নদীমাতৃক বাংলাদেশে একসময় হাজারও নদ-নদী ছিল। কিন্তু এখন অনেকগুলো হারিয়ে গেছে। এর অন্যতম কারণ, পানি-স্বল্পতা। এই পানি-স্বল্পতা এমনি এমনি হয়নি। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বাংলাদেশ-ভারতের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া অভিন্ন ৫৪টি নদীতে প্রতিবেশী ভারত উজানে বাঁধ দিয়ে পানি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। এতে করে বাংলাদেশের নদ-নদী অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। দেশের নৌপথ হারিয়ে যাচ্ছে। অবস্থা এমন করুণ যে, শুষ্ক মৌসুমে আমাদের বড় নদী পদ্মা-যমুনায় পড়ে অগণিত চর। ফলে বইতে থাকে ক্ষীণ ধারায়। এতে করে ফেরি পারাপার মারাত্মকভাবে বিঘিœত হয়। গতকাল নয়া দিগন্তে গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) সংবাদদাতার পাঠানো এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
পদ্মা ও যমুনার সংযোগস্থলে দেশের বৃহৎ নৌপথ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নদীবন্দর অবস্থিত। এর একপাশে রাজবাড়ী, অন্যপাশে মানিকগঞ্জ। রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া প্রান্তে পদ্মা আর মানিকগঞ্জ প্রান্তে যমুনা নদী। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পদ্মা-যমুনার সংযোগস্থলের জনপদে তীব্র নদীভাঙন দেখা দেয়। গত কয়েক বছরে পদ্মার ভাঙনে গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ২০-২৫ হাজার পরিবার ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। প্রতি বছর বর্ষায় ফেরি এবং লঞ্চঘাটও ভাঙনের কবলে পড়ে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে পানিপ্রবাহ এত কমে যায় যে, পদ্মা-যমুনা হয়ে পড়ে নির্জীব। এ বছরও পদ্মা-যমুনা যেন খালে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে পদ্মায় বইছে ক্ষীণ ধারা।
প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি এ দুই নদীর পানির গভীরতা একেবারে কমে যায়। মার্চের শেষে আবার পানি বাড়তে থাকে। বর্ষায় আস্তে আস্তে ফুলেফেঁপে ওঠে। নয়া দিগন্তের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পদ্মায় জেগে ওঠা শত শত চরের কারণে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া নৌপথের নৌযানগুলো চরম সঙ্কট মোকাবেলা করছে। নাব্যতা সঙ্কটে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে আসা শত শত মালভর্তি কার্গো জাহাজ আটকা পড়ে দৌলতদিয়া ঘাটে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। চর জেগে ওঠায় মাত্র সাড়ে চার কিলোমিটার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নদীপথ পার হতে ফেরিগুলোর এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগছে। অথচ স্বাভাবিক সময়ে লাগে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। কখনো আবার খনন সঙ্কটে নির্দিষ্ট চ্যানেলে চলতে না পারায় ফেরিগুলো সাত-আট কিলোমিটার পথ ঘুরে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় পৌঁছে।
নাব্যতা সঙ্কটের বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের এজিএম আহম্মেদ আলী ও দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, প্রতি বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে এ নৌপথে নাব্যতা সঙ্কট দেখা দেয়। এ সময় ড্রেজিং করে নৌচলাচল ঠিক রাখতে হয়।
শুষ্ক মৌসুমে দেশের নৌপথে চলাচল অব্যাহত রাখতে প্রতি বছর বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করে বিআইডব্লিউটিসির মাধ্যমে নদী খনন করা হয়। কিন্তু বাস্তবে নদীখননের কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়ে থাকে। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে যে মাটি তোলা হয়; তা আবার নদীতে ফেলা হয় বলে অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। ফলে কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যায় না। আমরা মনে করি, শুষ্ক মৌসুমে নৌপথ সচল রাখতে নদ-নদীতে কার্যকর ড্রেজিং করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে খননকাজে উদাসীনতার কোনো অবকাশ নেই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা