২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


দেশে আর্থসামাজিক বৈষম্য চরমে

অস্থিরতার কারণ হতে পারে

-

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বলেছেন, আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশ চরম বৈষম্যপূর্ণ সমাজে পরিণত হতে পারে। এটি ঘটতে পারে অর্থনীতি আরো বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধি অর্জন করলেও। দেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ছিলেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তিনি ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার প্রস্তুত করেন। অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় পর এই অর্থনীতিবিদের উপলব্ধি নিঃসন্দেহে কৌতূহলোদ্দীপক।
আত্মজীবনী প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় রেহমান সোবহান বলেছেন, বর্তমান ক্ষমতাসীনরা যা করছেন তা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পরিপন্থী। তার ভাষায়, ক্ষমতাসীনরা, নিজেদের অর্থনৈতিক ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করছেন। সব রকম রাজনৈতিক বিতর্কের সুযোগ প্রায় অদৃশ্য হয়ে গেছে এবং ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা খুব কম জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের গভীরে যান। তারা কারো পরামর্শও নেন না। অধ্যাপক সোবহান বলেন, সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে মন্ত্রীরা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখান।
তার এসব বক্তব্য মূলত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্বহীনতা এবং জবাবদিহির অনুপস্থিতির প্রতি ইঙ্গিত করে। তিনি বলেন, সমালোচকরা হতে পারেন সরকারের সেরা পরামর্শক। এজন্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও নীতিনির্ধারকদের উচিত যতদূর সম্ভব নানা উৎস থেকে পরামর্শ নেয়া। কারণ, সরকারের ভেতর থেকে যেসব পরামর্শ তারা পান সেগুলো প্রায়ই বিভ্রান্তিকর হতে পারে এবং তা ভুলগুলো আরো জোরালো করে তুলতে পারে।
একটি শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলার যে স্বপ্ন ও অঙ্গীকার নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল সেটি পুরো ভেঙে গেছে। গত ১৫ বছরের শাসনে উল্লিখিত স্বপ্ন পূরণের প্রতিকূল কর্মকাণ্ড দেখে আসছি। এ সময় অর্থনৈতিক বৈষম্য শুধু নয়, সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্য তীব্রতর হয়েছে। গত বছরের শেষ দিকে আরেকজন অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন, দেশে আয়বৈষম্য এতটা বেড়েছে যে, এক দেশে দুই সমাজের সৃষ্টি হয়েছে। একটি সমাজ নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর, আরেকটি উচ্চ আয়ের জনগোষ্ঠীর। অর্থাৎ মাঝখানের মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। মধ্যবিত্তদের বেশির ভাগ চলে গেছেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে এবং মুষ্টিমেয় অংশ যারা ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারার শরিক তারা উঠে গেছেন ধনিক শ্রেণীতে। এ এক ভয়াবহ পরিস্থিতি।
অর্থনীতির পরিসংখ্যান দিয়ে বৈষম্যের চিত্র স্পষ্ট করা সহজ। ২০২১ সালে দেশের মাত্র ১ শতাংশ সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ছিলেন বাংলাদেশের মোট জাতীয় সম্পদের ১৬ দশমিক ৩ শতাংশের মালিক। আর সবচেয়ে গরিব ৫০ শতাংশ মানুষের মালিকানায় ছিল মাত্র ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। এটি অক্সফামের তথ্য। সামাজিক সূচক যেমন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সামাজিক ও খাদ্য নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলোও একই রকম চিত্র তুলে ধরে।
গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন প্রশংসা পেলেও বৈষম্যের রাশ টানা যায়নি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) রক্ষণশীল জরিপেও তার হতাশাজনক নমুনা মেলে।
এ চরম বৈষম্য চরম ক্ষতিকর হতে পারে। অর্থনীতিতে না হলেও সমাজের স্বাভাবিক গতি রুদ্ধ হতে পারে। রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে যারা অবৈধভাবে বিত্তবান হচ্ছেন তাদের ওপর আস্থাহীনতা বাড়বে। সামাজিক সংহতি দুর্বল হবে, এক পর্যায়ে গণ-অসন্তোষ উসকে দিতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement