়ার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে বন্ধ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে রিপ্লেস করতে হবে, যেটি সরকারের পরিকল্পনার অংশ। এ চারটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে যদি সরকার পরিকল্পনা ঘোষণা করে, তাহলে ২০২৯ সালের ভেতরে সরকারকে আর ভর্তুকি দিতে হবে না।
আমরা মনে করি, বিদ্যুৎ উৎপাদন সাশ্রয়ী করতে সরকার সিপিডির উপস্থাপিত প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিতে পারে। পাশাপাশি সরকার নিজের বিশেষজ্ঞদের সাথে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে একটি টেকসই বিদ্যুৎনীতি গ্রহণ করতে পারে। এ জন্য প্রথমে দরকার সরকারের বর্তমান বিদ্যুৎনীতির গভীর পর্যালোচনা। কিন্তু বর্তমান সরকার জনস্বার্থে কী গোষ্ঠীস্বার্থ পরিত্যাগ করবে, এটিই হচ্ছে বড় প্রশ্ন।


আরো সংবাদ



premium cement