২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ব্যাংকব্যবস্থায় বিদ্যমান অনিয়ম-দুর্নীতি

সমাধানে চাই রাজনৈতিক সদিচ্ছা

-

আমাদের দেশে অর্থনীতিতে বর্তমান যে সঙ্কটময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে; এর পেছনে বৈশ্বিক সমস্যাকে দায়ী করা হয়। কিন্তু তা নিয়ে অনেক অর্থনীতিবিদের প্রশ্ন রয়েছে। আসলে আজকের এই পরিস্থিতির জন্য অভ্যন্তরীণ সঙ্কটই বেশি দায়ী। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ সমস্যা স্বীকার করে নিয়ে উত্তরণে কাজ করতে হবে।
দেশের চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কট নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা উঠলে ঘুরেফিরে ব্যাংক খাতে অব্যবস্থাপনা, খেলাপি ঋণ আর সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুশাসনের অভাবের কথা উঠে আসে। এ সঙ্কট উত্তরণে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ নিচ্ছে সরকার। তবে এ ঋণ পেতে সরকারকে বেশ কিছু আর্থিক সংস্কার করার অঙ্গীকার করতে হয়েছে। শর্তগুলোর মধ্যে দেশের ব্যাংকব্যবস্থাপনায় সংস্কার আনার শর্ত অন্যতম।
তবে সরকার ব্যাংক খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করতে কতটুকু সক্ষম হবে তা নিয়ে অনেক অর্থনীতিবিদ সংশয় প্রকাশ করেছেন। ইতোমধ্যে গত দেড় দশকে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা। কিন্তু তারা বছরের পর বছর সেই ঋণ পরিশোধ করছেন না। তাই খেলাপি ঋণ কমাতে আইএমএফ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো, আমাদের দেশের বাস্তবতায় অনেক দশক ধরে এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইএমএফও জানে সরকারের পক্ষে এটি করা সহজ নয়।
মূলত ব্যাংক খাত বর্তমান সঙ্কটে নিপতিত হওয়ার পেছনে মূল কারণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি অনিয়ম। বিশেষ করে প্রায় ১৫ বছর ধরে ব্যাংকগুলো থেকে যেভাবে রাজনৈতিক আনুকূল্যে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ ছাড় করা হয়েছে; তা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। এ ঋণ নিতে কোনো ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব অনিয়ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখে না। কারণ, প্রতিষ্ঠানটি এখন আর স্বায়ত্তশাসিত নয়। ¯্রফে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বর্ধিত অংশে পরিণত হয়েছে।
রাজধানীতে সানেমের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদ সম্মেলনের প্রথম দিন গত শনিবার এক সেমিনারে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কেউ ঋণ নিলেন, কিন্তু পরিশোধ করলেন না। পুনঃতফসিল করা হলো। এর মানে, ঋণের পেছনে রাষ্ট্রের বড় অঙ্কের ভর্তুকি যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এসব নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নেই। গণতান্ত্রিক সুশাসন ও জবাবদিহির মধ্যে সামষ্টিক অর্থনীতিতে সুশাসনের বিষয়টি নিহিত রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যাংকের সুদহারে সর্বোচ্চ সীমা তুলে দিলে সুদের হার বেড়ে যাবে। এতে সৎ উদ্যোক্তাদের পক্ষে ব্যবসায়-বাণিজ্য করা সম্ভব হবে না। অসাধু ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগ নেবেন। তারা ঋণ নেবেন, তবে ফেরত দেয়ার জন্য নেবেন না। সুতরাং তাদের কাছে সুদের বেশি হার কোনো বিষয় নয়।
অর্থনীতিবিদদের মতো আমরাও মনে করি, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ব্যাংক-ব্যবস্থাপনা একেবারে খাদের কিনারে এসে দাঁড়ানোর পেছনে একমাত্র কারণ প্রকৃত ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংকের ঋণসুবিধা বাধাহীন না করে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এক শ্রেণীর সুবিধাভোগী সৃষ্টি করতে ব্যাংকের তহবিল থেকে ঋণের নামে জবাবদিহির কোনোরকম ব্যবস্থা না রেখেই টাকা হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এটি যে আমানতকারীদের অর্থ লুণ্ঠনের একটি প্রক্রিয়া তাতে সন্দেহ নেই। তাই ব্যাংক খাতের সঙ্কট উত্তরণে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। সেই সদিচ্ছা তাদের কতটা আছে বা থাকলেও ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কতটা কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারবে সে প্রশ্ন থেকেই যায়।


আরো সংবাদ



premium cement
সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত আমদানি ব্যয় কমাতে দক্ষিণাঞ্চলের সূর্যমুখী তেলের আবাদ পাকুন্দিয়ায় গানের আসরে মারামারি, কলেজছাত্র নিহত আবারো হার পাকিস্তানের, শেষ সিরিজ জয়ের স্বপ্ন পাটকেলঘাটায় অগ্নিকাণ্ডে ৩ দোকান পুড়ে ছাই ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু

সকল