প্রকৃতিতে শীতের আমেজ শেষ হয়ে গরম পড়তে শুরু করেছে। রাতে হালকা শীত থাকলেও দিনে গরম। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের সময়ে রাজধানীতে মশার উপদ্রব বেড়েছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। বিশেষ করে যেসব এলাকায় খাল-নালা রয়েছে সেখানে মশার উপদ্রব ভয়াবহ। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, খালসংলগ্ন এলাকাগুলোতে সন্ধ্যা হলেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশা ঘরে ঢোকে। দরজা-জানালা বন্ধ রেখেও রেহাই নেই। মশা এত বেশি যেÑ অ্যারোসল, ইলেকট্রিক ব্যাট, মশারি ইত্যাদি ব্যবহার করেও কোনো লাভ হচ্ছে না।
আকারে ক্ষুদ্র হলেও ভূপৃষ্ঠে যত প্রাণী আছে; তার মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কীট মশা। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, জীবাণুÑ সবই বহন করে এটি। শুধু বহন করেই ক্ষান্ত হয় না, সামান্য এক কামড়ে এসব ছড়িয়ে দিতে পারে একজন থেকে আরেকজনের দেহে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সেই ভয়ঙ্কর কীট নগরীর বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত, হাসপাতাল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্রই। বছরের অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার রাজধানীতে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়ে প্রায় চার গুণ হয়েছে। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় উঠে এসেছে এই তথ্য। গবেষণার তথ্যমতে, যেসব মশার কামড়ে নগরবাসী অতিষ্ঠ এর মধ্যে ৯৯ শতাংশ কিউলেক্স। নর্দমা, ড্রেন, ডোবা, বিল-ঝিলের পচা পানিতে এ মশা জন্মায়।
কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, এখনই মশা নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া না হলে মার্চের মাঝামাঝি এর ঘনত্ব বেড়ে চরমে পৌঁছবে। কারণ ডিসেম্বর থেকে মার্চ কিউলেক্স মশার প্রজনন মৌসুম। প্রতি বছর এই সময় মশার আধিক্য থাকে। তারপরও নগর কর্তৃপক্ষ মশার বিস্তার বৃদ্ধির দায় এড়াতে পারে না। সময়মতো কার্যকর ওষুধ না ছিটানোয় মশা বেড়েছে, এটিই বাস্তবতা। সিটি করপোরেশন যেসব ওষুধ ছিটাচ্ছে, এতে মশা ধ্বংস হচ্ছে না। বরং বায়ুদূষণ বাড়ছে। সম্প্রতি ওয়াসার কাছে থেকে খালের দায়িত্ব নিয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন খালগুলোসহ সব নালা ও জলাশয় পরিষ্কার করছে। এর ফলেও মশা লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। বলা অসঙ্গত নয় যে, সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব পালনে গাফিলতি থাকায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
এত কিছুর পর দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ নিজেদের পক্ষে সাফাই গাইছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে বলা হচ্ছে, ‘কিউলেক্স মশা নিধনে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে সংস্থাটি। ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ডিএনসিসির বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। কর্মীরা প্রতিটি এলাকায় নিয়মিত ওষুধ ছিটাচ্ছেন। মশা নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা বাড়াতে ডিএনসিসি কয়েকটি ভেহিকেল মাউন্টেড ফগার মেশিন ক্রয় করেছে।’ আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বক্তব্যÑ গত কয়েক বছর একধরনের ওষুধ ছিটিয়ে আসছে সিটি করপোরেশন। এই ওষুধ মশার কাছে অনেকটা সহনীয় হয়ে গেছে। ফলে নিয়মিত ওষুধ ছিটালেও তেমন একটা ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এখন ওষুধে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। মশার ওষুধের মান বারবার পরীক্ষা করা হচ্ছে। দুই সপ্তাহ পর থেকে নতুন ওষুধ প্রয়োগ করা হবে। এতে মশা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
বাস্তবে দীর্ঘ দিনের অবহেলায় রাজধানীজুড়ে থাকা ২৬টি খালের অর্ধেকেরও বেশি ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এগুলোই এখন মশার প্রজননক্ষেত্র। মশা থেকে রক্ষা পেতে টেকসই সমাধানের জন্য আগে ধ্বংস করতে হবে কীটটির প্রজননক্ষেত্র। পাশাপাশি, মশা মারতে পরীক্ষিত ও কার্যকর ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। প্রথমেই রাজধানীর খালগুলো উদ্ধার করে পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে মশার আধার থেকেই যাবে।
যেহেতু বছরের ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত কিউলেক্স মশার প্রজনন মৌসুম, এর আগেই ভয়ঙ্কর এই কীটের প্রজননস্থলগুলো সঠিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে উপদ্রব কমিয়ে আনা সম্ভব। ডোবা, নালাসহ জলাশয়গুলো পরিষ্কার করার সাথে সাথে কার্যকর ওষুধ ছিটাতে হবে। যদিও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন রাজধানীর খালগুলো পরিষ্কারে হাত দিয়েছে, তবে কাজটি আরো আগে শুরু করলে এর বেশি সুফল মিলত। সঠিক নিয়মে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করা গেলে মশার বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। অতীত বলে, পঞ্চাশের দশকে তদানীন্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হবিবুল্লøাহ বাহার চৌধুরী শুধু ঢাকার খালগুলো পরিষ্কার রেখেই মশার যন্ত্রণা থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করেছিলেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, কেবল তার আমলেই ঢাকাবাসী মশার কামড় না খেয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারতেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা