২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিধি না হওয়ায় নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ বন্ধ

চাকরিপ্রত্যাশীদের হতাশা দূর করুন

-

দেশে সরকারি-বেসরকারি যেকোনো চাকরি পাওয়া এখন বেশ কঠিন। এর মধ্যে সরকারি চাকরি যেন সোনার হরিণ। এর অন্যতম কারণ- এখন আমাদের দেশে সরকারি চাকরিতে বেতনভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বেসরকারি খাতের চেয়ে অনেক ভালো। এ ছাড়া চাকরির নিশ্চয়তা বেশি থাকায় বাংলাদেশে শিক্ষিত তরুণরা সরকারি চাকরির প্রতি মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকে পড়ছেন।
কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো- উচ্চশিক্ষা এখন আর কাজ পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। তরুণরা যত বেশি পড়ালেখা করছেন, তাদের তত বেশি বেকার থাকার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এর প্রমাণ মেলে আইএলওর এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী। আন্তর্জাতিক সংস্থাটির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানে- ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশে এ হার ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এ অঞ্চলের ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

সরকারি সংস্থা বিবিএসের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে মোট শ্রমশক্তির সংখ্যা প্রায় সাত কোটি ৩৭ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ চার কোটি ৮২ লাখ ও নারী দুই কোটি ৫৪ লাখ। আর বেকার সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার।
এমন বাস্তবতায় শুধু একটি বিধির অভাবে সরকারি চাকরিতে আটকে আছে প্রায় সাড়ে চার হাজার নিয়োগ। নন-ক্যাডার পদের চাকরি নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা কেবল বাড়ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিসিএস থেকে নন-ক্যাডার নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০১০ সালের বিধি ২০১৪ সালে একবার সংশোধন করা হয়েছিল। ওই বিধিতে বলা আছে, বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডারের পাশাপাশি নন-ক্যাডার শূন্যপদের বিবরণ ও সংখ্যা উল্লেখ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে বিগত ২৮তম থেকে ৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে নন-ক্যাডার শূন্যপদের বিবরণ ও সংখ্যা উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য সরকার বিধি সংশোধন করে ৩৪তম বিসিএস পর্যন্ত নন-ক্যাডার নিয়োগের বৈধতা দিয়েছিল। এখন একইভাবে ৩৫তম থেকে ৪৪তম বিসিএসের নন-ক্যাডার নিয়োগের বৈধতা দেয়ার চিন্তা করছে সরকার। সে জন্য বিধি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ সংশোধিত বিধিটি চূড়ান্ত না হওয়ায় আটকে আছে নন-ক্যাডার পদের সব নিয়োগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নন-ক্যাডার পদে নিয়োগে ২০১৪ সালের বিধি সংশোধনের কাজ চলছে। এই বিধির খসড়ার নথি অনেক দিন ধরে চালাচালি হচ্ছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মধ্যে। তবে কিছুতে চূড়ান্ত হচ্ছে না। ফলে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগপ্রত্যাশীদের অপেক্ষার প্রহর কেবল বেড়েই চলেছে। হতাশায় মুষড়ে পড়েছেন তারা। নতুন বিধিমালা অনুমোদন না হওয়ায় ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডার নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিধিমালা জারি হলে ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার ফল বিধিমালার আলোকে প্রকাশ করতে পারবে পিএসসি। এরই মধ্যে চার ধাপে নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে চার সহস্রাধিক চাহিদা পেয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। উত্তীর্ণ আট হাজার ১৬৬ জনের মধ্যে নন-ক্যাডার পদে ৪০তম বিসিএসে অপেক্ষমাণ রয়েছেন ছয় সহস্রাধিক পরীক্ষার্থী।
আমরা মনে করি, এমনিতে দেশের তরুণরা করোনা মহামারীকাল থেকে হতাশায় নিমজ্জিত। এর মধ্যে যারা তীব্র প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা বিসিএসে অংশ নিয়ে নন-ক্যাডার পদের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছেন, কিন্তু শুধু বিধির অভাবে নিয়োগ ঝুলে আছে; তাদের মানসিক অবস্থা কত নাজুক হতে পারে তা চিন্তা করা উচিত। এ তরুণদের মনোজাগতিক অবস্থা আমলে নেয়া কর্তৃপক্ষের জন্য অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই আর সময় ক্ষেপণ নয়; দ্রুত বিধি প্রণয়ন করে তাদের চাকরিতে নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা করবে সরকার- এই প্রত্যাশা করা খুব বেশি চাওয়া নয় বলে আমরা মনে করি।


আরো সংবাদ



premium cement