ক্ষমতাসীনদের দলাদলির পরিণাম
- ০২ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার পরিবেশ গুরুতর অবস্থায় রয়েছে। বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবার আগে গুরুত্ব পায় ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ। এ কারণে খুনোখুনি ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। করোনা মহামারীর কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেড় বছরের বেশি সময় হারিয়েছে। এর পরও প্রভাবশালীদের সামান্য স্বার্থের কারণে বলি হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ছাত্ররা। গত শনিবার অনির্দিষ্টকালের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া নিজেদের ভাগের হালুয়া-রুটি নিশ্চিত করতে গিয়ে প্রাণ যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। প্রতিদ্বন্দ্বী দু’টি গ্রুপের দ্বন্দ্বে কয়েকজন ছাত্র আহত হয়েছেন। একজনের জীবন হয়েছে বিপন্ন।
খবরে জানা যাচ্ছে, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে আধিপত্য ধরে রাখতে ক্ষমতাসীন দলের দু’জন নেতার রশি টানাটানি চলছে। এর সাথে আবার অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের একটি সংযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঘিরে আশপাশে বিপুল অঙ্কের ওষুধের ব্যবসা হয়ে থাকে। রয়েছে ওষুধের দোকান থেকে চাঁদাবাজি সিন্ডিকেট। এ ছাড়া রয়েছে চিকিৎসা দালালি ব্যবসা, অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা। এগুলো থেকে নগদ কামাই রয়েছে প্রতিদিন। পক্ষগুলো চায় এর ওপর একক নিয়ন্ত্রণ। সে জন্য ছাত্রলীগেরও দু’টি গ্রুপ। প্রতিপক্ষকে তারা ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে চায়। শুক্রবার রাত থেকে উভয় গ্রুপের মধ্যে মারামারির সূচনা। তবে করোনাকালে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর খোলার সাথে সাথে উভয় গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল।
প্রতিপক্ষের ওপর মেডিক্যালের ছাত্ররা যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ল সেটি নির্মম ও হৃদয়বিদারক। এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাহাদি জে আকিবকে প্রতিপক্ষের কয়েকজন ছাত্র ক্যাম্পাসে ধাওয়া করে। তাল সামলাতে না পেরে তিনি পড়ে যান। তখন পৈশাচিক কায়দায় তাকে কোপানো হয়। মাথার হাড় গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। ডাক্তাররা তড়িঘড়ি করে মস্তিষ্কে অপারেশন করেছেন। তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। তার ব্যান্ডেজ মোড়ানো মাথায় লিখে দেয়া হয়েছে, ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’। তার নিচে একটি বিপজ্জনক চিহ্ন এঁকে দেয়া হয়েছে। তার এই ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ছবিটি বর্তমান সরকারের সময়কার ছাত্রলীগের নির্মম আরো কিছু ঘটনার কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। পুরান ঢাকার গরিব দর্জি বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে রাতভর নানা কায়দায় নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।
ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনকে কতটা অবব্যবহার করা হচ্ছে এসব ঘটনা তার প্রমাণ। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন প্রকৃতপক্ষে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠেছে। এসব ঘটনার আরেকটি হতাশাজনক চিত্র হচ্ছে সাধারণ মানুষ এমন বর্বর ঘটনা প্রতিরোধ করতে এগিয়ে আসছে না। এর প্রধান কারণ, প্রশাসন অন্যায়কারীদের পক্ষ নিচ্ছে। খুনিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার দুঃসাহস কেউ আর দেখাতে পারে না। ভালো করতে গিয়ে পরে রাষ্ট্রযন্ত্রের নিপীড়ন ও অবিচারের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আকিবকে যখন মেডিক্যাল ক্যাম্পাসে কোপানো হচ্ছিল তখন আশপাশে বহু ছাত্র ছিলেন। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি। আগে এ ধরনের ঘটনায় ভিন্ন দলের ছাত্ররা ছাত্রলীগের আক্রমণের শিকার হলেও এখন ভিন্ন দল আর নেই। নিজ দলের ছাত্ররাই নিজেদের বর্বরতার শিকার হচ্ছেন।
চট্টগ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন দু’টি গ্রুপ। সব জায়গায় তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অল্প কিছু দিনের মধ্যে এই দু’গ্রুপের মধ্যে পাঁচবার মারামারির ঘটনা ঘটেছে। যেকোনো সময় সেখানে রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটতে পারে। ক্ষমতাসীন দলের একটি ন্যূনতম নৈতিক মান থাকা দরকার, যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সন্ত্রাস থেকে বাঁচতে পারে। দেড় বছর হারিয়ে যাওয়ার পর প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন পুরোদমে শিক্ষাকার্যক্রম চলা জরুরি। সে ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছেÑ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ করে দিতে হলো। একজন সম্ভাবনাময়ী ছাত্রের জীবন বিপন্ন হলো। এ অবস্থা দেশের আর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও যেন না ঘটে প্রশাসনকে সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। অন্ততপক্ষে যথাসময়ে শিক্ষাবর্ষ সমাপ্তির লক্ষ্যে কঠোর নীতি নেয়া উচিত। অন্য দিকে চট্টগ্রামের ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা